চোখের কালো দাগ কিভাবে দূর করা যায় ঘরোয়া উপায়ে: চোখের তলায় দাগ পরলে সেটা ঠিক কতটা আমাদের সৌন্দর্যের উপর ইফেক্ট ফেলে তা এই নিজেকে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়। তাই যদি আপনিও এই একই সমস্যায় ভুগছেন তাহলে আজকের লেখাটি শেষ অব্দি পড়তে থাকুন। কারণ আজ এই লেখাতে আমি সহজ উপায়ে ঘরোয়া কিছু টিপস শেয়ার করব। যেগুলো নিয়মিত ইউজ করলে খুব সহজেই আপনার চোখের তলার দাগ বা স্পট দুর হতে পারে। তো চলুন শুরু করা যাক-
দাগ স্পটের মূল কারণগুলো হলো:
১. হাইপার পিগমেন্টেশন: অর্থাৎ স্কিনে মেলানিন এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। ২. অতিরিক্ত স্ট্রেস।
৩. ঘুমের অভাব।
৪. অতিরিক্ত চোখ ডলা।
ঘরোয়া উপায় ১: কোল্ড কিউকামবার বা ঠাণ্ডা শসা
প্রথমে আপনাকে গোল করে কাঁটা দুটো শসার টুকরো নিতে হবে। তারপর সেটাকে ৩০ মিনিটের জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ৩০ মিনিট পর ওই টুকরো দুটোকে বের করে রাতে ঘুমানোর আগে ১০ মিনিট চোখের পাতার উপর রেখে দিতে হবে। ফাইনালি ১০ মিনিট পর পরিষ্কার ঠান্ডা জলে চোখ দুটো ধুয়ে ফেলতে হবে।
পরদিন সকালে উঠেই আপনি অনুভব করতে পারবেন আপনার চোখটা কতটা ফ্রেশ লাগছে। কারণ শসার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে। পাশাপাশি এতে ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে ও রয়েছে। যেটা চোখের নিচের দাগ স্কিন স্পটগুলোকে কমায়। আর স্কিনটাকে আরো ব্রাইট এবং পরিষ্কার করে তোলে। তাই রাতে শোয়ার আগে অবশ্যই এই রেমেডিটা ইউজ করুন।
ঘরোয়া উপায় ২: অ্যান্টি অ্যাজিং আই ক্রিম
খুব সহজেই এই ক্রিমটা ঘরোয়া উপায়ে বানিয়ে ইউজ করা যায়। আর এটা ইউজ করলে চোখের নিচের দাগের সাথে সাথে রিংকেলসও রিমুভ হবে। প্রথমে এক চামুচ এলোভেরা জল নিন। তাতে আধা চামুচ এর কম পেট্রোলিয়া জেলি বা ভ্যাসলিন দিয়ে এতে ৪/৫ ভাগ নারকেল তেল মেশান। এরপর দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল নিয়ে তার মধ্যে যে তেল মতো জিনিসটা থাকে সেটা বার করে মিক্সারটা মিশিয়ে নিন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল যে কোনো ঔষুধের দোকানে পাওয়া যায়। তাও যদি সমস্যা হয় তাহলে আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের জায়গায় গ্লিসারিনও ব্যবহার করতে পারেন। এবার মিক্সারটাকে ভালো করে মিশিয়ে সেটা একটা পরিষ্কার কনটেইনারে ৭-১০ দিন রাখুন।
১০ দিন পর এই ক্রিমটাকে রাতে শোয়ার আগে চোখের তলায়, চোখের উপরে পরিষ্কার হাতে হালকাভাবে ক্লকওয়াইজ এবং এন্টি ক্লকওয়াইজ ম্যাসাজ করুন। এর মধ্যে যে অ্যালোভেরা জেল আছে সেটা চোখের কাছে যে সেনসিটিভ স্কিন সেটাকে হাইড্রেটেট এবং ময়েশ্চারাইজ করে। আর এটার মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণও রয়েছে।
এর মধ্যে ভ্যাসলিন রয়েছে যেটা চোখের কাছে ড্রাই স্কিনগুলোকে হাইড্রেটেট রাখে। আর ড্রাই স্কিন এর ফলে যে রিংকেলস হয় সেগুলোকেও রিমুভ করে। এতে যে কোকোনাট অয়েল রয়েছে তাতে ভিটামিন ও ফ্যাটি এসিড আছে। যেটা হেলদি স্কিন সেলসগুলোর জন্য খুবই উপকারী। এতে যে ভিটামিন ই অয়েল রয়েছে সেটা চোখের আশেপাশের স্কিনটাতে যেসব ক্ষতিকারক ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয় সেগুলো থেকে বাঁচায় আর ডার্ক স্পটও রিমুভ করে।
তাই পারলে এই ইকুয়েপমেন্টটাকে প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে লাগান। ঘুম থেকে উঠে নরমাল পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এরপর দেখবেন আপনার স্কিন ব্রাইটও লাগছে, আর আপনার ডার্ক স্পটস, রিংকেলস সেগুলোও কমতে থাকছে।
ঘরোয়া উপায় ৩: কিউ কাম্বার জুস ও রোজ ওয়াটার
প্রথম হাফ ইঞ্চি মতো শসা নিন। তারপর সেটাকে ভালোভাবে কুড়িয়ে সেটা থেকে রস বার করে নিন। এরপর ওই শসার রস এর মধ্যে এক-চামচ রোজ (গোলাপ) ওয়াটার মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিক্সারটাকে তুলোর সাহায্যে চোখের নিচের স্কিনে লাগিয়ে নিন।
প্রায় ১৫ মিনিটের পর নরমাল জলে ধুয়ে ফেলুন। আর এটা সপ্তাহে দুদিন ইউজ করলেই যথেষ্ট। রোজ ওয়াটার স্কিন টোনার হিসেবে খুবই উপকারী। আর এটা স্কিনকে ব্রাইটও করে তোলে।
ঘরোয়া উপায় ৪: টমেটো
একটা টমেটো নিয়ে সেটাকে কুড়িয়ে তার থেকে এক চামচ পরিমাণ রস বের করে নিন। এরপর এটার মধ্যে এক চামচ পরিমাণ লেবুর রস মেশান।
তারপর সেটাকে চোখের নিচে, চোখের পাতার উপর হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। তারপর ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। আপনি এটা সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করতে পারেন। চোখের কালো দাগ দূর করতে এটি অনেক সহজ উপায়।
ঘরোয়া উপায় ৫: মধু
রাতে প্রতিদিন শোয়ার আগে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর অল্প কিছুটা মধু নিয়ে চোখের তলায় আর তারপর ডার্ক স্পটগুলোর উপর হাল্কা করে লাগান। মধুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুন রয়েছে।
আর এটা একটা ব্লিচিং এজেন্টেও। যার ফলে ডার্ক স্পটগুলো ফেড হতে থাকে। আর রিংকেলস বা চোখের তলাটা যে ফুলে থাকে যেটাকে পাফিনেস বলে সেটাকেও কমাতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া উপায় ৬: আমন্ড ওয়েল বা বাদাম তেল
রোজ রাতে শোয়ার আগে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তারপর আঙ্গুলে করে আমন্ড ওয়েল নিয়ে আস্তে আস্তে চোখের তলায়, চোখের উপরে লাগান। এরপর ক্লকওয়াইজ ও অ্যান্টিক্লকওয়াইজ ম্যাসাজ করুন।
আমন্ড অয়েল এ ভিটামিন কে রয়েছে যেটা স্কিনকে ব্রাইট আর হেলদি বানাতে সাহায্য করে। আর এটাতে ভিটামিন ই ও রয়েছে যেটা ডার্র স্পটগুলোকে রিমুভ করতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া উপায় ৭: ইয়োগা এবং মেডিটেশন
প্রচণ্ড স্ট্রেশ, ডিপ্রশন আর অস্বাস্থ্যকরভাবে জীবন যাপন করার ফলে চোখের তলায় কালি পড়তে পারে। আর চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। যদি আপনি আপনার মনকে শান্ত আর ঠান্ডা না রাখতে পারেন তাহলে কোন রকম হোম রেমেডিই কাজ করবে না। তাই মন কে ঠান্ডা আর শান্ত রাখার জন্য প্রতিদিন মেডিটেশন বা ইয়োগা করা অবশ্যই এক্ষেত্রে অত্যন্ত ভালো একটা হোম রেমেডি।
সবশেষে আপনার জন্য স্পেশাল ৫টি টিপস যেগুলো যদি আপনি সব সময় ফলো করে চলতে পারেন তাহলে আপনাকে চোখের তলায় কালি পরা নিয়ে আর কোনদিন ভাবতেও হবে না। চোখের কালো দাগ দূর করতে আরও কিছু টিপস-
- কখনো চোখ বেশি ডলবেন না বা রাব করবেন না
- মুখে মেকআপ থাকলে সেটাকে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে তারপর ঘুমাবেন
- অ্যালকোহল বা সিগারেট জাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকুন
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
- দিনের বেলা যখনই রোদে বাইরে যাবেন তখন সানগ্লাস ইউজ করুন। কারণ আমাদের আমাদের চোখের স্কিন ভীষণই নরম আর সেনসিটিভ হয়। তাই সরাসরি সূর্যের আলো চোখে যতটা না পড়ে ততই ভালো।
সবশেষে, আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ যদি আপনি এই লেখাটি পড়ে নিজে কোন সাহায্য পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই লেখাটি আপনার প্রিয়জন বা আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। কমেন্ট করে আমাকে অনুপ্ররণা দিবেন।
আরো পড়ুন- সন্তান লালন পালনে প্যারেন্টিং টিপস