ভালো ঘুমানোর উপায় – খুঁজতে খুঁজতে যারা এই আর্টিকেলটিতে এসে পৌঁছেছেন, আমি মনে করি এখানেই পাবেন আপনার সমস্যার পূর্ণাংগ সমাধান। তাই আর সময় নষ্ট না করে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
“ঘুমের অভাবে ফেসবুক গদ্যময়,
বিছানার চাদর যেন ঝলসানো মাটি।”
হ্যাঁ বন্ধুরা, আপনারা যারা ঘুমের অভাবে রাত জাগা পাখি হয়েছেন, তাদের জন্য আজকে সমাধানের পালা। আর তা দেয়ার চেষ্টা করব “Shawn Steveson” এর বই “Sleep Smarter” এবং অন্যান্য রেফারেন্স থেকে।
কেন ভাল ঘুমানো দরকার?
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু একরাত না ঘুমানোর কারণে আমাদের শরীরে এত বেশি ইনসুলিন রেজিস্টেন হয়ে পড়ে যেটা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সমান। তাহলে ভেবে দেখুন এরকম একদিন, একমাস ও বছর পরে কি হতে পারে?
তাছাড়া ব্রেনের কার্যক্ষমতা থেকে শুরু করে শরীরে বিভিন্ন প্রতিরোধ কমাতে ও রোগ সৃষ্টির জন্য এটা দায়ী। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার হরমোন ব্যালেন্স সহায়ক, মেটাবলিজম ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। এখন জেনে নেই কিভাবে ভাল ঘুমানো যায়?
Idea 1: নিয়মিত অভ্যাস
ছোটবেলায় মায়ের ঘুমপাড়ানি গান শুনে সবাই ঘুমিয়েছিলাম। আহ! কি শান্তির ঘুম। আমি নিশ্চিত যে এখন যদি আমরা সেই একি ভাবে শুয়ে মায়ের ঘুমপাড়ানি গান শুনি তবে অনায়েশে ঘুমায় পড়ব। কারণ আমাদের স্থায়ী স্মৃতির মধ্যে সেটা ঘুমের একটা প্যাটার্নে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু চাইলেও তো মা আর এখন ঘুমপাড়ানি গান গাইবে না। তাই আমাদের পূর্ব পুরুষের ঘুমের প্যাটার্নকে মানতে হবে। কারণ তাদের থেকে আমরা বিবর্তিত হয়েছি এবং তাদের ডি.এন.এ বহন করছি। তারা রাত্রি বেলায় খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তেন।
বিজ্ঞানও বলে রাত ১১ টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সময় হল ঘুমানোর আদর্শ সময়। এটা আমাদের বায়োলজিক্যাল ক্লক। কিন্তু পড়াশুনা বা অন্যান্য কাজে যদি ঘুমাতে দেরি হয় তবুও চেষ্টা করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমানো। মেলাটনিন হরমোন যা ব্রেনের পিনিয়াল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হয়।
এটা আপনার ঘুম চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা আলোর উপর নির্ভর করে ক্ষরিত হয়। তাই দিনে যত বেশি পারা যায় আলোতে থাকবেন এবং রাতে যত কম পারেন আলো থেকে দূরে থাকবেন। রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে রুম অন্ধকার করবেন এবং মোবাইল হাতের বাইরে রাখবেন।
Idea 2: এপ্স ব্যবহার
মোবাইল থেকে আসা আলোক রশ্মি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই Twilight বা Blue Light Filter এপস ব্যবহার করুন। এই এপস মোবাইল স্কীনে লাল আভা সৃষ্টি করে যা ক্ষতিকর রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে নটিফেকশন বারে গিয়ে Nightlight অপশন চালু করলে হয়ে যাবে।
Idea 3: খাদ্যাভাস
খাবারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলুন। এ্যালকোহল থেকে দুরে থাকুন। রাতের খাবারে খুব ভারী কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন! অতিরিক্ত পানি আর ধুমপানটাকেও একটু পরিহার করুন। ঘুমোনোর আগে ক্ষুধাবোধ হলে কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার, যেমন- স্যান্ডুইচ, কলা ইত্যাদি খান। কার্বোহাইড্রেট আপনার ভেতরে ঘুমভাব তৈরী করবে!
ক্যাফেইন-জাতীয় খাবার ঘুম তাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের অন্তত পাঁচ ঘণ্টা আগে শেষ চা বা কফিটুকু পান করুন। এমনকি যাঁদের ঘুম ঠিকমতো না হওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের দুপুরের খাবারের পর কফি না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
Idea 4: ঘুমের জায়গা নির্বাচন
ঘুমানোর জন্য বিছানা নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিছানা হল ঘুমানোর জায়গা কিন্ত সেই জায়গায় যদি দুনিয়ার সব কাজ করার জন্য টেবিলের মত ব্যবহার করি, তবে ঘুমানোর সময় ঐ সব কাজগুলো মাথায় ঘুরবে।
আমরা যদি শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্য বিছানা ব্যবহার করি, তবে বিছানায় শোয়ামাত্র ব্রেন আমাদের কমান্ড করবে যে এটা ঘুমানোর জায়গা এবং ঘুমের পাটার্ন ততক্ষণাৎ চালু হয়ে যাবে।
Idea 5: ঘুমের পরিবেশ
থার্মোরেগুলেশন আমাদের ঘুমকে প্রভাবিত করে। ২০ ডিগ্রি সি তাপমাত্রা ঘুমানোর জন্য আদর্শ। গভীর ঘুম পেতে হলে অবশ্যই এরকম তাপমাত্রার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করে এরকম রুম নির্বাচন করতে হবে এবং গরমে অবশ্যই ফ্যান ব্যবহার করুন।
প্রতিদিন সকালে হালকা ব্যায়াম, খালি পেটে পানি, সকালের নাস্তা আপনার শরীরকে চাঙ্গা করে এবং শরীরের অভ্যন্তরে হরমোন ও অন্যান্য কাজগুলো সঠিকভাবে হয়। যারা রাতে ঘুমাতে পারেন না, তারা চেষ্টা করবেন দিনে না ঘুমানো।
যাদের শরীর বেশি ঘামে, তারা রাত্রি বেলায় আরেকবার গোসল করতে পারেন। এতে শরীর সজীব হয় ও গভীর ঘুমের জন্য উপকারী। ঘুমাতে যাবার আগে দুই মিনিট হালকা মেডিটেশন করতে পারেন। যেমনঃ গুরুদের মত ধ্যানে বসে অন্ধকার ঘরে জ্বোরে জ্বোরে দশটি নি:শ্বাস নেয়া।
Idea 6: ঘুমের ব্যায়াম
একটি আরামদায়ক অবস্থানে বসুন। চোখ বন্ধ করুন। কাঁধ নামিয়ে দিন। চোয়াল আরামে রাখুন। তবে মুখটা হালকাভাবে বন্ধ রাখুন। নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিন। তবে বুক ভরে নয়, পেট ভরে! এবার মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে অন্তত ছয়বার করুন। এরপর এক মুহূর্ত স্থির হয়ে বসে থাকুন। নিজেকে বলুন – আমি ঘুমের জন্য তৈরি। এর পর ধীরে ধীরে উঠে পড়ুন এবং বিছানায় চলে যান।
শরীরে এমন কিছু বিশেষ জায়গা রয়েছে যেখানে মৃদু কিন্তু দৃঢ়ভাবে চাপ প্রয়োগ করলে ঘুম আসে। দুই ভ্রূ’র ঠিক মাঝখানে, নাকের একদম উপরের অংশে বুড়ো আঙুল রাখুন। ২০ সেকেন্ড চেপে ধরে রাখুন তারপর আঙুল সরিয়ে নিন। এভাবে আরো দুবার করুন। এবার বিছানার ধারে বসুন এবং ডান পা উঠিয়ে বাম হাঁটুর ওপরে রাখুন।
হাঁটুর হালকা জায়গাটি খুঁজে বের করুন এবং দ্বিতীয় হাঁটু দিয়ে একইভাবে চাপ দিন। এক পায়ের সাহায্য নিয়ে আঙুল দিয়ে অন্য হাঁটুর উল্টো পিঠের জায়গাটি খুঁজে বের করুন। বুড়ো আঙুল এবং হাতের অন্য চার আঙুল দিয়ে হাঁটুতে মৃদুভাবে চেপে ধরুন।ঘুম আনার উপায় গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে ফলপ্রসূ।
ঘুম আনার কৌশল
ব্যায়ামটি ৪-৭-৮ নামে পরিচিত। যারা অনিদ্রা সমস্যায় ভোগেন তারা এই ব্যায়ামটি করে খুব তাড়াতাড়ি, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক মিনিটেরও আগে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ড্রু ওয়েল ভালো ঘুমের জন্য ব্যায়াম এর নিয়ম গুলো দেখিয়েছেন এভাবে –
- প্রথমে ৪ সেকেন্ড নাক দিয়ে খুব ভালো করে শ্বাস নিন।
- এরপর ৭ সেকেন্ড দম ধরে রাখুন। শ্বাস ছাড়বেন না।
- তারপর ৮ সেকেন্ড ধরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
- এভাবে কয়েক বার করুন এবং ঘুমাতে যান।
যারা যারা রাতে আরো বেশি ভালো ঘুমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চান, তারা নিজের উপায় কয়েকটিও জেনে নিন।
ভাল ঘুমানোর উপায়
১. তন্দ্রাভাব না আসা পর্যন্ত বিছানায় না যাওয়া।
২. ঘুম না আসলে অযথা বিছানায় শুয়ে না থাকা।
৩. দিনের বেলা না ঘুমানো।
৪. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে জাগার চেষ্টা করা।
৫. শোয়ার ঘরটি শুধুমাত্র ঘুমের জন্যই বরাদ্দ রাখা। শোয়ার ঘরে খাবার গ্রহণ, পড়ালেখা বা টিভি দেখার মত কাজগুলো না করা।
৬. শোয়ার ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। যেন তাপমাত্রা খুব বেশি বা খুব কম না হয়। এই ঘরটিকে যেকোন ধরনের তীব্র শব্দ বা শব্দ দূষণ থেকে দূরে রাখাও বাঞ্চনীয়।
৭. বিছানাটি আরামদায়ক (খুব নরম বা খুব শক্ত নয়) হওয়া এবং যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
৮. ঘুমাতে যাবার পূর্বে চা, কফি, এলকোহল বা সিগারেট থেকে দূরে থাকা। সম্ভব হলে এই অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা।
৯. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং শোয়ার পূর্বে একগ্লাস গরম দুধ পান করা।
১০. ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা ঘুমের জন্য উপকারী।
১১. ঘুমানোর আগে অন্তত দশ মিনিট বই পড়া।
আরো পড়ুন- কিভাবে অলসতা দূর করা সম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে
ধন্যবাদ আতিকুর ভাই, সাথে থাকবেন।
ভালো লাগলো পড়ে।আপনার ফেসবুকে আমি এক ভক্ত।
ধন্যবাদ বীথি…আমাদের সাথেই থাকুন।