আত্মবিশ্বাসী নারী

আত্মবিশ্বাসী নারী হওয়ার উপায় – মেয়েদের জীবন নিয়ে কিছু কথা

আত্মবিশ্বাসী নারী হওয়ার উপায় – মেয়েদের জীবন নিয়ে কিছু কথা: না জানি, প্রতিদিন কত মেয়ে নিজেকে তার স্বপ্নের ক্যারিয়ারের জন্য অযোগ্য বলে মনে করে জীবনে হার মেনে নেয়। না জানি, প্রতিদিন কত মেয়ে নিজেকে তার পছন্দের জীবন সংঙ্গীর জন্য অযোগ্য মনে করে চুপ থেকে যায়। না জানি, প্রতিদিন কত মেয়ে নিজেকে যথেষ্ট সুন্দরী মনে না করায় সব সময় নিজেকে সবার থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে জীবনটাই কাটিয়ে দেয়। তাই এই জীবন সমস্যা সমাধানের জন্য RACHEL HOLLIS এর লেখা ‘GIRL WASH YOUR FACE’ বইটা থেকে আজ আমি কিছু স্মার্ট আইডিয়া শেয়ার করবো। যাতে মেয়েরা নিজেদের প্রতি এই ভুল ধারণাগুলোকে ঝেরে ফেলে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ১: STOP BREAKING PROMISES TO YOURSELF

ভাবুন, আপনার একটা বান্ধুবী রয়েছে, যার নাম রিয়া। তো যখনই আপনি রিয়ার সাথে ইম্পরট্যান্ট কিছু একটা করার প্লান করেন তখনই ঠিক একদম শেষ মূহূর্তে এসে রিয়া সেটা বাতিল করে দেয়। আর সব থেকে খারাপ হলো, এই বাতিল করার পিছনে সবসময় ওর প্যাথেটিক কোন একটা অজুহাত থাকে। যেমনঃ এই সত্যি বলছি রে, আমার খুব ইচ্ছে ছিল তোর সাথে আজ সন্ধ্যায় যোগিং করতে যাওয়ার। কিন্তু হঠাৎ এই ওয়েব সিরিজটা দেখতে বসে গেলাম। আর এটা এত্ত ভালো মানে তোকে কী বলবো! এটা আজকে আমায় দেখে শেষ করতেই হবে রে।

রিয়া প্রতিদিনই আপনাকে কথা দেয়। আজ থেকে ও একটা হেলদি ডায়েট শুরু করবে। কিন্তু আবার রোজই সন্ধ্যা হলে পিজ্জা, বার্গার না খেলে ওর চলে না। তো এরকম করলে আপনার রিয়ার প্রতি রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।

এখন মজার বিষয় হলো, যখন আপনি নিজেকে করা কোনো প্রমিজ ব্রেক করেন তখন আপনি নিজের সাথে নিজে ঠিক রিয়ার মতই আচরণ করেন। কত বার এরকম হয়েছে যে, আপনি ঠিক করেছেন এখন থেকে রোজ সন্ধ্যায় ‘ইভিনিং ওয়াকে’ বেরোবেন। তারপর হয়তো হঠাতই কোন বন্ধুর ফোন এসে গেছে। আর আপনিও সাথে সাথে ইভিনিং ওয়াকের আইডিয়াটা ঝেরে ফেলে চলে গেছেন মুভি দেখতে। বা হয়তো মাঝে গিটার শিখবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তারপর গিটারটা কিনে এনে ওর গায়ে ধুলো জমানোর কাজ শুরু করলেন।

এভাবে প্রায় আপনি হয়তো নিজেকে করা প্রমিজ গুলো ব্রেক করেন। ক’দিন যোগিং এ না যাওয়া বা রোজ পি্জজা, বার্গার খেতে থাকা। এই প্রমিজগুলো ব্রেক করা সেই মূহূর্তে কোনো বিগ ডিল মনে না হলেও আসলে সেগুলো সত্যি বিগডিল। কারণ যখনই আপনি নিজেকে করা প্রমিজগুলো ব্রেক করেন, তখনি আপনি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস একটু একটু কমাতে শুরু করেন। যেটা এরপর জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

তো সবার আগে নিজেকে কোন প্রমিজ করলে সেটাকে রাখতে শিখুন। দরকার হলে সহজ কিছু প্রমিজ করুন। যদি আপনি চান, রোজ ত্রিশ মিনিট করে সন্ধ্যায় হাটতে। তাহলে শুরুতেই সপ্তাহে সাত দিনই ত্রিশ মিনিট করে ওয়াক করবেন প্রমিজ না করে বরং সপ্তাহে চার দিন দশ মিনিট হাটবেন বলে প্রমিজ করুন। এরপর যখন আপনি নিজেকে করা এই প্রমিজটা পূরণ করবেন তখন হয়তো সাতদিন ত্রিশ মিনিট ‘ইভিনিং ওয়াক’ এর প্রমিজটাও আপনি পূরণ করে ফেলতে পারবেন।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ২: DON’T TAKE ‘NO’ FOR AN ANSWER

আমরা খুব সহজেই আমাদের স্বপ্নগুলোকে Give Up করে দেই। অন্যদের কথা শুনে তাদের সেই নেগেটিভ কথাগুলোকে সত্যি বলে মেনে নেই। আর স্পেশালি মেয়েদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতাটা আরো বেশি দেখা যায়।

হয়তো, আপনি নিজের একটা বিজনেস শুরু করতে চান। কিন্তু সবাই যখন বললো, একা একটা মেয়ে কীভাবে এতো লোকের সাথে ডিল করবি? আর আপনিও Give up করে দিলেন। বা হয়তো আপনার ড্রিম জব ছিলো, এয়ার হোস্টেজ হওয়া। কিন্তু প্রথম ইন্টারভিউতে প্রথম রাউন্ডে বাদ হয়ে যাওয়ার পর যখন সবাই বললো, আপনি আপনার ড্রিম জবের যোগ্য না। আপনি সেটাকে সত্যি বলে মনে করে Give Up করে দিলেন।

এই বইয়ের লেখক RACHEL এর সব দিনের ড্রিম ছিল একজন পাবলিসড লেখক হওয়ার। তিনি যখন তার প্রথম নোবেলটি পাবলিসারদের কাছে সাবমিট করেন। যেটার মেইন চরিত্র ছিল একটা সুইট ইনোসেন্ট মেয়ে। যে লস এঞ্জেলেস এ একজন ইভেন্ট প্লানার হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য মেহেনত করছিলো।

তখন তাকে প্রতিটা পাবলিসার একই কথা বলছিলো। যদি সে তার বইয়ের কাহিনীতে এডাল্ট কিছু যোগ না করে, তাহলে তার বই কোন দিনই বিক্রি হবে না। কিন্তু Rachel এর মতে, এসবের জন্য তার কাহিনীর সেই চরিত্রটি
‘ফার টু ইনোসেন্ট’ ছিলো। তাই সে কোন ভাবে ঐ সব জিনিস কাহিনীতে যোগ করতে পারবে না। কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকজন এক্সপার্ট এর মতে সেটা ছাড়া সম্ভব না। তাদের কথায় সে তার ড্রিম Give Up করে দিতে রাজি ছিলো না। এমনকি RACHEL ঠিক যেভাবে চেয়েছিলন, সে ভাবেই তার বইটি পাবলিস করেন। রেজাল্ট আজকের ডেট অব্দি তার সেই বই ‘Party Girl’ কয়েক লক্ষ কপিস বিক্রি হয়ে গেছে।

আর একটা বড় কারণ, যে কারণে অনেকেই তাদের স্বপ্ন Give Up করে দেয়। সেটা হলো ধৈর্য্যের অভাবের কারণে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, বড় কিছু অর্জন করতে হলে তার জন্য সময় লাগে। তাই শুধু মাত্র সময় লাগছে বলে Give Up করে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।

জুলিয়া চাইল্ড ‘দা ক্লাসিক ফুড রাইটার’ দশ বছর সময় নিয়ে তার “MASTERING THE ART OF FRENCH COOKING বইটি লিখেছিলেন। কিন্তু ১৯৬১ সালে বইটি একবার পাবলিস হওয়ার পর সেটা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে সেই বইটার বিক্রির প্রায় ৬০ বছর পর আজ অব্দিও চলছে।

‘Avatar’ মুভির Director জেমস ক্যামেরুন ১৫ বছর ধরে সেই ছবিটি বানিয়েছিলেন। আর আজ সেটা ইতিহাসে অন্যতম একটা সাফল্যময় ছবি।

আমি বেট লাগিয়ে বলতে পারি, অসংখ্য মানুষ জুলিয়া এবং জেমস এর নিজের স্বপ্ন পুরণের এই দীর্ঘ মেয়াদি চেষ্টাকে পাগলামী বলেই ধরে নিয়ে ছিলো। কিন্তু তারা কখনো সেই কথায় কান দিয়ে Give Up করে দেয়নি। তাই যদি আপনি সত্যি আপনার ড্রিমগুলোকে অর্জন করতে চান, তবে লোকের কথায় কান না দিয়ে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ধৈর্য্য ধরে টিকে থাকুন।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৩: EMBRACE THE CHAOS OF YOUR HOME AND FAMILY LIFE

যদি আপনি একজন ওয়ার্কিং মাদার হন, বা যদি শুধুই মাদার হন, তাহলেও কেয়ারস অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা টেকেল করা কাকে বলে সেটা আপনার থেকে বেশি কেউ জানবে না। একজনকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে, এদিকে আর একজনকে নিয়ে ডক্টর দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। তার মধ্যে হয়তো ওয়াসিং মেসিনটাও সেই দিনই খারাপ হয়ে পড়ে আছে। প্রতিদিনের এই Chaos টেকেল করতে গিয়ে আপনি হয়তো হাপিয়ে উঠেছেন।

তো আপনাকে এটা বুঝতে হবে, আপনি যতই চেষ্টা করে নিন না কেনো, এই Chaos আপনি কোনোদিনই পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারবেন না। বরং তাতে কোন সমস্যাও নেই। সব কিছু সব সময় আপনার কনট্টোলে নেই তাই বলে এই না যে আপনি একজন ফেইলার। স্রোতের বিপরীত দিকে সাতরে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করার তুলনায় স্রোতের দিকে সাতরিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌছানোর চেষ্টা করাটা বেটার। তাই স্রোতের উল্টো দিকে সাতার কেটে পার হওয়ার বৃথা চেষ্টা না করে, কিভাবে স্রোতের দিকে সাতার কেটেই আপনি আপনার লক্ষে পৌছাতে পারবেন, সেদিকে নজর দিন। বিশৃঙ্খলাকে মেনে নিয়েই এগিয়ে চলুন।

সেকেন্ডলী, যে কোনো রকম সাহায্যের অফার পেলে সেটাকে একসেপ্ট করুন। সেই লোকটার গল্প মনে আছে যে জলে ডুবে মারা যেতে বসেছিল। তখন পর পর তিনজন লোক নৌকা নিয়ে এসে তাকে বাঁচানোর জন্য সাহায্য অফার করে। কিন্তু সে তাদের সবাইকে এটা বলে ফিরিয়ে দেয় যে না থাক, আমাকে আমার সৃষ্টিকর্তা বাঁচাবেন। পরে লোকটা যখন জলে ডুবে মারা গিয়ে উপরে পৌঁছে যান তখন সৃষ্টিকর্তা তাকে বলেন, আমি তোমাকে বাঁচাতে পর পর তিনটা নৌকা পাঠালাম। তুমি ওখানে বসে কি করছিলে?

তো সৃষ্টিকর্তা আপনার জন্যও এরকম নৌকা পাঠাতে থাকেন। কিছু হয়তো বড় নৌকা যেমন ধরুন আপনার মা হয়তো আপনার ছেলেমেয়ের দেখাশোনা করার জন্য এক সপ্তাহের জন্য ঘুরতে আসতে চাইলেন। কিছু হয়তো ছোট নৌকা যেমন আপনার হাজবেন্ড হয়তো আপনাকে আজকে জামাকাপড় গোছাতে সাহায্য করলেন।

তো এই সমস্ত সাহায্যের অফারকে হ্যা বলে একসেপ্ট করুন। যদিও আপনার হাজবেন্ড জামাকাপড় গোছাতে একেবারে পারদর্শী নাও হতে পারে।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৪: Don’t Allow Your Weight To Define You

আজকের দিনে প্রায় সমস্ত মেয়েরাই তাদের ওয়েট আর বডি সেপ নিয়ে অতিরিক্ত কনসারন্ড হয়ে উঠেছে। আর তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। সোস্যাল মিডিয়া আসক্ত সমাজে সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। হ্যা, এবার ব্যাপারটা হলো যদি সত্যি আপনার ওয়েট আনহেলদি হয় তবে সে ক্ষেত্রে এই জিনিসটা খাটে না যে আপনি যেমন আছেন তেমনটাই নিজেকে একসেপ্ট করে নিন। আর নিজেকে বদলানোর কোনো চেষ্টাই না করে চুপচাপ বসে থাকুন। না, তখন আপনার অবশ্যই উচিৎ কিছু করা। যাতে সেই আনহেলদি ওয়েটটাকে ভুলে আপনি হেলদি হয়ে উঠতে পারেন।

এবার হেলদি ওয়েট মানে এই না যে বিকিনি মডেলদের মতো ফিগার তৈরি করা। একটু বেশি হাঁটাচলা বা সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করলেই যেন আপনার হাঁপানি না ধরে যায় সেই টুকু ঠিক রাখতে পারলেই অনেক। আর তার জন্য আপনার ঠিক হাতিঘোড়া কিছু করারও দরকার নেই। জাস্ট সারাদিনে যত ক্যালোরি আপনি কাজ করার মাধ্যমে খরচ করছেন তার থেকে একটু কম বা অলমোস্ট ইকুয়াল ক্যালোরি খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করুন। ব্যস, তাহলেই ওজন সঠিক থাকবে।

কিন্তু কখনোই আপনার ওয়েটকে আপনার হ্যাপিনেস ডিফাইন করার অনুমতি দিবেন না। যেমনঃ অথর বলেছেন, ‘You, and only you are ultimately responsible for who you become and how happy you are.’ যদি আপনি নিজের প্রতি লিমিটিং সেলফ বিলিভস গুলোকে ওভারকাম করে একটা এমপাওয়ারিং মাইণ্ড সেট গড়ে তুলতে চান তবে ‘Girl Wash your face’ by Rachel Hollis এই বইটি অবশ্যই আপনার পড়া উচিৎ।

সবশেষে আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ, যদি এই পোস্টটা আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটিকে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। যতগুলো শেয়ার হবে আমি বুঝবো ততজনকে আমি সাহায্য করতে পেরেছি।

আরো পড়ুন- জীবন নিয়ে কিছু কথা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *