মন ভালো করার উপায়

মন ভালো করার উপায় – ভালো থাকার উপায় | How To Be Happy

মন ভালো করার উপায় – ভালো থাকার উপায়: একটা পারফেক্ট ফিগার, একটা পারফেক্ট পারসোনালিটি, একটা পারফেক্ট জব, একটা পারফেক্ট লাইফ পার্টনার বা এক কথায় বললে একটা পারফেক্ট লাইফ তৈরি করার বৃথা চেষ্টা করতে করতে যদি আপনি অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন তাহলে বৃণী ব্রাউন এর লেখা ‘দ্য গিফটস অফ ইমপারফেকশন’ বইটি আপনার জন্য।

কারণ এই বইতে বৃণী ব্রাউন আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে সবকিছুতে পারফেক্ট থাকার র‍্যাপরেস থেকে বেড়িয়ে এসে এই মহুর্তে আপনি ঠিক যেমন তেমনটাকেই মন থেকে আনন্দের সাথে মেনে নিয়ে কিভাবে নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করবেন। আর তিনি এই বইতে যা বলেছেন তা আমার কাছে মনে হয়েছে ‘মন মানসিকতা ভালো রাখার একটা পারফেক্ট ও কার্যকরী উপায়।’

আমরা মনে করি, যত বেশি আমাদের ইমপারফেকশন অর্থাৎ ক্ষুৎগুলোকে অন্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবো তত বেশি আমরা জীবনে খুশী থাকতে পারবো। কিন্তু ইউএস এ তে কয়েক হাজার লোকের উপর রিসার্চ কনডাক্ট করার পর অথর ব্রীণি ব্রাউন এই মন্তব্যে আসেন যে ‘যারা নিজেদের ক্ষুতগুলোকে লুকানোর বদলে বরং সেগুলোকে আপনভাবে মেনে নেন তারাই জীবনে বেশি খুশী থাকেন।’

মন ভালো করার কার্যকরী উপায়

তো কিভাবে নিজেদের ইমপারফেকশনগুলোকে এজ এ গিফট খোলামেলাভাবে আপন করে নিতে হয় এবং হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কি সেটাই এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। তো চলুন শুরু করা যাক –

স্মার্ট আইডিয়া ১: Be Authentic to yourself

হয়তো আপনার মাথায় পড়াশোনার জিনিস কিছুতেই ঢোকেনা। হ্যা, তবে গান গাওয়াতে আপনি ভীষণই পারদর্শী। কিন্তু আপনার মা বাবার মতে ‘পড়াশোনায় যে ভালো সেই একমাত্র ভালো।’ ওসব গান গাওয়াতে ভালো হওয়া কোনো কাজের না। তাই মা বাবা ও সমাজের চোখে ভালো হয়ে ওঠার জন্য আপনি কোকিল থেকে তোতাপাখি হয়ে ওঠার বৃথা চেষ্টা করে পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিতে শুরু করলেন। কি মনে হয় আপনি নিজের জীবনে কখনো খুশী থাকতে পারবেন?

আমার পড়াশোনা মাথায় ঢোকেনা, আমি জোর করে চেষ্টা করলেও পড়া মুখস্ত করতে পারিনা। নিজের এই ইমপারফেকশন এর কথা মন খুলে নিজের মা বাবা ও এই সমাজকে বলতে পারার জন্য আপনার অনেকখানি সাহস থাকা দরকার। আর এই সাহসটা আপনার মধ্যে তখনই আসা সম্ভব যখন আপনি এই সত্যিটা বুঝতে পারবেন ‘যে আপনি একা নন যে হাজার চেষ্টা করলেও গাতিয়ে পড়া মুখস্ত করতে পারেনা।’ এরকম লক্ষ লক্ষ কোকিল রয়েছে যারা গান গাওয়ার জন্য জন্মেছে। আর একইভাবে এরকম লক্ষ লক্ষ তোতাপাখিও রয়েছে যারা কেবল মুখস্ত করার জন্য জন্মেছে।

এবার যদি কেউ মনে করে তোতা পাখি হওয়া বেশি ভালো বা কোকিল হওয়া বেশি ভালো তাহলে সেটা তার সমস্যা। তাই বলে কোকিল হয়ে তোতাপাখির মতো জীবন কাটানোর চেষ্টা করা অথবা তোতাপাখি হয়ে কোকিল এর মত জীবন কাঁটানোর চেষ্টা করা ‘দুটোই’ করা ভুল। তাই খুশী থাকতে হলে নিজের অথিনটিসিটি সব সময় আপনাকে ধরে রাখতে হবে।

স্মার্ট আইডিয়া ২: Perfection is an illusion

আপনার মতে কেউ ১০ কোটি টাকার মালিক মানে সে বিশাল ধনী। মুকেশ আম্বানীর কাছে কেউ মাত্র ১০ কোটি টাকার মালিক মানে সে ভীষণই গরীব। তাহলে সঠিক কে? আজকে যে মানুষটাকে আপনার পারফেক্ট লাইফ পার্টনার বলে মনে হচ্ছে, কালকে সেই মানুষটার সাথেই হয়তো ঝামেলা হলে ইমপারফেক্ট বলে মনে হতে শুরু করবে। তাহলে কোনটা ঠিক?

আজকে আপনার কাছে পারফেক্ট লাইফ বলে যে ছবিটা ভেসে ওঠে, কাল যদি সে পারফেক্ট লাইফটাই আপনি পেয়ে যান তবে পরশু থেকে হয়তো সে পারফেক্ট লাইফটাও কোনো কারণে ইমপারফেক্ট বলে মনে হতে শুরু করবে।

তো যখন এটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, যে পারফেক্ট জিনিসটা পুরো ব্যাপারটাই একটা ইলুশন, একটা মায়ার জাল তাহলে সারা জীবন সবকিছু পারফেক্ট করে তোলার এই র‍্যাপ ট্রেসে পাগলের মতো নিরন্তর ছুটে চলার কি মানে। তাহলে কী সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে নিজেকে পারফেক্ট করে তোলার চেষ্টা করাই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কখনোই না। যেটা দরকার সেটা হলো শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গিটাকে বদলানোর।

আমাদের এখন দৃষ্টিভঙ্গি হলো ‘আমার ইমপারফেক্ট লাইফটাকে কিভাবে আমি পারফেক্ট করে তুলবো।’ এটার বদলে করতে হবে ‘আমার গুড লাইফটাকে কিভাবে আমি বেটার লাইফ করবো?’ অর্থাৎ এই মহুর্তে যেটা আছে, যেটুকু আছে সেটুকুই যথেষ্ট (গুড এনাফ)। তাই সেটুকুতেই আমি খুশী। আর সেই খুশীটাকেই আমি এক্সপ্রেস করছি আরো বেটার হয়ে ওঠার চেষ্টা করার মধ্য দিয়ে। নট লাইকলি, এখন যেটুকু আছে তাতে আমি দুঃখী। আর তাই খুশী হতে পারার জন্য পারফেক্ট হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কারণ সেটা করলে সেই র‍্যাপ ট্রেসে গিয়েই ফাসতে হবে।

স্মার্ট আইডিয়া ৩: Trust your intuition to make better decisions

আপনার সাথে এরকম কত বার হয়েছে আপনার মন যেটা বলছে সেটার পিছনে কোনো কারণ নেই ভেবে আপনি আপনার মনের কথা অগ্রাহ্য করে ঠিক উলটো কাজটা করেছেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে যে আপনার মনই সঠিক ছিল। তো ওরকম কেন হয়?

আমরা মনে করি মন যেটা চায় সেটার পিছনে অনেক সময় কোনো লজিক থাকে না। কিন্তু আসল সত্যিটা হলো মন যেটা চায় অর্থাৎ সাবকনসিয়াস মাইণ্ড যেটা বলে সেটার পিছনে এতটাই জটিল লজিক থাকে যে সেটা সেই মহুর্তে আমাদের কনসিয়াস মাইন্ড এর দ্বারা উপলদ্ধি করতে পারাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তাই সেটাকে ইললজিক্যাল বলে আমরা অনেক সময় ইগনোর করার ভুলটা করে বসি। আসলে আপনি যখন কোনো ডিসিশন নেন তখন আপনার ব্রেন আপনার মেমরিতে এই রিলেটেড যা যা ইনফরমেশন অলরেডি স্টোরড আছে সেগুলোকে কমপাইল্ড করে একটা রেজাল্ট বের করে।

আর আমাদের সাবকনসিয়াস মাইণ্ড এতটাই পাওয়ারফুল যে চোখের নিমিষেই এই পুরো প্রসেসটাকে কম্পিলিট করে রেজাল্ট বার করে। কাজটা এত দ্রুত হওয়ায় আমরা সহজে তার পিছনে সেই লজিকটা বুঝে উঠতে পারি না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সেটাই সঠিক বেরোয়। যেমন ধরুন, একজন ফুটবলার যখন ফ্রি কিক নিচ্ছে, তখন ঠিক কতটা অ্যাঙ্গেলে, কতটা পাওয়ারে তার বলটাকে হিট করা উচিত সেটা যদি সে লজিক দিয়ে কনসিয়াস মাইন্ড এর দ্বারা ম্যাথ ও ফিজিক্স খাটিয়ে বার করে তারপর ফ্রি কিকটা নিতে যায়। তাহলে ততক্ষণে রেফারির বাশি বেজে খেলা শেষও হয়ে যাবে। আর এই একই ক্যালকুলেশনটা সাবকনসিয়াস মাইণ্ড কয়েক মহুর্তের মধ্যে করে রেজাল্ট বার করে দেয়।

আর সেই মত ফ্রি কিক করে বলার গোলও করে ফেলেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার মন কি বলছে সেটাকে একেবারেই ইললজিক্যাল বলে উড়িয়ে না দিয়ে সেটাকে বরং বেশি গুরুত্ব দিয়ে আপনার কনসিডার করা উচিত। এটাই একটা পারফেক্ট ‘মন মানসিকতা ভালো রাখার উপায়।’

স্মার্ট আইডিয়া ৪: Stop comparing yourself with others

আপনি কি বিলগেটস এর সাথে কখনো নিজেকে তুলনা করেন। করেন না। তাহলে কার সাথে করেন। আপনার পাশের বাড়ির বন্ধু বিল্লুর সাথে হয়তো সবকিছুতে নিজেকে কম্পেয়ার করেন। কেন? কারণ বিল্লু আর আপনি অনেকখানি সিমিলার। তো কমপ্যারিজন জিনিসটা তখনই মিনিংফুল হয় যখন দুজন সিমিলার কারো মধ্যে কমপ্যারিজন করা হয়। মানে যে দুজনকে কম্পেয়ার করা হচ্ছে তাদের মধ্যে যত বেশি সিমিলারিটি থাকবে সেই কমপ্যারিজন তত বেশি মিনিংফুল হবে।

এবার একটু ভেবে দেখলেই এটা আপনি পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে বিল্লুর সাথে আপনার যে কয়টা দিকে সিমিলারিটি আছে তার থেকে অনেক বেশি দিকে পার্থক্য আছে। তাই বিলগেটস এর সাথে আপনার কমপ্যারিজনটা যেমন মিনিংলেস একইভাবে বিল্লুর সাথেও আপনার কমপ্যারিজনটা একটু কম মিনিংলেস হলেও আল্টিমেটলি সেই মিনিংলেসই বলা চলে। কারণ আপনার আর আপনার পাশের বাড়ির বিল্লুর মধ্যে সিমিলারিটির থেকে ডিফারেন্স অনেক অনেক বেশি।

এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ ইউনিক। আর এটাই এই পৃথিবীর সৌন্দর্য্য। তাই অথরের মতে, নিজেকে অন্যের সাথে কম্পেয়ার করা সম্পুর্ণ মিনিংলেস একটা কাজ। যদি কম্পেয়ার না করলে আপনার পেটের ভাত হজম না হয় তাহলে সব থেকে বেস্ট অপশন গতকালের নিজের সঙ্গে আজকের নিজেকে কম্পেয়ার করুন। কারণ এই দুজন মানুষের মধ্যেই সিমিলারিটি সব থেকে বেশি।

তাই এই দুজন মানুষের মধ্যে কম্প্যারিজনটাই একমাত্র সব থেকে কম মিনিংলেস বা অন্যভাবে বললে সব থেকে বেশি মিনিংফুল বলা চলে। এই বইটিতে অথর ব্রীণি ব্রাউন আমাদের আরো অনেক ভুল ভেঙে ফেলতে সাহায্য করেছেন। যেমন এই বইতে আরো তিনি বলেছেন যে কেন লাইফে মিনিংফুল কাজ যেমন অফিসের কাজ, বিজনেসের কাজ এগুলো করা যতটা দরকার ঠিক সমানভাবে যেগুলোকে আমরা মিনিংলেস কাজ বলে ইগনোর করি যেমন রেস্ট নেওয়া, খেলাধুলা করা, গল্প করা এগুলোও করাটা দরকার। বা আজকের দিনে সবার সামনে মন খুলে হাসা বা গলা ছেড়ে গান গাওয়া বা প্রাণ খুলে নাচ করা এগুলোকে যে আমরা আনকুল বলে ইগনোর করার চেষ্টা করি সেটা কেন অনেক বড় একটা ভুল।

এরকমই সারা বইতে অথর আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে যেগুলোকে আমরা আমাদের ইমপারফেকশন বলে আফসোস করি সেগুলো আসলে গিফটস। যেমন এই বইতে এক জায়গায় অথর বলেছেন “The Dark Does Not Destroy The Light It Defines It. It’s Our Fear Of The Dark That Casts Our Joy Into The Shadows.”

অর্থাৎ অন্ধকার আলোকে ধ্বংস করে না, বরং সেটার অস্তিত্বকে বুঝতে সাহায্য করে। এটা আমাদের অন্ধকারের প্রতি ভয় যে আমাদের আনন্দকে ছায়ার সঙ্গে সীমাবদ্ধ করে তোলে। তাই নিজেকে ভালোবাসুন, অপরকে ভালোবাস্তে শিখুন।

মন ভালো রাখার জন্য ভিডিওটি দেখুন-

হাসি-খুশি মনের টিপস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *