কৌশলী হওয়ার উপায় – Self Awareness Tips: আজকের দিনে ‘IPhone’ এর ব্যাপারে তো আমরা সব কিছু জানি। কিন্তু I (আই) অর্থাৎ নিজের ব্যাপারে খুব কমই জানি। সত্যি কথা বলতে সকাল থেকে রাত অব্দি আমাদের বেশির ভাগ চিন্তা ভাবনা ও কাজ কর্মই পুরোপুরি অটো পাইলটে চলতে থাকে।
অর্থাৎ আমরা নিজেরাও জানি না যে, কি করছি? কেন করছি? বাট করে চলি। থেকে থেকেই অকারণেই কেন ফোনটা হাতে তুলে নেই, জানি না। সুযোগ পেলেই সিগারেট কেন মুখে তুলে নেই, জানি না। সেই মানুষটার কথা ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়। তবু সেই মানুষটার কথাই কেন বার বার ভাবতে থাকি, সেটাও জানি না।
এই ধরণের কমপালসনগুলো যখন আমাদের লাইফকে কন্ট্রোল শুরু করে তখন লাইফের বারোটা বাজা নিশ্চিত হয়ে যায়। এর হাত থেকে আপনাকে যে একমাত্র কোয়ালিটিটা বাঁচাতে পারে, সেটা হলো Self Awareness. অর্থাৎ নিজেকে নিজে জানা এবং বুঝতে পারা। তাই Psychologist – Tasha Eurich এর লেখা বই ‘Insight’ থেকে আপনাদের সাথে কিছু স্মার্ট আইডিয়া শেয়ার করবো। যাতে Self Awareness এই Unique Human Quality যেটা অন্যান্য সকল প্রাণীদের থেকে আমাদের মানুষদের সম্পূর্ণ আলাদা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ করে তোলে সেই কোয়ালিটিটা আপনি নিজের মধ্যে বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
আজকের আপনি জানতে পারবেন Self Awareness জিনিসটা আসলে ঠিক কি? কেন আমাদের Self Awareness দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং কিভাবে এই জীবন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তো চলুন, আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ১: সত্যি বলতে আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই আসলে সেলফ অ্যাওয়ার। লেখক এবং তার টিম মিলে যখন হাজার হাজার লোকের উপর সেলফ অ্যাওয়ারনেস রিসার্স কনডাক্ট করেছিলেন, তখন সেই রিসার্সের ৯৫% লোকই এটা দাবি করেছিলেন যে, তারা সেলফ অ্যাওয়ার। কিন্তু টেস্ট নেওয়ার পর দেখা যায়, তাদের মধ্যে শুধু ১০% লোকই আসলে সত্যি বলতে সেলফ অ্যাওয়ার ছিলেন।
অথর এর মতে, তিন ধরনের ব্লাইন্ডনেসের কারণে আমরা বুঝতে পারি না যে, আমরা কতটুকু সেলফ অ্যাওয়ার।
যার মধ্যে নাম্বার ১: Knowledge blindness
বুদ্ধরাম জিওগ্রাফিতে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। তবে সেটা অনেক বছর আগে। বহু দিন হয়ে গেছে বুদ্ধরামের সাথে জিওগ্রাফির আর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু তবুও বুদ্ধরামকে যখন বলা হলো, যে জিওগ্রাফির উপর একটা কুইচ হলে সে কেমন পারফর্ম করবে? তখন বুদ্ধরাম বললো, হাইজ স্কোর করতে পারবে। কিন্তু যখন কুইচটা শেষ হলো, তখন দেখা গেলো বুদ্ধরাম আসলে লো স্কোর করলো। কারণ বুদ্ধরামের যে বহু দিন ধরে চর্চাই নেই। আর সেটার ব্যাপারে বুদ্ধরাম সচেতনও নেই। এটাকে বলা হয় নলেজ ব্লাইন্ডনেস।
অর্থাৎ যখন আমরা নিজেদের যোগ্যতাকে আসল সত্যির উপর ভিত্তি না করে কোন বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করি। যেমনটা বুদ্ধরাম করলো। জিওগ্রাফিতে আমি গ্রাজুয়েট মানে জিওগ্রাফি কুইচে আমি তো অবশ্যই হাই স্কোর করবো।
নাম্বার ২: EMOTIONAL BLINDNESS
বুদ্ধরামকে একদিন জিজ্ঞেস করা হলো, তার ওয়াইফের সাথে তার সম্পর্ক কেমন? বুদ্ধরাম বলল, একেবারে ভালো না এবং বুদ্ধরামের মতে তার এই উত্তরটা সে লজিক্যালি ভাবেই বলছে। যেখানে আসল সত্যিটা হলো, গত পরশু দিন অব্দিও বুদ্ধরাম ওর বউয়ের প্রেমে হাবুডাবু খাচ্ছিলো। কিন্তু সেদিন সকালে বুদ্ধরামের ওর বউয়ের সাথে তুমুল ঝামেলা হয়েছে। সেই কারণে ইমোশনালি ডিস্টার্ব থাকার কারণেই ও এই উত্তরটা দিয়েছে। এটাকে সাইকোলজির ভাষায় ‘Recency Effect’ বলা হয়। অর্থাৎ কোন একটা জাজমেন্ট নেওয়ার সময় রিসেন্ট ঘটনাগুলো অন্যায় ভাবে আমাদের জাজমেন্টটাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। যার ফলে অনেক সময় আমরা ভুল জাজমেন্ট করে থাকি।
নাম্বার ৩: BEHAVIOR BLINDNESS
বুদ্ধরামকে অন্যরা সবাই অহংকারী, বদমেজাজী, হিংসুটে বলে চিনে। কিন্তু ও নিজেকে তার উল্টো অর্থাৎ বিনয়ী, শান্ত এবং সহানুভুতিশীল বলে মনে করে। এটাকেই অথর বলেছেন, BEHAVIOUR BLINDNSS. অর্থাৎ অন্যদের চোখে আমরা কেমন, সেটা না বুঝতে পারা।
তাই নিজের সেলফ অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য আপনার প্রথম কাজ হলো এই তিন ধরনের ব্লাইণ্ডনেসের মধ্যে কোনোটা যদি আপনার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে সেটাকে আগে আইডেন্টিফাই করা। যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার সেলফ অ্যাওয়ানেসের অভাব আছে। তবেই তো আপনি সেটাকে ইম্প্রুভ করার চেষ্টা করবেন।
বুদ্ধরামের মতো যদি আপনিও ভেবে বসে থাকেন যে, আপনি সেলফ অ্যাওয়ার। তাহলে তো আপনার মধ্যে নিজেকে ইম্প্রুভ করার কোন ইচ্ছেই আসবে না।
স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ২: কেন জিজ্ঞেস না করে কি জিজ্ঞেস করুন
এক সময় বুদ্ধরাম আর চালাক চেতন দু’জনই একই জায়গায় একই অফিসে একই বসের আন্ডারে জব করতে শুরু করে। বুদ্ধরাম আর চালাক চেতন দুইজনেই রেগুলার বসের কাছে মুখ ঝামটা খাচ্ছিলো। তো বুদ্ধরাম এই সমস্যা সমাধান করার জন্য নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো যে, কেন আমার বস আমার উপর সারাক্ষণ চিল্লায়? যে প্রশ্নটার ১০০% সঠিক কোনো উত্তর বুদ্ধরাম এর জানা ছিল না। কারণ বস যে সত্যিই কেন চিল্লায় সেটা হয়তো বসও নিজেই জানে না।
কাজ পছন্দ হয় না বলে চিল্লাতে পারে। বা অন্য কোন পারসোনাল খারাখারি থাকার কারণে চিল্লাতে পারে। বা হয়তো বুদ্ধরামের বদনটাই ওনার পছন্দ না। অর্থাৎ কেনো প্রশ্নের ১০০% সঠিক উত্তর পাওয়া কখনোই সম্ভব না। আর যখন আমরা অনেক চেষ্টা করেও কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুজে পাই না। তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা Frustrated এবং Depressed হয়ে পরি। তো বুদ্ধরাম সমস্যা সমাধান করার জন্য কেন প্রশ্নটা করেছিল। কিন্তু দেখা গেলো এতে উল্টো ওর সমস্যা কমার বদলে বরং সমস্যা আরো বেড়ে গেলো।
অন্যদিকে চালাক চেতন নিজেকে নিজে কেন প্রশ্ন করার বদলে কি করলে আমি বসের চোখে বেস্ট কর্মচারী হয়ে উঠতে পারি, সেই প্রশ্নটা করলো। অর্থাৎ কেন এরর বদলে কি জিজ্ঞেস করলো। ফলে ওর কাছে ওর প্রশ্নের কিছু নির্দিষ্ট উত্তর ছিল।
যেমনঃ সময়ের আগে কাজগুলো সঠিকভাবে কম্পিলিট করে বসকে সাবমিট করা। ঠিক সময়ে অফিসে ঢোকা এবং অফিসে বসে আড্ডা না মেরে বেরিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করা। এভাবে যখন চালাক চেতন সেই অনুযায়ী একশন নিলো তখন সত্যি ওর সমস্যাটার সমাধান হয়ে গেল। চালাক চেতন ওর বসের চোখে বেস্ট কর্মচারী হয়ে ওঠলো। ফলে বসের কাছ থেকে রেগুলার মুখ ঝামটা না, বরং প্রশংসা পেতে লাগল।
বুদ্ধরামের মতো সেম ভুলটাই আমরা অনেক সময় করে থাকি। কেনো এই মানুষটা এরকম। কেনো আমি ফোনের প্রতি এডিকটেড হয়ে পরছি। আমরা সেলফ অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য কেনো প্রশ্নের সাহায্য নেই। কিন্তু রিসার্স এবং স্টাডি থেকে এটা জানা যাচ্ছে, পার্টিকুলারলি সেলফ অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর ক্ষেত্রে যারা যত বশি কেনো খুজতে চেষ্টা করেন, তারা উত্তর না খুজে পেয়ে বা একেক সময় একেক রকম উত্তর খুজে পাওয়ার ফলে একটা সময় পর আরো বেশি হতাশ এবং বিষন্ন হয়ে পরে। কিন্তু তার মানে এই না যে, আমরা প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিবো।
লাইফের অন্যান্য ক্ষেত্রে কেনো প্রশ্নটা করা খুবই দরকার। কিন্তু অথর এর মতে, সেলফ অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে কেন এর বদলে কি প্রশ্নটা বেশি করতে হবে। কি করলে এই মানুষটার সাথে আমি সঠিক ভাবে ডিল করতে পারবো? বা কী করলে আমি ফোনের প্রতি এডিকশনটাকে কম করতে পারবো। তো সেলফ অ্যাওয়ারনেসের ক্ষেত্রে কেনো জিজ্ঞেস না করে কি জিজ্ঞেস করুন।
স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৩: মাইন্ডফুলনেসই
অ্যাওয়ারনেস কথার অর্থ হচ্ছে সচেতন থাকা। এই মূহূর্তে যা যা ঘটছে সেই সব কিছুর প্রতি যে যত বেশি সচেতন, সেই মানুষটা তত বেশি অ্যাওয়ার। তাহলে যে তার নিজের সাথে যা যা ঘটছে সেটা তার নিজের ভিতরে হোক কি বাহিরে সেই জিনিসগুলার প্রতি যত বেশি সচেতন তার সেলফ অ্যাওয়ারনেস তত বেশি। আর এই সচেতনতা বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে মাইন্ডফুলন্যাস বলা হয়।
মাইন্ডফুলন্যাস আমাদের শেখায় কিভাবে নিজের চিন্তাভাবনাগুলোর সাথে সঠিক ভাবে ডিল করতে হয়। সেলফ অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য অথর মেডিটেশন ছাড়া আরো তিনটি মাইন্ডফুলন্যাস টেকনিকের কথা বলেছেন। যার মধ্যে –
নাম্বার ১: REFRAMING
ধরুন, আপনার চাকরি চলে গেলো। এটাকে একটা ভীষণ বড় ক্রাইসিস এর পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখে আপনি চাইলে পেনিক করতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে এটাকে নতুন কিছু যেটা আপনি অনেক দিন ধরে ট্রাই করতে চাইছিলেন, সেই জিনিসটা ট্রাই করার একটা সুযোগ হিসাবেও দেখতে পারেন। অর্থাৎ REFRAMING মানে হলো যে কোন মূহূর্তে বিভিন্ন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে ভেবে দেখা।
নাম্বার ২: COMPARING AND CONTRASTING
ধরুন, ওয়ান ইয়ারের একটা রিলেশনশিপের ব্রেকআপ এরপর আপনি নতুন একটা রিলেশনশিপে গেলেন। এবার এই নতুন রিলেশনশিপেও ওয়ান ইয়ার পেরোনোর পর আবার আপনার মাথায় ব্রেকাপের চিন্তা ভাবনা ঘুরতে শুরু করলো। তো তখন আপনি আগের রিলেশনশিপটার সাথে এই রিলেশনশিপটার কম্পেয়ার এন্ড কনট্রাস্ট করলেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আসলে মুল সমস্যাটা ঠিক কোথায়? আপনি যাদের সাথে রিলেশনশিপে যাচ্ছেন সেই মানুষগুলোর মধ্যে নাকি আপনার নিজের মধ্যেই।
নাম্বার ৩: DAILY CHECK-IN
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য পুরো দিনটাকে একবার নিজের মনের মধ্যে রিফলেক্ট করে নিন। আজ কী কী ভালো হয়েছে, কী কী খারাপ হয়েছে, কী কী লাইফ লেসেন আপনি আজকের দিনটা থেকে শিখলেন, সেখান থেকে কিভাবে আপনি আগামীকাল নিজেকে ইম্প্রুভ করে তুলতে পারেন। শুধু এই কয়েকটা জিনিস কোথাও একটা ডেট দিয়ে রেকর্ড করে নিন।
এই পুরো বইটাতে যদি লাইফ চেঞ্জিং টিপস থেকে থাকে, তো আমার মতে সেটা হলো এটাই, DAILY 5 MINIT CHEKING. প্রতিদিন জাস্ট পাঁচ মিনিটের পরিশ্রম আপনার জীবন পঞ্চাশ গুণ বেটার করে তুলবে। যেমনঃ বিখ্যাত কবি রুমির বলা একটা উক্তি রয়েছে, গতকাল আমি চালাক ছিলাম। তাই আমি এই পৃথিবীকে বদলানোর চেষ্টা করতাম। আজ আমি বুদ্ধিমান হয়েছি। তাই আজ শুধু নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করছি।
সবশেষে আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ, যদি এই পোস্টটা আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটিকে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। যতগুলো শেয়ার হবে আমি বুঝবো ততজনকে আমি সাহায্য করতে পেরেছি।
আরো পড়ুন – জীবনে সফল হওয়ার উপায়