ব্রেন ট্রান্সপ্লান্ট

ব্রেন ট্রান্সপ্লান্ট এর মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করতে চলেছে মানুষ

ব্রেন ট্রান্সপ্লান্ট এর মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করতে চলেছে মানুষ: কেমন হতো যদি আপনার ব্রেনের সকল ডাটা কোন মেমোরি কার্ড বা হার্ডডিক্সে কপি করে রাখা যেত? এতদিন হলিউডের সায়েন্স ফিকশন মুভি গুলোতে এটা দেখে এসেছেন কিন্তু ২০৪৫ সালের মধ্যে এটা বাস্তবে হবে বলে জানিয়েছেন নিউরোবিজ্ঞানীরা।

আর তাদের এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য গুগোল পেপাল ওরাকল সহ বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে যাচ্ছে। অনেকে হয়তো ভাবছেন এটা কিভাবে সম্ভব? ৫০০ পূর্বেও মানুষ কল্পনা করতে পারতো না যে আজকের আমরা ঘরে বসে মোবাইল এর মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কথা বলব, প্লেনে করে উড়বো।

ব্রেইনের গঠন

এখনো যাদের বিশ্বাস হচ্ছে না, শুধুই ভাবছেন আমার ব্রেনের মেমোরি অন্য ডিস্কে কিভাবে কপি করে রাখা যাবে? তাদের জন্য বিষয়টি ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা করব। সেদিন আর দূরে নয় যেদিন আর পড়াশোনা করতে লাগবেনা। মৃত্যুর পরেও আপনার স্মৃতি রোবট বা অন্য মানুষের মাঝে ট্রান্সফার করা যাবে এবং আপনাকে পুনরায় খুঁজে পাওয়া যাবে। আপনি চাইলে আপনার কষ্টের স্মৃতিগুলো কম্পিউটারের মতো ডিলিট করে দিতে পারেন। বাহ কি মজা তাই না! চলুন এবার বর্ণনায় যাওয়া যাক-

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ব্রেনে 90 বিলিয়ন নিউরন থাকে। একটি নিউরন থেকে অপরটির কানেকশন যদি গণনা করেন তবে 3 মিলিয়ন বছর সময় লাগবে। বৈদ্যুতিক তার যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে ঠিক তেমনি নিউরনগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন চোখ, কান, মুখ সহ বিভিন্ন সংবেদনশীল অঙ্গ থেকে তথ্য নিয়ে তা ব্রেনে পৌঁছায়। আর এই সিগন্যালগুলো হল ইলেকট্রিক্যাল ও ক্যামিকেল। অন্যদিকে কম্পিউটারের প্রাইমারী সিস্টেমে ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের মাধ্যমে ডাটা পাস হয়।

ব্রেন হবে কম্পিউটারের মত

এখন প্রশ্ন হতে পারে ব্রেনের এত জটিল তথ্য পরিবহনের দ্রুততা ও বিশাল জায়গার মত হার্ডডিস্কে বা মেমরীকার্ড কি সম্ভব। উত্তর হল হ্যাঁ। ইতোমধ্যে ফুজিশুয় সুপার কম্পিউটার মানব ব্রেনকে ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে মানব ব্রেনের স্পেস ৩.৫ কোয়াড্রিলিয়ন বাইটস সেখানে এই সুপার কম্পিউটারের স্পেস ৩০ কোয়াড্রিলিয়ন বাইটস। আবার যেখানে মানব ব্রেনের ডাটা ট্রান্সফার রেট ১৩ মিলিসেকেন্ড সেখানে এই সুপার কম্পিউটার এর চাইতে ১০ গুন স্পিডে ডাটা ট্রান্সফার করে।

যেহেতু ব্রেনের চেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে সেহেতু এখন শুধু ব্রেনকে কপি করার পালা। যেটাকে নিউরোসাইন্টিসরা নিউরোট্রান্সমিশন নাম দিয়েছে।

ইতোমধ্যে এই পদ্ধতিতে ইদুরের ব্রেনের স্মৃতিকে কপি করা সম্ভব হয়েছে এবং এটা নিয়ে গবেষণা চলছে। ইঁদুরের ব্রেনের সাথে মানুষের ব্রেনের ৯৫ ভাগ মিল আছে। তাই ইঁদুরের উপর যখন প্রজেক্ট সফল হয় তখন মানুষ আর দেরী নয়। ঠিক এই মেসেজটি গবেষকদের প্রকাশ করার পর এ বিষয়ে বেশ কিছু মুভি বের হয়েছে।

অমরত্ব লাভ

তার মধ্যে একটি তামিল মুভি মায়াবন। এই মুভির মূল থিম হল একজন নিউরো বিজ্ঞানী যেকিনা নিজের ব্রেনের ডাটা কপি করে সেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে স্টোর করে রাখেন। এরপর কম বয়সী কোন যুবককে ধরে এনে তার ব্রেনে ইনজেকশনের মাধ্যমে নিউরোট্রান্সমিটার সেট করে রাখে। বিজ্ঞানীটি মারা গেলে তৎক্ষণাৎ ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে সেই ইনজেক করা কমবয়সী যুবকের ব্রেনে যায় এবং যুবকের নিজস্ব স্মৃতিগুলো ডিলিট হয়ে বিজ্ঞানীর স্মৃতি জমা হয়ে যায়। সাথে সাথে ছেলেটি বিজ্ঞানীর কপি হয়ে যায়।

এভাবে বিজ্ঞানী মারা যাবার পরেও বিভিন্ন শরীরে স্থানান্তরিত হয়। বিষয়টি জীনে ধরার মত। আসলে আমাদের ব্রেন কিন্তু কিছু জমা হওয়া স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের পরিচয় আমাদের স্মৃতি। তাই এই স্মৃতি অন্য কোন মানুষ বা রোবটের মধ্যে স্থানান্তরিত করলে আপনি মারা যাবার পরেও হাজার বছর টিকে থাকবেন আপনার স্মৃতির মধ্যে দিয়ে।

আমরা এক মানুষ থেকে আরেক মানুষ দেখতে আলাদা হলেও আমাদের ভিতর বাহিরে সবকিছু কিন্তু একই। আর আমাদের মধ্যে ভিন্ন পার্সোনালিটি, আইডিন্টি তৈরি করেছে, ধীরে ধীরে জমে থাকে এই স্মৃতিগুলো। তাই স্মৃতি বা মেমরী সবকিছু। যেমনটা একটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক অন্যটিতে লাগানো যায়। একটি মেমরী বিভিন্ন মোবাইলে লাগানো যায়, তেমনি মানুষের এই স্মৃতি বা মেমরী যদি ট্রান্সপ্লান্ট বা স্থানান্তরিত করা যায় তবে মানুষকেও বদলিয়ে ফেলা যাবে। ব্রেন ট্রান্সপ্লান্ট কিনা সম্ভব!

তখন আর পড়াশোনার দরকার হবে না। ইচ্ছামত ডাটা জমা রাখা, মুছে ফেলা এবং ডাউনলোড করার মত সব কাজ করা সম্ভব। আপনার দুঃখের স্মৃতিগুলো দিয়ে অন্যের আনন্দ, ভ্রমণ করার মহুর্ত, অনুভূতি কপি পেস্ট করতে পারবেন।

নিউরো ট্রান্সমিশনে বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগ

ব্রেন ট্রান্সপ্লান্ট বা এই প্রজেক্ট এতটাই সফল ও বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে যে আর মাত্র ২৫ বছর পর মানে ২০৪৫ সালে এটি কোন রকম পাশ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সবার কাছে পৌছিয়ে দেবে। এজন্য বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিগুলো বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন। চলুন সংক্ষেপে দেখে নেয়া যাক কোম্পানিগুলো এ ব্যাপারে কি বলেছে –

মানুষের স্মৃতিকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখতে আমরা এই রিসার্চে ৪২৫ মিলিয়ন ডলার হ্যাঁ বাংলায় (৩০০ কোটি টাকা) ইনভেস্ট করেছি যা ২০৪৫ সালের মধ্যে আমরা পেয়ে যাব। গুগল আপনাকে সারাজীবন চায়।
-গুগল

আমি মৃত্যুর পরেও হাজার বছর বেঁচে থাকতে চাই আমার স্মৃতির মাধ্যমে। এজন্য আমরা ২৫০০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি।
-Larry Alison
Orade CEO

২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষ তার স্মৃতি কম্পিউটারে জমা রাখতে পারবে। এজন্য আমরা ৪০০০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি।
-Dimitry Atskov
Russian Businessman

আমি মৃত্যুর পরেও অনেক বছর বেঁচে থাকতে চাই আর এজন্য এই প্রজেক্টে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।
-Peter Diehel
Founder, Paypal

স্মৃতি নিয়ে কিছু কথা

জন্ম, মৃত্যু সবটাই সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করেছেন অর্থাৎ জন্ম নিলে মরতে হবেই। এটাকে কোন বিজ্ঞানী থামাতে পারবেনা ঠিকই কিন্তু স্মৃতি কপি করে তা রোবট বা অন্য জীবিত মানুষের মাধ্যমে টিকে রাখা সম্ভব। বিষয়টা একদিক থেকে ভালো মনে হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি ও নেগেটিভ প্রভাব পড়বে অনেক। তাই তো ছোটবেলা থেকে একটি রচনা সবাই পড়ে আসছি মানব জীবনে বিজ্ঞানের আশির্বাদ ও অভিশাপ।

আশা করি, ভিডিওটি আপনাদের ভাল লেগেছে। তাই ভিডিওটিতে লাইক করার অনুরোধ রইল। কারো কোন বিষয় জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। আমরা উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। ভিডিওটি শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিন। নিষিক্ত টিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল বাটনটি বাজিয়ে দিয়ে আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে যান। ভাল থাকবেন সবাই, পরিবারকে সময় দিন।

আরো জানুন- স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে ব্রেন তীক্ষ্ণ করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *