স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করে নিজের মত করে দেখুন স্বপ্নাবেশ- বিজ্ঞান বলে একজন মানুষ সারাজীবনে গড়ে ৩৩ ভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। অর্থাৎ লাইফের ৩ ভাগের ১ ভাগ সময় আমরা ঘুমিয়ে কাটাই। তাহলে বুঝ স্বপ্ন আমাদের জীবনে কতবড় জায়গা নিয়ে আছে।
আজকের আলোচনা তোমার এই স্বপ্নকে নিয়েই। তোমার স্বপ্নসুখ, স্বপ্নব্যাখ্যা, স্বপ্নরাগ, স্বপ্নকান্না, স্বপ্নআনন্দ আর স্বপ্নদোষ নিয়ে। স্বপ্ন একটি মানসিক অবস্থা, যাতে তুমি ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন ঘটনা অবচেতনে অনুভব করো।
স্বপ্নবিজ্ঞানীদের মতে, ঘুমের যে পর্যায়ে চোখের মনি দ্রুত নড়াচড়া করে (Rapid Eye Movement) ঠিক ওই সময়ে তুমি স্বপ্ন দেখো। অনেকেই বলে থাকে, তারা কোন স্বপ্ন দেখে না বা অনেক আগে দেখত কিন্তু এখন দেখে না, আসলে তারা ডাহা মিথ্যে কথা বলে। কেননা, একজন মানুষ প্রতিদিনে ৩ থেকে ৫ বার স্বপ্ন দেখে। তবে ঘুম থেকে উঠে কেউ কেউ এই স্বপ্ন মনে রাখতে পারে। আবার কেউ একদমই পারে না।
যেমন- আমি নিজের চেষ্টায় স্বপ্ন মনে রাখা ভুলে যাই। কারণ আমার কাছে স্বপ্ন ঘুমের ডিস্টার্ব বলে মনে হয়। তাই আজকে স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণের তিনটি বিষয় আলোচনা করবো –
যার প্রথমটি হলো কিভাবে স্বপ্ন মনে রাখতে হয়?
দ্বিতীয়টি হলো কিভাবে নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখতে হয়?
তৃতীয়টি হলো কিভাবে স্বপ্নকে ভুলে যেতে হয়? বা স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ
কিভাবে স্বপ্ন মনে রাখতে হয়?
স্বপ্ন মনে রাখতে চাইলে ঘুমানোর আগে একটি খাতা ও কলম বালিশের পাশে রাখবে। মনে মনে ২০ বার বলবে, আজ আমি স্বপ্নে যা দেখব, তার সবটাই লিখে রাখব এবং সকালে সবটাই মনে রাখতে পারব। তারপর ঘুমিয়ে পড়। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যা দেখেছো তা লিখতে শুরু করো। যতটুকু মনে আছে, ততটুকু লিখতে শুরু করো। কিন্তু যদি একদমই মনে না থাকে, তবে নিজের মতো করে বানিয়ে বানিয়ে লিখো।
যেটা তুমি পছন্দ করো সেটাই বানিয়ে লিখো। তবে তিনটি বিষয় অবশ্যই লেখার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করবে। আর তা হলো স্বপ্নের শুরু, স্বপ্নের মধ্যবস্থা এবং স্বপ্নের শেষ অবস্থা। সেই সাথে থাকতে হবে পূর্ণাংগ ধারাবাহিকতা।
এখন তোমার প্রশ্ন হতে পারে- এগুলো করে কি হবে?
আসলে আমাদের মস্তিষ্কের সাবকনসাস মাইণ্ড বা অবচেতন মন বেশি চাপ নিতে চায় না বা অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু মনে রাখতে চায় না। মস্তিষ্ক যখন দেখবে, তুমি এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছো এবং খাতা কলমে লিখে রাখছো, কেবল তখন এই মস্তিষ্ক ওই বিষয়গুলো কিছু কিছু করে মনে রাখা শুরু করবে।
কিন্তু যখন দেখবে, তুমি যে স্বপ্নটা দেখোইনি, বানিয়ে বানিয়ে খাতায় লিখছো, তখন মস্তিষ্ক ভাববে, এতই যখন গুরুত্ব দিচ্ছো এবং উলটাপালটা লিখে আমাকে চাপ দিচ্ছো, তাহলে গতকাল যা দেখেছো তা পাই টু পাই স্মৃতিতে জমা রাখবো। ব্যাস মাত্র ৫ থেকে ৭ দিনের চেষ্টায় তুমি স্বপ্নকে মনে রাখা শিখে গেলে।
কিভাবে নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখতে হয়?
ভালো স্বপ্ন দেখার জন্য সারাদিন মন ভালো রাখো এবং ভালো ভালো স্মৃতি স্মরণ করো। ঘুমের আগে মনে মনে বলো – আজ আমি চিড়িয়াখানা যেতে চাই, আমি জানি আমার অবচেতন মন আমার কথা শুনে। সে অবশ্যই আমাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবে। এরপর যদি তুমি চিড়িয়াখানার স্বপ্ন দেখো, তাহলে ভালো, আর যদি না দেখো তাহলে এর আগে যে স্বপ্নটা লিখে রেখেছো, তার সাথে নিজের মতো করে চিড়িয়াখানা যুক্ত করে দাও।
এভাবে অবচেতন মনকে প্রতিদিন অল্প কিছু টাস্ক দিয়ে দাও। দেখবে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই তুমি, তোমার মতো করে অনেক সুন্দর ও মজার স্বপ্ন দেখছো।
কিভাবে দুঃস্বপ্ন ভুলে যেতে হয় – স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ
যারা আমার মতো দুঃস্বপ্ন বেশি দেখে, তাদের জন্য আমি বলতে চাই, এটা তেমন কোনো সিরিয়াস বিষয় না। তবে ঘুম ও মনের কিছুটা ক্ষতি করে। তাই দুঃস্বপ্ন বা অন্য কোনো স্বপ্ন যাতে তোমার কোনো সমস্যার সৃষ্টি না করে, এজন্য দুটি বিষয় করতে হবে-
প্রথমত, ঘুমানোর আগে যেভাবেই হোক নিজেকে দুঃচিন্তা মুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের চ্যানেলের অন্য ভিডিওটি তোমাকে যথেষ্ট সাহায্য করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে পড়ো। রাতে কি স্বপ্ন দেখছো না দেখছো, তা একদম ভাববে না। যতই মনে পড়ুক, পাত্তা দিবা না। অন্য কাজে মনকে ডাইভার্ট করবা। ভুলেও নিজের স্বপ্ন অন্যকে শেয়ার করবা না। এভাবে কয়েকদিন চর্চা করার পর তুমি যেহেতু স্বপ্নকে মনে রাখার চেষ্টা করছো না, সেহেতু মস্তিষ্কও স্বপ্নগুলোকে আর মনে করার চেষ্টা করবে না কিংবা মস্তিস্ক স্বপ্ন দেখেও তোমাকে বিন্দমাত্র জানাবেনা।
স্বপ্ন দেখা না দেখা ডিপেণ্ড করে আমাদের নিজের ওপরেই। তুমি চাইলেই সেটা মনে রাখতে পারো, আবার ভুলেও যেতে পারো। তবে স্বপ্নের কথা কাউকে বললে, বা বার বার স্মরণ করার চেষ্টা করলে এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়। এতে মূল্যবান কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে বা তুমি আনইজি ফিল করতে পারো।
তাই আমার মতে স্বপ্ন সুন্দর কিংবা অসুন্দর, যাই হোক না কেন ঘুম থেকে উঠার পর তা ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। যাই হোক, স্বপ্ন মনে রাখা ভালো না ভুলে যাওয়া শ্রেয়” এই বিষয়ে তোমার কি মতামত? আমাদের কমেন্ট করে জানাবে।
ভিডিওটি শেয়ারের মাধ্যমে তুমিও একটি মহৎ কাজে অংশ নিতে পারো। কেননা তোমার, আমার মতো এমন অনেকেই আছে, যারা স্বপ্নের এই বিষয়গুলো জানতে খুব আগ্রহী।
আরও জানুন- দুশ্চিন্তা দূর করার সহজ উপায়।