গরমে যে ভুলগুলো আপনাকে আরো অস্বস্তিতে ফেলবে ও নীরব ক্ষতি করবে:
১. ফ্রিজের খুব ঠান্ডা পানি ও কোল্ডড্রিঙ্কস আপাত ভালো ভাবে পিপাসা মেটালেও শরীরের হীট সাইকেলের তারতম্যের কারণে পানি পুনরায় গ্রহণের ইচ্ছা কমে আসে। এতে দৈনিক পানি পানের পরিমাণ বেশ কমে যায় এবং পানিশূন্যতার কারণে আরো বেশি গরম লাগে। খুব ঠান্ডা পানি খাবার হজমেও বাঁধা দেয় কারণ খাদ্য হজমে তাপ প্রয়োজন। আরেকটা ভুল ধারণা প্রায় সবার মাঝে আছে: দাওয়াত খাওয়ার পর কোল্ড ড্রিংকস খেলে হজম ভালো হয়! এটা একেবারে উল্টো! বরং কার্বনেটেড সোডার গ্যাস ঢেক্কুর এর মাধ্যমে বেরিয়ে আসে এবং খাদ্য হজমে বাঁধা দেয়। খুব গরম পরিবেশে থাকলে দই খাবেন না, বা খাওয়ার সাথে সাথেও খাবেন না কারণ দই হজমে সহায়ক ব্যাপক তাপ তৈরী করে শরীরে।
২. খাওয়ার আধা/১ ঘণ্টা আগে এবং খাওয়ার ১/২ ঘণ্টা পরে পানি বেশি করে পান করুন। খাওয়া অবস্থায় বা খাওয়ার পর পরেই পানি পান করলে খাদ্যে পুষ্টি উপাদান বেশির ভাগই পানির সাথে হজমের আগেই চলে যায় বা শোষিত হয় না ঠিকমত। প্রথম কদিন এই অভ্যাস অসস্তি লাগলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পানি পাকস্থলীতে ঠান্ডা পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং এসিড লঘু করে, কিন্তু খাবার ঠিকমত হজমের জন্য তাপ ও সঠিক মাত্রায় এসিড (HCl) প্রয়োজন। তাই যদি এসময়টায় পানি পান থেকে বিরত থাকতে পারেন তবে শরীরের তাপ খাদ্য হজমে কাজে লাগবে এবং কিছুটা শীতলতা দিবে, সাথে দ্রুত হজমও হবে। যারা গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের এই পদ্ধতি আরো বেশি সহায়ক হবে এমনকি সমস্যা নির্মুলও হবে।
৩. সরাসরি সূ্র্যের আলোয় যেতে হলে সুতির ফুল হাতা কাপড় ব্যবহার করুন এবং সানস্ক্রিন মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। এতে আপনার শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকাংশেই। কালো রংয়ের কাপড় ও ছাতা পরিহার করুন। কারণ কালো এমন একটি দশা/অবস্থা যা ব্লাকহোলের মত সব আলো ও তাপ শোষণ করে গরম বাড়িয়ে তোলে। সাদা কাপড় সবচেয়ে ভালো চয়েস এক্ষেত্রে ।
৪. একেবারে বেশি পানি পান করবেন না, একটু পর পর পানি পান করুন । একেবারে এক লিটার পানি পান করলে শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়াম ডিসব্যালেন্স হবে, ক্লান্ত ও অবসাদ লাগবে। দৈনিক ৩/৪ লিটার পানি যথেষ্ট তবে ঘামের উপর নির্ভর করে এটা। স্যালাইন, ডাবের পানি বা দামী কিছু না খেয়ে সস্তায় স্যালাইন জাতীয় ফল – শসা, টমেটো, বাঙ্গি, আনারস, পেঁপে, তরমুচের এক/দুই ফালিই যথেষ্ট। বাকিটা কেটে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। আমি হালকা পাকা তরমুচ আনারস কিনে সাইজ করে পলিথিনে মুড়িয়ে ফ্রিজে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করি।
এগুলো শুধু আপনার পানিশূন্যতাই পূরণ করবে তা নয়, প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল পেয়ে যাবেন যা এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা আপনার শরীরের ক্লান্তি ইনস্টান্ট দূর করবে এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করবে। অবশ্যই চেষ্টা করবেন এই ফলগুলোর বীজসহ খাওয়ার। পেপের বীজকে সুপার ফুড বলা হয়, যা প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট ও কৃমিনাশক। মনে রাখবেন, ফল ফ্রিজে সংরক্ষণ না রাখাই ভালো, তবে বাধ্য হলে করতে পারেন।
৫. চা-কফি কমিয়ে ফেলুন । কথাটা শুনতে কষ্ট হলেও যারা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যান একটুতে তারা অবশ্যই চেষ্টা করুন সকালের মধ্যেই এগুলো পান করতে। এরপর এগুলো থেকে বিরত থাকুন। চা-কফি-কোক এগুলোর ক্যাফেইন আপনার পানিশূন্যতা তৈরী করবে সাথে শরীরের ৩০০+ বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী ম্যাগনেসিয়ামও কমে যাবে। ফলে শরীরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যহত হবে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। সুস্থ হার্ট ও গভীর ঘুমের জন্য ম্যাগনেসিয়ামের বিকল্প নেই। এটির দৈনিক প্রয়োজন ৪০০ মি.গ্রাম। আপনি আমি সারাদিনে খেয়েও ১০০-১৫০ পূরণ করতে পারবো না, আবার অতিরিক্ত ক্যাফেইন এটিকে নষ্ট করে দেয়। তাই চা-কফি খোর হলে একটু ভেবে দেখবেন।
৬. আস্তে হাঁটুন, ধীরে কথা বলুন, মনকে সজীব রাখুন। অস্থিরতা ও গতি আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে তাপের সৃষ্টি করে। তাই মন যত শান্ত থাকবে শরীরও তত ঠান্ডা থাকবে । মন ও শরীর ঠান্ডা রাখতে ৭-৮-৯ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক।
৭. ঝাল জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, বেশি লবণ ও মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে ইনফ্লামেশন তৈরী করে যা কিছু সময়ের মধ্যেই প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। তাই এগুলো পরিহার করার চেষ্টা করুন। আর একেবারে একবেলায় এক বসায় অনেক না খেয়ে কিছু ক্ষণ পর বা বাকি সময়টায় ভাগ করে নিন। ভরপেটে শরীর সবচেয়ে বেশি গরম থাকে।
এই অভ্যাসগুলো আপনার মাঝে অনেক পজেটিভ ইফেক্ট ফেলবে আশা রাখি। অনেক দিনের বিভিন্ন সময়ের রিসার্চ ও অভ্যাস এগুলো। তাই আপনাকে সেভাবে কোন সোর্স দিতে পারলাম না। তবে এগুলো নি:সন্দেহে সঠিক এবং হাই অথোরিটি ওয়েব সাইট ও চিকিৎসকের বলা ও গবেষণার ফসল।।
(পানি পান ও সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিক জাতীয় পাত্র ও বোতল পরিহার করুন)
More: ব্রেন ভালো রাখার উপায়