প্যাশন কিভাবে ঠিক করবেন? জীবনের লক্ষ্য বা প্যাশন কি? কেন দরকার? একদল স্টুডেন্ট প্যাশন-ট্যাশন আজাইরা মনে করবে। কারণ তাদের অর্থ উপার্জন মূল উদ্দেশ্য। তাদের জন্য বলি মনোবিজ্ঞানীদের জরিপ অনুযায়ী- যারা প্যাশন ছাড়াই চলে, তারা জীবনে অর্থ উপার্জন করতে পারলেও বৃদ্ধ কিংবা কোন একসময় প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়ে। বেশিরভাগের প্যাশন না থাকায় কর্মক্ষেত্রে মন বসাতে পারে না এবং মানসিক বিভিন্ন রোগে ভোগে।
তাই লাখ টাকা আয় করে যদি মানসিক রোগে ভোগা লাগে তাহলে জীবন ষোল আনাই বৃথা। তাই জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত ও কর্মক্ষেত্র উপভোগ করতে আজ আমরা প্যাশন নিয়ে বিস্তারিত জানব। তোমাদের এক ক্যাটাগরির স্টুডেন্ট আছ যারা পছন্দের সাবজেক্ট পড়ে সেটাকে প্যাশন হিসেবে নিয়ে ভাল জব সেক্টরে যেতে চাও, ২য় ক্যাটাগরি আছ যারা উন্মুক্ত পেশা কিংবা উদ্যোক্তা হওয়াকে প্যাশন হিসেবে পেতে চাও। তবে আরেক ক্যাটাগরি স্টুডেন্ট আছ যারা এখনও নিজের প্যাশন নিয়ে দ্বিধায় ভুগছো। সত্যি বলতে এদের সংখ্যাই বেশি। যাইহোক আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরিসরে এই তিন ক্যাটাগরি নিয়েই কিছু বলার চেষ্টা করব। আশা করি, আজ থেকে অনেকের ধারণা কিছুটা হলেও বদলাবে। আর একজনেরও যদি কথাগুলো উপকারে আসে তবেই আমি সার্থক।
প্যাশন উন্মুক্ত ক্যারিয়ার ও উদ্যোক্তা:
চ্যালেঞ্জিং জীবনের আরেক নাম উদ্যোক্তা। যাদের উন্মুক্ত ক্যারিয়ার নিয়ে সংশয় আছে তাদের বলি – এটা বলতে আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাধীন কর্মক্ষেত্র বোঝায়। যেমন-আর্টিস্ট, মিউজিশিয়ান, ডিজাইনার, ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সূচনা হয়। জীবনে অনেক বড় রিস্ক নিয়ে, সমাজের মানুষের নেতিবাচক কথা পেরিয়ে এরা লক্ষ্যে পৌছায় আবার ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ভুগে।
আসলে আমাদের মত গরীব দেশে এরা কোনকিছু করার আগ পর্যন্ত অপদার্থ ও অবহেলিত। চাকরির বাজার যেখানে সবসময় চড়া সেখানে নিজস্ব কিছু করাকেও পাপ হিসেবে দেখে এদেশের মানুষ। জানিনা কবে এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে? কত আইডিয়া কবরে মৃত দাফন হবে? যাইহোক এত কিছুর পরেও যারা নিজেই কিছু করতে চাও বা উদ্যোক্তা হতে চাও তারা স্বাগতম। চাকরির বাজার ঠান্ডা করতে তোমাদের জুড়ি নাই। তোমাদের জন্য নতুন নতুন কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মক্ষেত্র তৈরী হয়। তাই তোমাদের অনেক কিছু সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
প্যাশন হিসেবে যখন নিয়েছই তখন শেষ না দেখে হাল ছাড়বে না। হাজার ভুল, ব্যর্থতা, তিরষ্কার এর মাধ্যমে নিজেকে আপডেট কর সব সময়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই যদি দেখ পড়াশুনার পাশাপাশি এটা করা কষ্টকর, তবে বাবা-মা মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও চালিয়ে যাও। তাঁরা তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করতেই পারে ও একখানা সিকুয়্যার জব আশা করতেই পারে। এখানে দোষের কিছুই নাই ।
তূমি ইঙ্গিনিয়ারিং বা কোন সাব্জেক্টে পড়ছো কিন্তু ডিজাইনিঙ্গে তোমার যদি শখ থাকে তাহলে সাবজেক্ট পড়ার অবসরেও তুমি তা করতে পার। এখানে ইচ্ছাশক্তিটাই আসল। সময় ও সুযোগ তুমি পাবেই। হয়তো বিয়ের বয়সটা একটু পিছায় যাবে, ব্যাপার না গুণিরা বলেন-প্যাশন ভালবাসার মানুষটির চাইতে কোন অংশে কম না, বরং অনেকাংশে বেশি । পড়াশোনার পাশাপাশি চালায় যাও এবং তোমার প্যাশনে যখন সফল হবা তখন পরিবারকে তোমার ভবিষ্যৎ প্লানের কথা জানাও, দেখবা সবাই উৎসাহ দিবে। শুধু নিজস্ব প্লাটফর্ম দাড় করানোর আগ পর্যন্ত সবকিছু শুনে যাও।
জ্ঞানীরা বলেন- সফলতার আগে কান বন্ধ কর আর সফলতার পর মুখ, তাহলে জীবন সুন্দর। কারো দ্বারা প্রভাবিত কিংবা ডিমান্ডের কথা ভেবে প্যাশন বাছাই করবা না। কাজের প্রতি টান ও ভালবাসাই হবে তোমার আসল উদ্দেশ্য, বাকিগুলো এমনি চলে আসবে।
প্যাশন একাডেমীক সাবজেক্ট:
তোমার ডাক্তার হবার ইচ্ছা নাই তবুও কি জ্বোর করে সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিবা? এই একটা সময় তোমাকে ঘুরে দাড়াতেই হবে। আজ যদি ঘুরে দাড়াতে না পার তবে সারাজীবন ভাঙ্গা মেরুদন্ডী নির্জিব প্রাণী হয়ে কাটাতে হবে। জানি বিষয়টা অতো সহজ না, তবুও তোমাকে হাত জ্বোর করে হলেও দিনের পর দিন বাবা-মাকে বোঝাতে হবে। তার আগে অবশ্যই যাচাই করে দেখ যে তুমি যে সাব্জেটাকে প্যাশন ভাবছো সেটা কি আসলেই তুমি চাও?
এজন্য কয়দিন তোমাকে ভাবতে হবে। ভাবার সময় এটার ভবিষ্যৎ ভালো কিনা, ডিমান্ডফুল কিনা ইত্যাদি লোভনীয় বিষয়গুলো ভাববে না ও কারো কথায় প্রভাবিত হবা না। কারণ প্রতিটা সাবজেক্ট এর একটা আলাদা পাওয়ার লেভেল আছে, যার চূড়ায় কেবলমাত্র প্যাশন ধারীরাই চড়তে পারে।
তাই নিজের প্যাশন সন্ধানে দরকার হলে কয়দিন হাতে-নাতে করে দেখ সত্যি কি তুমি এটাতে কর্মজীবনে খুশি থাকবে কিনা? এজন্য শুধুমাত্র তুমি তোমার মন ও সৃষ্টিকর্তার স্বরনাপন্ন হবা। তারপর যদি প্যাশন হিসেবে সেটাকে মনে কর তাহলে পরিবারকে ইমোশনাল করে হলেও বোঝাও। এতেও যদি ব্যর্থ হও তবুও হাল ছেড় না।
যখন দেখবা বাবা-মার বাধ্য হয়ে কিংবা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে অপছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া লাগছে তখন একটু লোভী হয়ে যাও মানে সাবজেক্ট এর ভালো ভবিষ্যৎ, খ্যাতি, ডিমান্ড ইত্যাদি লোভনীয় বিষয় নিয়ে ভাবা শুরু করে দাও। বিভিন্ন জনের সামনে তোমার এই অপছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে গুণগান কর, দেখবে সাবজেক্টার প্রতি ধিরে ধিরে ভাললাগা শুরু হবে।
প্যাশন বিভ্রান্ত এবং কিভাবে প্যাশন ঠিক করব:
আমরা সবাই এর স্বীকার। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই,সময় ও পরিস্থিতির মাধ্যমে প্যাশন পরিবর্তন হয়। যারা একটু বেশি ভাবে তারাই বেশি কনফিউজড হয়ে যায়। তবে সত্যি বলতে হুটহাট করে প্যাশন ঠিক হয় না। যদি তুমি এখনও দ্বিধায় ভুগ তাহলে আজ থেকে তোমার পছন্দের কাজগুলো লিস্ট করে নিয়মিত একটু একটু করে করা শুরু করে দাও, যেটা করতে বেশি পছন্দ করবা সেটা আবার কিছুদিন চালায় যাও। তারপরেও যদি বরিং না লাগে তাহলে সেটাই তোমার প্যাশন। তবে বেশি দ্বিধায় ভুগলে পরিবর্তন হতে সময় লাগবে না। তাই নির্দিষ্ট প্যাশনে বদ্ধপরিকর হও।
যদি তুমি যথেষ্ট মোটিভেটেড পার্সন হও তাহলে যারা তোমার প্যাশন নিয়ে নেগেটিভ ধারণা পোষণ করে, তাদের তোমার প্লান জানায় দাও। এতে সে ঐ বিষয় নিয়ে তোমাকে তেল মারবে আর তুমি সেটা জ্বালানী হিসেবে শক্তি সঞ্চয় করে কাজের গতিকে বাড়ায় দাও। তবে ভীত মন হলে বলার দরকার নাই। তোমার কাজের গতি যদি কয়েকগুণ বাড়াতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমার প্যাশন এর সাথে অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করার মানসিকতা জুড়ে দাও।
প্যাশন নিয়ে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। দেখবা প্রতিটা দিন, প্রতিটা মিনিট তোমার কাছে আনন্দের হবে। সৃজনশীলতায় নিজেকে আবিষ্কারের মাঝে ভাসিয়ে দাও, দেখবে যুগ যুগ আনন্দের ভেলায় বেঁচে থাকতে মন চাইবে। দু’টাকা কম উপার্জন হতে পারে কিন্তু যে সুখের ছোয়া পাবে, তা লাখ টাকা দিয়েও কেনা যাবে না।
প্যাশন অনেকটা সত্যিকারের ভালবাসার মত, যেটা কখনও ঠকায় না। জীবনকে আশার আলোয় বাচতে শেখায়।