প্রকৃত বন্ধু চেনার

প্রকৃত বন্ধু চেনার উপায় জেনে স্বার্থপর বন্ধুকে বিদায় দিন

প্রকৃত বন্ধু চেনার উপায় জেনে স্বার্থপর বন্ধুকে বিদায় দিনহেলেন কেলার বলেছেন- অন্ধকারে একজন বন্ধুর সঙ্গে হাঁটা আলোতে একা হাঁটার চেয়ে ভালো। কিন্তু বন্ধু নির্বাচন সঠিক না হলে জীবনটাই অন্ধকারে চলে যাবে।

বন্ধুর মতো বন্ধু হলে আজীবন সে সম্পর্ক টিকে থাকে। কিন্তু প্রিয় বন্ধুটির মধ্যে অপ্রত্যাশিত কিছু আচরণ লক্ষ করলে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে বিদায় জানানো ভালো। কী ধরনের বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে না রেখে ইতি টানাটাই আপনার জন্য শ্রেয় হবে, তা নিয়েই আজকের আয়োজন।

No-1: ভুলো মনের আড়ালে অবহেলা

বার বার অবহেলা করছে, আর শত ব্যস্ততা দেখাচ্ছে! কিন্তু সপ্তাহে ১ বারও ফোন/মেসেজ দিচ্ছে না যখনই আপনি তাঁকে ফোন দিচ্ছেন, ব্যস্ততার কথা বলে আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। বন্ধুকে মেসেজ পাঠানোর এক সপ্তাহ পর জবাব মিলছে! কিংবা মেসেঞ্জারে মেসেজ সিন করছে না অনেক দিন ধরে।

ভালো বন্ধু অবহেলা করেনা

আবার আপনার নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর পরও আপনাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসছেন না! দুজন মিলে কোনো কাজ করার পরিকল্পনা করলেও শেষ মুহূর্তে পিঠটান দিচ্ছেন বন্ধুটি! এসব বিষয় লক্ষ করলে আপনাকে ধরে নিতে হবে, আপনার ওপর থেকে বন্ধুটির শ্রদ্ধা উঠে গেছে। এমন বন্ধুত্ব ধরে রাখার কোনো মানে নেই।

No-2: প্রতিযোগী মনোভাব

স্কুলে আপনার কাছের বন্ধুটিই হয়তো পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আপনার অগোচরে নানা পন্থা অবলম্বন করত। আপনি তা বুঝেও চুপচাপ থাকতেন। পড়ালেখার গণ্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনেও আপনারা বন্ধুত্ব ধরে রেখেছেন। দুজনই যার যার মতো করে ঘর-সংসার করছেন।

খারাপ বন্ধু চেনার উপায়

এ অবস্থায় আপনার সন্তানের সঙ্গে যদি ওই বন্ধুটি তাঁর সন্তানের তুলনা শুরু করেন, তাহলে বুঝতে হবে কোথাও কোনো একটা গোলমাল হচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ধরে নিতে পারেন, আপনাকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন আপনার ওই বন্ধু। দুজন বন্ধুর মধ্যে প্রতিযোগিতা মোটেও খারাপ কিছু নয়।

বিষয়টি দুজনকেই জীবনের পথে সামনে এগিয়ে যেতে উত্সাহ জোগায়। কিন্তু যদি বুঝতে পারেন আপনার সঙ্গে বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছেন আপনার বন্ধুটি, তাহলে সেই সম্পর্ককে আজই বিদায় জানিয়ে দিন।

No-3: কথা দিয়ে কথা না রাখা

দুজন মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় হলে যেকোনো উপায়ে বন্ধুকে দেওয়া কথা রাখার চেষ্টা করেন দুজনই। কিন্তু আপনার প্রিয় বন্ধুটি কি প্রায়ই কথা দিয়ে কথা রাখছেন না! শুনতে কষ্ট লাগলেও সত্যটা হলো, বন্ধুটির কাছে আপনি আপনার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছেন।

নকল বন্ধুকে কথা দিয়ে কথা রাখে না

তার পরও যদি বন্ধুত্বটা আপনি ধরে রাখেন, তাহলে ধীরে ধীরে তা আপনার আত্মবিশ্বাসে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করতে পারে। এ অবস্থায় ওই বন্ধুকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে বেছে নিন, যিনি আপনাকে গুরুত্ব দেবে, আপনার পেছনে সময় ব্যয় করবে। যার কথার কোন মুল্য নেই সে কেমন মানুষ হতে পারে আপনি নিজেই একবার ভাবুন।

No-4: তাচ্ছিল্য

বন্ধু নির্বাচন করবেন কিভাবে? প্রকৃত বন্ধু চেনার জন্য বেশি কষ্ট করা লাগবে না। মূল্যায়ন করা থেকে বুঝে যাবেন। আপনি শত চেষ্টা করেও বন্ধুটির মন রক্ষা করতে পারছেন না! আপনার ব্যর্থতা, সামর্থ্য, চেহারা, ভুল নিয়ে কথা শুনতে হচ্ছে প্রিয় বন্ধুটির কাছ থেকে! আবার অন্যদের সামনেও সেটা নিয়ে মজা করছে।

বন্ধু নির্বাচন করবেন কিভাবে

মজা সে করতেই পারে, কিন্তু আপনি যেগুলো শুনতে পছন্দ করেন না তা সে জানার পরেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মজা করছে! তবুও আপনি শুনে যচ্ছেন, এতে করে কাজের কাজ কিছুই হবে না। কেবল আপনার ওই বন্ধুটির দম্ভ বাড়বে। আর আপনি ভুগতে থাকবেন অনিশ্চয়তায় আর হতাশায়। এমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাটাই কি ঢের ভালো না!

No-5: অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ

বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু থেকে সাবধান। কথায় বলে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসত্ সঙ্গে সর্বনাশ’। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সব সময় এই প্রবাদটি মেনে চলতে হবে। যদি দেখেন আপনার বন্ধুটি মজা করার কথা বলে আপনাকে আজেবাজে কাজে উত্সাহিত করার চেষ্টা করছেন, আপনি সিগারেট খান না তবুও জ্বোর করে আপনাকে খাওয়াচ্ছে তবে যত দ্রুত সম্ভব তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করুন।

বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু থেকে সাবধান

নইলে তাঁর এলোমেলো জীবন আপনার জীবনকেও এলোমেলো করে দিতে পারে। একসঙ্গে পথ চললে খুব সহজেই একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। উচ্ছৃঙ্খল বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্বের ইতি না টানলে একদিন হয়তো আপনিও উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন।

কাজেই এ ধরনের বন্ধুকে দ্রুত বিদায় জানানোটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। একটা কথা মাথায় রাখবেন কেউ যদি আপনাকে সত্যি ভাল বন্ধু হিসেবে ভাবে তবে আপনার মঙ্গল কামনা সে করবে।

সে শত খারাপ কাজ করলেও আপনাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। আমার এরকম একটা বন্ধু আছে যে দিনে দশটা সিগারেট খাবে, গাঞ্জা টানবে কিন্তু আমাকে সে খেতে দিবে না, বরং বলে আমিতো এটাতে ফেসে গিয়ে শরীর আর টাকা শেষ করে ফেলেছি। আমি জেনে শুনে তোকে তা করতে দিব না। এজন্য শত খারাপ অভ্যাসের কারণেও আমি তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারি না। তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

No-6: সামাজিক ওয়েবসাইটে আসক্তি

আপনার বন্ধুটি কি ফেসবুক, টুইটার কিংবা এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ওয়েবসাইটে মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত! আপনার চেয়ে ভারচুয়াল বন্ধুদেরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি! এ অবস্থা হলে সমস্যাটা বেশ গুরুতর। আপনাকে বুঝতে হবে, বন্ধুত্বের ইতি টানার সময় এসে গেছে।

শত্রু চেনার উপায়

ফেসবুক কিংবা টুইটারে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার চেয়ে সামনা-সামনি আড্ডা দেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। সত্যিকারের বন্ধু চিরকাল আপনার সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবে। কিন্তু অসংখ্য ভারচুয়াল বন্ধু আপনাকে মুহূর্তের মধ্যে ছেড়ে চলে যেতে পারে। এটাই বাস্তবতা।

যদি দেখেন সে রিলেসনে গেলে আপনাকে অবহেলা করতে শুরু করে আবার ঝগড়া হলে আপনার কাছে ফিরে আসে আবার রিলেশন ঠিক হলে আপনাকে ভুলে যায় তাহলে বুঝে নিবেন সে তার একাকী সময়টায় আপনাকে ব্যবহার করছে শুধু। এরকম বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল।

No-7: কথার মূল্য না দেয়া

বন্ধুত্ব ও স্বার্থপরতা পার্থক্য কি? আপনি বকবক করেই যাচ্ছেন আর সে কোন রেস্পন্স না করে অন্য কাজে মন দিচ্ছে বা নিজের কথাই শুধু বলতেছে। আপনার ভাল-মন্দ কোন কথাতেই সে জবাব দেয় না কিংবা সমাধান দেয় না, শুধু শোনার ভ্যান করছে কিন্তু মন অন্যদিকে।

বন্ধুত্ব ও স্বার্থপরতা

এরকমটা প্রায় লক্ষ্য করছেন তাহলে বুঝে নেন সে আপনার প্রতি ইন্টারেস্ট না, কোন না কোন সবার্থে সে আপনার সাথে তাল মিলান বন্ধু করতেছে। আবার আপনি একটা সিক্রেট কথা তাকে বললেন কিন্তু সে সেটা অন্যকে বলে দিচ্ছে তাহলে আর দেরি না করে তাকে মন থেকে আজি ব্লক করে দিন, মেলামেশা বাদ দিয়ে দিন। নইলে একদিন সে কালসাপ হয়ে দাঁড়াবে।

No-8: ছাড় দেয়া

প্রকৃত বন্ধু চেনার সবচেয়ে ভাল উপায় হল ছাড় দেয়া। আপনি সবসময় তাকে ছাড় দিচ্ছেন। একই জিনিস একসাথে পছন্দ করেছেন আর আপনি তাকে খুসিমনে দিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সে ছাড় দিতে রাজি নয় আবার ভুল করলেও ভুল স্বীকার করছে না কিন্তু আপনি বারবার ছাড় দিয়েই যাচ্ছেন।

এতে সে মাথায় উঠে যাবে আর সুযোগ পেলে বড় কোন ক্ষতি সে করে বসবে আপনার। তাই সাবধান হোন এরকম বন্ধু থেকে।

No-9: কিপ্টামি করা

হোটেলে কিংবা ভ্রমণে আপনি টাকা বার করছেন আর সে বেহায়ার মত চুপ করে থাকছে কিন্তু নিজের প্রয়োজনে বা বান্ধবি কিংবা গার্লফ্রেন্ডের সামনে ঠিকি টাকা বের করছে। আপনি তাকে ৩দিন খাওয়ালে মিনিমাম ১দিন তো আপনাকে খাওয়াতে পারে। তাহলে বুঝুন এরকম বন্ধু আপনাকে ক্রেডিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। তার সাথে বন্ধুত্ব রাখবেন কিনা ভেবে দেখেন।

No-10: বিপদে পাশে থাকা

প্লেটো বলেছেন- বন্ধুদের মধ্যে সবকিছুতেই একতা থাকে। আর বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। বিপদে আপদে আপনি বন্ধুর পাশে থাকছেন কিন্তু বন্ধু যদি বিপদে আপনাকে পিঠ প্রদর্শন করে তাহলে এক সেকেন্ড দেরি না করে সরে পড়ুন তার থেকে। আর যদি এই বন্ধু নিয়েই আপনি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আপনি হয়তো ঠিকি একদিন নিজে থেকে বুঝে যাবেন। আর সেদিন হয়তো কিছু কষ্ট হবে আপনার সাথি।

বন্ধু নির্বাচনে বিভিন্ন ধর্ম যেমন সর্তক করে দিয়েছেন তেমনি বিভিন্ন কবি-লেখক আর মনিষীরাও বলে গেছেন। তাই জীবন সুখের করতে হলে বন্ধু নির্বাচনে আপনাকে সতর্ক হতেই হবে। আর নিজে বন্ধুর সাথে এমন আচরন করবেন যেমনটা আপনি অন্যের কাছে আশা করেন। তাহলে আপনি ভাল বন্ধু পেয়ে যাবেন।

আমাদের আশেপাশে অনেক ভাল বন্ধু আছে, দরকার শুধু তাদের চিনতে পারা আর নিজেকেও অন্যের বন্ধু হিসেবে যোগ্য করে তুলতে হবে। আর দশটা বন্ধুর চেয়ে একটি ভাল বন্ধুই যথেষ্ট ভাল থাকার জন্য।

তো কেমন লাগল আজকের এই লেখাটি? বন্ধু নিয়ে আপনার ধারণা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আর শেয়ার করে আপনার সুবিধাবাদি বন্ধুদের জানিয়ে দিন যে আপনি আর ভোলা নয়, আপনি আর ঠকবেন না সরল মনে। ভাল থাকুক বন্ধুতের সম্পর্কগুলো।

আরো পড়ুন- ভাল বন্ধু হওয়ার উপায় জেনে নিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *