বিনা পুজিতে লাভজনক ব্যবসা – স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া: সোস্যাল মিডিয়াতে কোটিপতি বিজনেস ম্যানদের লাইফস্টাইল দেখে, তাদের সুন্দর সুন্দর গাড়ি বাড়ি দেখে যদি আপনার বিজনেস করার ইচ্ছা জেগে থাকে তাহলে সেই ইচ্ছাটাকে বাড়তে দেওয়ার আগেই শেষ করে ফেলা ভালো।
অথবা এখন ৯-৫ পর্যন্ত জব করছেন বলে যদি জীবনে একটু ফ্রি টাইম পাওয়ার কথা ভেবে বিজনেস শুরু করার কথা ভাবছেন তাহলে আবারও বলবো সেই ইচ্ছাটাকে বেড়ে ওঠার আগেই মেরে ফেলুন। কারণ যে কোটিপতি বিজনেস ম্যান এর গাড়ি বাড়ি দেখে আপনি বিজনেস শুরু করার কথা ভাবছেন সেই কোটিপতি হয় ১০ বছর একটানা বন্য স্ট্রাগল করার পর তার বিজনেসটাকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছে।
আপনার মধ্যে কি সেই দুঃখ, কষ্ট, বাঁধাগুলোকে অতিক্রম করার জন্য যে মানসিক শক্তি দরকার, যে বিশাল ধৈর্য্য থাকা দরকার সেটা আদৌ আছে কি? নাকি আপনার একটা ঠিকঠাক কমফরট্যাবল লাইফ বেশি পছন্দ।
স্মার্ট আইডিয়া ১: Don’t start a business if you want a comfortable life right now
যে লোকটা কোনো কোম্পানিতে জব করে সেও অন্তত সপ্তাহে এক কি দু’দিন হলেও পুরো দিনটা ছুটি কাটানোর জন্য পায়। কিন্তু সেই কোম্পানির মালিকের মাথায় ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টাই চিন্তা ঘুরতে থাকে। আর যদি আপনি জব করেন তবে হয়তো আপনাকে দিনে ৮ – ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে।
কিন্তু নিজের বিজনেস শুরু করলে শুরুতে আপনাকে হয়তো ১৪ – ১৬ ঘণ্টা করেও কাজ করতে হতে পারে। হ্যা এবার বিজনেসটা একটা ভালো পজিশনে পৌঁছে গেলে তখন আপনি নিজের টীম হায়ার করে নিজের মাথার উপর থেকে কিছুটা চাপ হয়তো কমিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু শুরুর বছর গুলোতে নিজের জান প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার মতো পরিশ্রম করতে রাজি থাকলে তবেই নিজের বিজনেস শুরু করার কথা ভাবুন।
অর্থাৎ যদি আপনি এখনি একটা কমফরট্যাবল লাইফ চান তাহলে বিজনেস শুরু না করাই ভালো।
স্মার্ট আইডিয়া ২: Don’t look for ideas, look for problems that you can solve
এবার এই বন্য অমানুষিক পরিশ্রম কারো পক্ষে তখনি করতে পারা সম্ভব হয় যখন তার সেই কাজটা পছন্দের কাজ হয়। অনেক লোক আছে যারা ইন্টারনেটে বিজনেস আইডিয়া সার্চ করে বেড়ায়। তারা এটা বোঝে না যে আইডিয়াটা বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপার সেটাকে এক্সিকিউট (সামনে এগিয়ে নেওয়া) করা। আর এক্সিকিউট করা তখনি সম্ভব যখন সেই কাজটা করতে আপনার ভালো লাগবে। তাই ইন্টারনেটে আইডিয়া না খুজে নিজের লাইফ থেকে আইডিয়া খুঁজে বার করুন।
নিজের লাইফে, নিজের বাড়িতে বা নিজের এলাকাতে লক্ষ করুন এরকম কি প্রবলেম রয়েছে। যেটা আপনি চাইলে সমাধান করতে পারেন এবং তার জন্য লোকে আপনাকে টাকা দিতেও রাজি হবে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো কেক বানাতে ভালোবাসেন। এবার আপনি দেখলেন যে আপনার এলাকায় পিওর ভেজ কেকের চাহিদা তো রয়েছে। কিন্তু এরকম কোনো দোকান নেই যেখানে পিওর ভেজ কেকের বিভিন্ন ধরণ পাওয়া যায়। যে কয়টা কেকের দোকান রয়েছে সেখানে ভেজ কেকের সংখ্যা খুবই লিমিটেড। তো এটা আপনার জন্য বিজনেস শুরু করার একটা ভালো সুযোগ হতে পারে।
সুতরাং আইডিয়া খুঁজে বের না করে প্রবলেম খুঁজে বার করুন। যেটার সমাধান আপনি করতে পারবেন।
স্মার্ট আইডিয়া ৩: At starting don’t take any risk or stress, start small
এবার কেকের বিজনেস শুরু করার জন্য শুরুতেই কি লাখ লাখ টাকা দিয়ে একটা দোকান কিনতেই হবে? একদমই না। বিজনেস শুরু হবে নিজের কাছের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের মধ্য দিয়ে। শুরুতেই যদি আপনি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বা নিজের সব জমানো টাকা শেষ করে দোকান কিনে শুরু করার কথা ভাবেন তো আপনার ফেইল হওয়ার চান্স অনেক বেশি। কারণ এই কাজটা করে আপনি নিজের উপর একটা বড়সড় চাপ তৈরি করে ফেলবেন। আর চাপে পড়লে মানুষের বুদ্ধিও চেপে যায়। তাই শুরু এমনভাবে করতে হবে যাতে নো রিক্স, নো স্ট্রেস থাকে।
বন্ধুর জন্মদিনে এখন সব বন্ধুরা মিলে একসাথে টাকা দিয়ে কোনো গিফট বা কেকে তো কেনেই। তো আপনি বন্ধুদের অফার দিলেন যে দোকান থেকে কিনতে হবে না। তোদের কেকের যে বাজেট আছে সেই টাকা আমায় দিস। কেকটা আমি নিজের হাতে বানিয়ে দেবো। এতে যার জন্মদিন সে আরো বেশ খুশিই হবে। এই একই কৌশলটা আপনি আপনার মামার মেয়ে বা পিসির ছেলের জন্মদিনেও এপ্লাই করতে পারেন।
অর্থাৎ কোনো রকম চাপ বা ঝুঁকি নিয়ে শুরু করা মানে বোকামি করা। ছোট থেকে শুরু করুন।
স্মার্ট আইডিয়া ৪: Start with online advertising and marketing
এবার জন্মদিনে নিশ্চয়ই আরো অন্যরাও আসবে। তাদের সবার কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন। সবার কেকটা কেমন লাগলো? আরও কি ভালো করা যায়? তাদের কি মতামত? এভাবে ফিডব্যাক নিয়ে নিয়ে ইম্প্রুভ করতে করতে একটা সময় পর যখন আপনি দেখলেন যে আপনার বানানো কেক ম্যাক্সিমামা লোকেরই খুব পছন্দ হচ্ছে তখন আপনি চলে আসুন অনলাইন অর্ডার কালেক্ট করে হোম ডেলিভারি শুরু করার দিকে।
এর জন্য ফেসবুক একটা এক্সিলেন্ট অপশন। ফেসবুক এড তো আছেই। তার সাথে আমাদের ফ্রেণ্ডলিস্টেই তো এখন প্রায় হাজার জন করে ফ্রেণ্ড থাকে। কার সামনে বার্থডে আসছে সেটাও ইজিলি দেখা যায়। এবার আপনার ফ্রেণ্ডলিস্টেই যার হয়তো বার্থডে আসছে তাকে আপনি আপনার স্টার্ট আপের ব্যাপারে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ নিজের হাতে তার বার্থডেতে কেক বানিয়ে দেওয়ার অফার করতে পারেন।
এখানে একটা ছোট্ট টিপস বলি যখনই আপনি অচেনা কাউকে অ্যাপ্রোচ করছেন নিজেদের ব্যাপারে তখন আপনার একটা সুন্দর ভিজিটিং কার্ড থাকা অত্যন্ত জরুরী। কারণ এতে সামনের জনের মনে একটা ভালো ইম্প্রেশন ক্রিয়েট হয়।
সুতরাং শুরুতে অনলাইন এডভারটাইজিং এবং মার্কেটিং এর সাহায্য নিন।
স্মার্ট আইডিয়া ৫: Find out how you can provide better value than your competitors
এবার কথা হচ্ছে বড় বড় যে নামকরা কেকের দোকানগুলো রয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে কেউ আপনার কাছ থেকে কেন কেক কিনবে? লোকে তখনই আপনার কাছ থেকে কিনতে রাজি হবে যখন আপনি তাদেরকে কোনো এক্সট্রা ভ্যালু প্রভাইড করবেন।
সেটা হতে পারে আপনি হয়তো এরকম একটা সুন্দর ইউনিক ডিজাইন বা টাইপ প্রভাইড করছেন যেটা এখানে কোথাও পাওয়া যাবে না। অথবা এই দামে এত ভালো কোয়ালিটি বা কোয়ানটিটি সে হয়তো কোথাও পাবে না। যাইহোক, আপনার কাছ থেকে কিনলে তার যদি কোন লাভ হয় তবেই অচেনা কেউ শুরুতে নামিদামি দোকানগুলো বাদ দিয়ে আপনার কাছ থেকে কিনতে রাজি হবে।
তাই খুঁজে বার করুন কিভাবে আপনি আপনার কম্পিটিটরসদের থেকে বেটার ভ্যালু প্রভাইড করতে পারবেন।
স্মার্ট আইডিয়া ৬: Partner with those only, who are as passionate as you
এবার যখন আস্তে আস্তে অর্ডার বাড়তে শুরু হবে তখন আপনার একার পক্ষে সবদিক সামলে ওঠা সম্ভব হবে না। যেহেতু বিশাল কিছু ইনকামও হয়তো হবে না। তাই হয়তো আপনি কাউকে হায়ারও করতে পারবেন না।
তাই সে ক্ষেত্রে আপনাকে পার্টনার জোগাড় করতে হবে। অর্থাৎ যা ইনকাম হবে তার একটা ফিক্সড শেয়ার আপনি তার সাথে ভাগ করে নেবেন। এবার আপনার যোগাড় করার সময় লোকে যে ভুলটা করে সেটা হলো যে রাজি হয় তাকেই নিজের সাথে পার্টনার করে নেয়। যে ভুলের মাশুল পড়ে গিয়ে গুনতে হয়।
শুধুমাত্র তাদেরকেই নিজের পার্টনার হিসেবে যুক্ত করুন যারা তাদের যে কাজটা করতে হবে সেই কাজটার ব্যাপারে আপনার মতই ইকোয়ালি প্যাসোনেট। তাদের প্রধান মোটিভেশন যদি টাকা কামানো হয় তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের সাথে আপনার ঝামেলা হতে বাধ্য। আর পার্টনারশিপ করার সময় আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা হলো বিজনেসের মেইন কন্ট্রোলটা যেন আপনার হাতে থাকে। সেটা যদি আপনি হাত ছাড়া করে ফেলেন তবে আপনার ভবিষ্যতে অনেক বাজে সময় দেখতে হতে পারে।
যেমনটা অ্যাপলের ফাউন্ডার স্টিভ জবসের সাথে হয়েছিল। তার পার্টনাররাই তার নিজের শুরু করা কোম্পানি থেকে বার করে দিয়েছিল। এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কোন প্রশ্ন নেই। কারণ বিজনেসে ইমোশনের কোনো জায়গা নেই। যেটা বিজনেসের জন্য ভালো সেটাই আপনাকে করতে হবে।
এরপর আস্তে আস্তে বিজনেস যখন আরও এগোতে থাকলো তখন আপনি একটা টীম হায়ার করলেন। কিংবা যা প্রফিট হলো সেখান থেকে ইনভেস্ট করে হয়তো একটা দোকান বা অফিস চালু করলেন। এভাবে স্টেপ বাই স্টেপ এগোলে রিক্সও অলমোস্ট জিরো এবং ফেইল হওয়ার চান্সও অলমোস্ট জিরো।
সুতরাং তাদেরকেই নিজের পার্টনার বানান যারা ঠিক আপনার মতই কাজটা কে প্রধানত ভালোবাসে।
তো এবার যদি আমি এই পুরো ভিডিওটাকে সাম আপ করি, তো ব্যবসা শুরু করার প্রধান ছয়টি সূত্র হলো-
১। যদি আপনি এখনই একটা কমফরট্যাবল লাইফ চান তাহলে বিজনেস শুরু না করাই ভালো।
২। আইডিয়া খুঁজে না বেরিয়ে প্রবলেম খুঁজে বার করুন যেটার আপনি সমাধান করতে পারবেন।
৩। কোনো রকম চাপ বা ঝুঁকি নিয়ে শুরু করা মানে বোকামি করা। ছোট থেকে শুরু করুন।
৪। শুরুতে অনলাইনে এডভার্টাইজিং এবং মার্কেটিং এর সাহায্য নিন।
৫। খুঁজে বার করুন কিভাবে আপনি আপনার কম্পিটিটরসদের থেকে বেটার ভ্যালু প্রভাইড করতে পারবেন।
৬। তাদেরকেই নিজের পার্টনার বানান যারা ঠিক আপনার মতই কাজটাকে প্রধানত ভালোবাসে।
সবশেষে আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ, লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ এই পোস্টটি যতগুলো শেয়ার হবে আমি বুঝবো ততজনকে আমি একটু হলেও সাহায্য করতে পেরেছি।
আরো পড়ুন- স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া ও মার্কেটিং কৌশল