অফিসের সহকর্মী বা কলিগের সাথে সুসম্পর্ক তৈরীর উপায় কি? চাইলে কি একজন ভাল কলিগ হওয়া সম্ভব? হুম অবশ্যই সম্ভব, শুধু ইগোটা একপাশে চাপায় রাখেন আর আমার কথাগুলো একটু ভেবে দেখেন। তারপর বাস্তবে এপ্লাই করবেন কি না সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। চলেন তবে শুরু করি-
কলিগের চোখে চোখ রেখে কথা বলুন
কথা যতই সুন্দর করে বলেন না কেন চোখের ভাষা যদি অন্য হয় তবে সেটার কোন মূল্য নাই। কথা বলার সময় অবশ্যই সামনের জনের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে। এতে সে বুঝবে যে, আপনি তাকে গুরুত্ব ও মনোযোগ দিচ্ছেন এবং এতে আপনার মনোযোগও ঠিক থাকবে।
সামনের জন যদি ধীরে কথা বলে তবে আপনিও ধীরে কথা বলবেন। এতে সে ভাববে আপনি তার মতোই এবং অতি সহজে তার আপন হয়ে যাবেন।
হ্যান্ডসেক করবেন একটু ঝুঁকে
অনেকে বন্ধুদের মত কলিগ ও বসের সাথে হাত ঝাঁকিয়ে শক্তভাবে হ্যান্ডসেক করে, যা একদম বেমানান ও বিরক্তিকর। তাই হ্যাণ্ডসেক করার সময় কখনোই শক্তভাবে হাত ধরবেন না বা অতিরিক্ত সেক করবেন না।
স্বাভাবিকভাবে হ্যান্ডসেক করতে হবে এবং একটু ঝুকে তা করতে হবে। যেমনটি দেখছেন- আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে।
স্মার্ট কুশল বিনিময়
ডেল কার্নেগি বলেছেন – একজন ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে মিষ্টি ও গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হল তার নাম। Hi/ Hello এর সময় অপরজনের নাম ধরে পরিচিত হবেন। এতে আপনার নাম মনে রাখার ক্ষমতাও বাড়বে। আর অপরজনও খুশি হবে, ভাববে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেমনঃ সামনের জন যদি বলে Hi আমি আকাশ, তাহলে আপনি বলবেন Hello আকাশ, আমি সৌরভ। তারপর যতগুলো কথা আপনাদের মাঝে হবে, কথার মাঝে চেষ্টা করবেন নাম ধরে ডাকার। যেমনঃ আকাশ তোমার বাসা কোথায়? আকাশ তোমার পছন্দের খাবার কি? ইত্যাদি।
তবে সমবয়সীদের নাম ধরে ডাকতে পারবেন শুধু আর সিনিয়রদের স্যারের আগে নাম লাগিয়ে ডাকতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে যাকে নাম ধরে ডাকবেন তার পারমিশন নিলে সবচেয়ে ভাল হয়। আর আমাদের দেশে যেহেতু ভাই ডাকলে সবাই খুসি হয় তাই নামের সাথে ভাই শব্দটা লাগিয়ে নিতে পারেন।
ড্রেসাপ সেন্স
পরিচয় পর্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার ড্রেসাপ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক আপনাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। শরীর থেকে যাতে কোন রকম দূর্গন্ধ বের না হয় এজন্য সর্বদা ফ্রেশ থাকার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ভাল সুগন্ধির পারফিউম ব্যবহার করতে পারেন।
ভুলেও কড়া কোন সুগন্ধির পারফিউম অফিসের জন্য সিলেক্ট করবেন না। মৃদু মিষ্টি ফুলের সুগন্ধি পারফিউম সবচেয়ে ভাল। তাই পারফিউম নেয়ার সময় দামের দিকে নজর না দিয়ে সুগন্ধির দিকে নজর রাখুন।
আপনার স্কিনের কালারের সাথে মিলিয়ে যে পোশাক আপনাকে মানাবে সেটা পড়ুন আর ফর্মালের দিকে একটু বেশি মনোযোগী হোন। প্রতিদিন একই কালারের ড্রেস না পড়ে এক এক দিন এক এক রকম পড়ুন এবং আপনার অফিসের অন্যান্য কলিগের সাথে মানিয়ে নিন।
ভালো শ্রোতা হোন
ভাল শ্রোতা হোন, সবাই চায় তার কথা কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনুক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা যে ভুলটা করি তা হল কথার মাঝে নিজের কথা বলা। যেমনঃ আপনার কলিগ গত মাসে বইমেলায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে, এখন আপনি তার কথা মন দিয়ে শুনবেন।
তার কথা শেষে আপনার যদি কোন অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তা শেয়ার করবেন। আপনি একজন ভাল শ্রোতা হন এটা শুধু আপনার সহকর্মী নয় গালফ্রেণ্ড কিংবা স্ত্রী সবাই চায়।
তর্কে জড়াবেন না
মানুষ তার জীবনে বেশিরভাগ সময় অযথা তর্ক করে নিজেকে জেতানোর জন্য। আর এটাই যেকোন সম্পর্ককে অবনতির দিকে নিয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে দেখবেন যে বেশি তর্ক করে তার ভাল কোন বন্ধু নাই এমনকি সংসারে শান্তি নাই। যে তর্কের কোন সমাধান নেই, সেই বিতর্কে না যাওয়াই ভাল।
রাজনৈতিক অনেক বিষয় আছে, যেগুলোর তর্কের কোন সমাধান নেই। আবার আপনার কলিগ একটি হিসেব করেছে এক নিয়মে, আপনি করেছেন আরেক নিয়মে। এক্ষেত্রে তারটা ভুল আপনারটা সঠিক এ নিয়ে কোন বিতর্কে যাবেন না বরং তাকে উৎসাহিত করবেন। অর্থাৎ কলিগ, বন্ধু কিংবা সঙ্গীর সাথে এমন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনায় যাবেন না যেটা রাগারাগি বা অভিমানের পর্যায়ে যায়।
সান্তনা দিয়ে পাশে দাঁড়ান
অফিসিয়াল বা সাংসারিক কারণে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ে, তখন সুযোগ আপনার সম্পর্কটাকে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়ার। সেসময় কলিগকে পজিটিভ কথা বলেন, তার দুঃখ কষ্ট গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেন।
কি করলে তার মন ভাল হবে সেটা করার চেষ্টা করেন। বেশিরভাগই এই সময়টাতে পাশে থাকে না, যারা থাকতে পারে তারাই আসলে বেস্ট কলিগ হয়ে যায়।
গোপন বিষয়ে নাক গলাবেন না
আপনি যত ভাল সহকর্মী হন না কেন, আপনার সহকর্মীকে কখনই জোর করবেন না তার প্রাইভেট বিষয়গুলো শোনার জন্য। যদি সে নিজে থেকে বলতে চায়, তবুও খুব জরুরী না হলে না শোনাই ভাল । কারণ, তার প্রাইভেসি অন্য কোনভাবে লিগ হলে তার দায়ভার আপনারই উপর এসে পড়বে।
তাই নিজেকে অন্যের প্রাইভেট বিষয় থেকে আলাদা রাখুন। এটাই আপনার সম্পর্কের জন্য ভাল হবে।
ফানি হোন
একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন যেকোন অফিসে সবার সমর্থন পায় সেই ব্যক্তি যে সবার সাথে হাসি মুখে চলতে পারে। আর ফান কার না ভাল লাগে। আপনার কলিগের সাথে কথা বলার সময় মাঝে মাঝে মজার কোন গল্প বা জোকস বলেন।
এতে আপনার প্রতি তার একটা দূর্বলতা কাজ করবে। তবে অতিরিক্ত কিছু নয়, অবশ্যই পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে ফান করবেন। আর এমন ফান করবেন না যাতে কারো ব্যক্তিগত ইগোতে লাগে। কলিগের সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখার সবচেয়ে ভাল উপায় এটি।
সম্মান দিন সবাইকে
সম্মান পেতে হলে আগে সম্মান দিতে হয়। এটা আমাদের সবার জানা। কিন্তু কেউ মানি আর কেউ মানি না। যিনি মানতে পেরেছেন, তিনি সমাজের মর্যাদাবান ব্যক্তি। তাই শুধু অফিসে নয়, সব জায়গায় ছোট বড় সবাইকে প্রাধান্য দেওয়াই হোক আপনার ব্যক্তিত্বের প্রধান পরিচয়।
আর সম্মান দিলে আপনি ছোট হবেন না বরং সবাই আপনাকে ভাল মনের মানুষ ভাববে এবং মিশতে চাইবে আপনার সাথে। আর কাউকে সম্মান দেয়ার সাথে মনের ভিতর একটা ভাল লাগা কাজ করে। ভয় দেখিয়ে কিংবা পাওয়ার খাটিয়ে কারো কাছে সম্মান আদায় করাটা এক ধরনের বোকামি এবং হাস্যকর। তাই এমন ভাবে চলুন যাতে মানুষ নিজে থেকে আপনাকে সম্মান দিতে বাধ্য হয়। আর এটাই হবে আপনার পরম পাওয়া।
কলিগের সাথে লান্স বা ডিনার করুন
যদি আপনি সম্পর্কটাকে আর একটু মজবুত করতে চান, তবে আপনার কলিগকে ল্যান্স বা ডিনারে আমন্ত্রণ করতে পারেন। এসময় অফিসিয়াল বিষয় নয়, বরং তার পছন্দের বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
কথার মাঝে একটু ফান করলে আপনার কলিগের জড়তা কেটে যাবে এবং আপনাকে অনেক কিছুই বলতে আগ্রহী হবে। অযথা বা খুব পার্সোনাল বিষয়গুলো না বলাই উত্তম।
আশা করি আপনি যদি উপরের বিষয়গুলো মানতে পারেন তবে আপনি যে কারোর কাছে আকর্ষণীয় হতে পারবেন। এই বিষয়গুলো শুধু আপানার কলিগের সাথে সুসম্পর্ক করতে সহায়তা করবে তা নয় বরং আপানার বন্ধু ও স্ত্রীর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারবেন।
আপানার সংসার এবং কর্মময় জীবন সুখের হোক এই কামনায় আজ এ পর্যন্ত আর এই বিষয়ে আরো ভাল ভাবে জানতে আমাদের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
আরো পড়ুন- দুশ্চিন্তা মুসিবত ও পেরেশানী দূর করার সহজ উপায়
জীবন কে সুন্দর আর ভাল মানুষ হিসাবে বন্ধু, কলিগ প্রতিবেশী গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাল লাগল।
ধন্যবাদ ভাই