সূর্যহীন পৃথিবী এর অবস্থা কেমন হবে? কি হবে যদি সূর্য আচমকা গায়েব হয়ে যায় এক ঘন্টার জন্য। একদিনের জন্য, এক মাসের জন্য কিংবা এক বছরের জন্য। তাহলে কি হবে? এটা কল্পনা হলেও যদি কোন কারনে সূর্য ধ্বংস হয় বা হারিয়ে যায় তাহলে কি হবে? এই অদ্ভুত বিষয়টিই আপনারা দেখতে চলেছেন। চলুন তাহলে দেখে আসি, এমন কিছু যা আপনার গায়ের লোম দাড় করিয়ে দিবে।
মনে করেন চাঁদের সাইজের মতো একটি বড় স্পেসশিপ সৌরমন্ডল এর মধ্যে প্রবেশ করছে। কিন্তু পৃথিবীর মানুষজন এ বিষয়ে বেখবর। এই স্পেসশিপ দূরবর্তী কোনো তারকা মন্ডলে থাকা এলিয়েনের। যারা সূর্যকে নিতে এসেছে। ওরা ডাইসরসেফয়ার নামে একটি এডভান্স মেশিন নিয়ে এসেছে, যার সাহায্যে ওরা সূর্যকে ভিতরে টেনে নিজের গ্রহে নিয়ে যাচ্ছে।
সূর্যের ভূমিকা পৃথিবীতে
সূর্য এমন একটি নক্ষত্র যা কিনা পৃথিবীকে আকর্ষণ বলে টেনে চারদিকে ঘোরাচ্ছে। যখনই সূর্য তার জায়গা থেকে হারিয়ে যাবে ঠিক তখনই সৌর মন্ডলের অন্যান্য গ্রহ যেমন মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, পৃথিবী ইত্যাদি গ্রহ সমূহ নিজের জায়গা থেকে সরে আলাদা হয়ে যাবে এবং বিভিন্ন জায়গায় অনিয়মিত ভাবে ছুটবে।
মহাকাশে পৃথিবী এখন এদিক-ওদিক ছুটছে, কারণ এটি সূর্যহীন হয়ে নিজের ওপর তার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে। ইতোপূর্বে সূর্য যেখানে আকর্ষণ বলে সিস্টেমের মধ্যে রেখেছিল, কিন্তু এখন আর তা নেই।
পৃথিবীর একপাশে দিন হচ্ছে আর অপর পাশে রাত। তাই অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হবে পরের দিন সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত।
কিন্তু মানুষজন জানেনই না যে, সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে দামি ও একমাত্র নক্ষত্র সূর্যকে কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে, এক দানবীয় স্পেসশিপ এর মাধ্যমে। পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। এদিকে এলিয়েন সূর্যকে নিয়ে চলে গেছে। তাহলে পৃথিবীতে এর প্রভাব ঠিক ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড পরে যাবে।
চাঁদের কি হবে?
ধরেন, ৮ মিনিট ২৯ সেকেন্ড চলে গেছে, পৃথিবী হঠাৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে। আচমকা এক সেকেন্ডের মধ্যে রাত হয়ে গিয়েছে, এখন আকাশের সব তারা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, কারণ সূর্যের কোন আলোই নেই। যা তারার আলোকে ঢেকে দিবে। চাঁদ এবং বাকি গ্রহ গুলো তখন আর দেখা যাচ্ছে না।
কারণ আপনারা জানেন চাঁদের কোন নিজস্ব আলো নেই। সূর্যের আলো চাঁদের উপর পড়লেই তা দৃশ্যমান হয়। এখন যেহেতু সূর্য নেই তাই চাঁদও আর দেখা যাচ্ছে না। এর সবচেয়ে খারাপ প্রভাব প্রকৃতির গাছপালার উপর পড়বে। গত ভিডিওতে আমি বলেছি চাঁদ না থাকলে কি হবে? সূর্যের আলোর সাহায্যে গাছপালা জীবন্ত ছিল।
একটি প্রসেস চলছিল যার নাম ফটোসিন্থেসিস। কিন্তু সূর্য গায়েব হওয়ায় এখন আর কোনো আলো নেই, এজন্য গাছপালা অক্সিজেন তৈরি করতে পারছে না।
সূর্যহীন প্রথম ২৪ ঘণ্টা
১ ঘন্টা প্রায় চলে গেছে। কিন্তু অর্ধেক পৃথিবী এখনো বুঝতেই পারেনি কি হচ্ছে? এখন যেখানে রাত চলছে, সেখানেও খবর পৌঁছে গেছে যে, পৃথিবীর দিন হওয়া অংশগুলোও অন্ধকারে ঢেকে রাত হয়ে আছে।
পুরো পৃথিবী হয়রান হয়ে আছে, তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, পৃথিবী ঘিরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। কিন্তু পৃথিবীর ভিতরে যে কোর আছে সেখানে অত্যধিক তাপ থাকায় পৃথিবী এখনো উষ্ণ আছে, তা তেমনটা মনে হচ্ছে না।
এবার ২৪ ঘন্টা পার হয়েছে। অনেকে নিয়মিত সূর্যোদয়ের আশায় আছে। সকাল আটটা বাজে এখনো কোন সূর্য দেখা যাচ্ছে না। সরকারও কিছু করতে পারছে না। কারণ এটি মানুষের হাতে নেই।
এখন তাপমাত্রা আট ডিগ্রি নিচে অবস্থান করছে। কিছু গাছপালা ও পশুপাখি আচমকা তাপমাত্রার এই পরিবর্তনে দুর্বল হতে শুরু করেছে। কিন্তু সমুদ্রের ভেতর যে জীব গুলো আছে তারা কোনো পরিবর্তন বুঝতে পারছে না। তাদের কাছে দুনিয়া ঠিকই আছে।
এখনো কিছু কিছু জায়গায় গরম আছে। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, সূর্যের তাপ কে কিছুদিনের জন্য আটকে রাখা। এজন্য সব জায়গায় বরফ হচ্ছে না এখনো। কিন্তু সূর্য ছাড়া এরকমটা কেবল তিন বা চার দিন থাকা সম্ভব।
সূর্যহীন ৭ দিন পর পৃথিবী
কিন্তু এখন সাত দিন চলে গেছে এখনো পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং তাপমাত্রা মাইনাসে চলে যাচ্ছে। মাইনাস ২০ ডিগ্রী, যেটার ভয় ছিল সেটাই হলো। জিরো ডিগ্রী সেলসিয়াসে পানি বরফে পরিণত হয়। কিন্তু এখন পুরো পৃথিবীতে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই এখন পানি আর তরল রূপে নেই। টিভি এবং ইন্টারনেট আচমকা বন্ধ হয়ে গেছে।
কারণ স্যাটেলাইট, যেটা কিনা সূর্যের আলোর শক্তি নিয়ে সোলার প্যানেল দিয়ে চলত তাই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। কোন ভাবে হাই ভোল্টেজ ব্যাটারি দিয়ে তা মাত্র ৭ দিন চলতে পারবে। কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা কখনো চিন্তাই করেননি সূর্য থাকবে না। এরকম দিনও আসতে পারে। তাই তারা কখনো কোন ব্যাকআপ প্ল্যান বানায়নি।
দুনিয়ার যত নদী ও সাগর আছে তারা এখন জমতে শুরু করেছে -20 ডিগ্রি তাপমাত্রার জন্য। পুরো পৃথিবীর বিদ্যুৎ এখন চলে গেছে। কারণ যে বাধ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হতো তা এখন বরফে জমে গেছে। এজন্য মোবাইল ফোনের টাওয়ার গুলোও বন্ধ হয়ে গেছে, সাথে ল্যান্ডলাইন ফোনও। কারণ এই পৃথিবীকে চালু রাখা বিদ্যুৎ এখন আর নেই।
শুধুমাত্র কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ আছে এখনো। কারণ সেখানে অন্য সিস্টেমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কিন্তু পৃথিবীর পুরো সিস্টেম নষ্ট হতে শুরু করায় সেগুলোও কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যাবে।
মানুষ ও গাছপালার অবস্থা
লোকজন তাদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্দবদের সাথে কথা বলতে পারছে না। ইন্টারনেট ও ফোনহীন দুনিয়া এখন একেবারে ডিসকানেক্ট হয়ে গেছে। গাছপালা ক্রমান্বয়ে মরতে শুরু করেছে। কারণ সূর্য ছাড়া ফটোসিনথেসিস না হওয়ায় বেশি দিন টিকতে পারছে না। গাছপালা খেয়ে বেঁচে থাকা পশুপাখিও ধীরে ধীরে মরতে শুরু করেছে। কারণ গাছপালা আর কোনোভাবেই বাঁচতে পারছে না এবং শুঁকিয়ে যাচ্ছে।
যারা টাকাওয়ালা মানুষ তারা বীজের জন্য বেসমেন্ট বানাতে শুরু করেছে। যাতে সে এই ভয়ানক ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে পারে। গরীব মানুষদের জন্য সরকার আন্ডারগ্রাউন্ডে বেসমেন্ট বানাচ্ছে। যাতে এখানে কিছু মানুষ ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেয়ে বাঁচতে পারে। সব মানুষ এমন একটা সময় পার করছে যেখানে শুধু রাত আর রাত। টাইম এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে, কারণ এখন দিন ও রাত নেই। শুধু রাত আর রাত।
সূর্যহীন পৃথিবী নিজের মত চলতে চলতে একটি অজানা জায়গায় ভ্রমণ করছে।
১ মাস পরে সূর্য ছাড়া পৃথিবীর অবস্থা
এবার ১ মাস পর, পৃথিবী ঠাণ্ডা, ক্রমান্বয়ে আরো ঠাণ্ডা হয়ে চলেছে। তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৮০ ডিগ্রীতে পৌঁছেছে। এ সময় পুরো পৃথিবী বরফে ঢাকা পড়ে যাবে।
পৃথিবীর প্রায় সব গাছপালা মরতে চলেছে। কিন্তু যে গাছপালাগুলো বরফে টিকে থাকার মত ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় শুধু সেগুলোই টিকে আছে। নদী ও সমুদ্রের মাছসহ অন্যান্য প্রাণীগুলো প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড এর মাত্রা এত বেশি হয়ে গেছে যে, প্রতিটি নিঃশ্বাস সিগারেটের ধোয়ার মত ভয়ানক হয়ে গেছে। যখন গাছপালা ছিল তখন এই কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণে ছিল।
কিন্তু এখন এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউই নেই। সমুদ্রের এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে সামুদ্রিক জীব এখনও বেঁচে আছে। কারণ এর আশেপাশে কোন আগ্নেয়গিরি আছে, যেটা সেখানকার তাপমাত্রা ধরে রেখেছে। তাই এখনও সেখানকার পানি তরলেই আছে। তার মানে ১ মাস পরেও কিছু জীবন বেঁচে আছে।
পৃথিবীর অবস্থা ১ বছর পর
১ বছর পর, যে জীবনগুলো বেঁচে ছিল তা এখন শেষ হয়ে গেছে। কারণ সব ভলকানো ও আগ্নেয়গিরি মাত্রাতিরিক্ত (ধবকের) জন্য নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য সমুদের যে অংশে পানি ছিল তাও জমে বরফে পরিণত হয়ে গেছে। পৃথিবীর সবকিছু এত বেশি বরফে ঢেকে গেছে যে, কয়েক হাজার স্তরে জমে বরফ হয়েছে এগুলো।
পৃথিবীর সবকিছু বরফে জমে আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও পৃথিবীর এখনও একটি জায়গায় জীবন বেঁচে আছে। আর সেটা হল সমুদ্রের অনেক গভীরে থাকা অংশ, যা পৃথিবীর কাছ থেকে তাপ নিয়ে দিব্যি ভাল আছে। এজন্য যে মানুষগুলো কৌশলে বেঁচে ছিল তারা পৃথিবীর সাউথ পোল থেকে নর্থ পোলে চলে গিয়েছে।
কারণ পৃথিবীর কোর এ দিকটায় আছে। পৃথিবীর কোরের তাপ থেকে সেখানে এখনও তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে এবং জীবন বেঁচে থাকছে।
হাজার বছর পরের পৃথিবী
১ হাজার বছর পর, পৃথিবী ঠিক এরকমটাই হবে। পৃথিবী এখন বসবাসের জন্য একেবারে অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। কোন জীব আর বেঁচে নেই। পৃথিবী মাইনাস ১৬০ ডিগ্রীতে এসেছে, যার ফলে মানুষের অবস্থা এরকমটা হয়েছে।
এদিকে সূর্যহীন পৃথিবী অজানা গন্তব্যে পাড়ি দিতে দিতে এমন জায়গায় চলে এসেছে যেখানে স্ট্ররেড আছে। দানব পার্টিকেল ও স্ট্ররেড এর সাথে ভয়ানক রেডিয়েশনও আছে এখানে। এক সময় স্ট্রয়েডের দিকে আসা পৃথিবী ধাক্কা খাবে। এই ভয়ানক স্ট্রয়েড ও দানব পার্টিকেলের সাথে। পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে থাকবে।
আর এরকমটা যদি না হয় তবে পৃথিবী আরো কিছু বছর এভাবে চলতে শুরু করবে এবং কোন ব্লাকহোল এটিকে নিজের দিকে টানতে শুরু করবে। এক সময় ব্লাকহোলে হারিয়ে যাবে পুরা পৃথিবী।
শেষকথা ও মজার তথ্য
তবে ভয়ের কিছু নেই, এওতক্ষণে যা বললাম এটা একটি হাইপোথিসিস মাত্র। সূর্য পৃথিবীর সাথেই থাকবে। শুধু উপলদ্ধি করুণ, সূর্য আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সূর্য ছাড়া পৃথিবী কিছুই না।
তবে সবশেষে একটি মজার তথ্য আপনাদের বলে যাই, ইতোমধ্যে আমি বলেছি যে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট ২০ সেকেণ্ড সময় লাগে। তাই আমরা যখন লাইভ বা সরাসরি সূর্যাস্ত দেখি তখন আসলে অতীত দেখি। অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬ টায় সূর্যাস্ত দেখলেও সূর্য আসলে ৮ মিনিট ২০ সেকেণদ আগে অর্থাৎ ৫ টা ৫২ মিনিটেই অস্ত গেছে। মানে আমরা যা দেখি সবটাই ৮ মিনিট ২০ সেকেণ্ড পরের ঘটনা বা দৃশ্য।
তো বন্ধুরা ভিডিও ভালো লাগলে লাইক করো, কিছু জানতে ইচ্ছা হলে কমেন্ট করো। সূর্য ছাড়া পৃথিবী কেমন হবে? মজার এ তথ্যটি বন্ধুদের সাথে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে বেশি বেশি শেয়ার করো। আর চ্যানেলে নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল বাটনটি বাজিয়ে দাও। দেখা হবে নতুন কোনো ভিডিওতে নতুন কোনো টপিকসে।
আরোও পড়ুন- চাঁদ বিস্ফোরিত হলে পৃথিবীর কি হত? – চাঁদহীন পৃথিবী