দাঁতের যত্নে করনীয় ৫টি ঘরোয়া টিপস: জীবনে নিজের সৌন্দর্য, নিজের স্মার্টনেস আর নিজের উপর কনফিডেন্স ধরে রাখাটা আমাদের সবার নিজেদেরই দায়িত্ব। আর নিজেকে পুরোপুরি ঠিকঠাক রাখতে পারাটাও নিজেরই ক্রেডিট। সেরকমই আজকাল অনেকেরই দাঁত হয়ে যাওয়াতে তাদের সৌন্দর্য আর কনফিডেন্স এর উপর নেগেটিভ ইম্পপ্যাক্ট হচ্ছে। এই সমস্যার জন্য অনেকেই আমরা বাইরে মুখ খুলে হাসতে পারি না। হাসলে মুখ চেপে হাসি। এছাড়া কর্মক্ষেত্রেও সবার সাথে কথা বলার সময় সঙ্কজ বোধ করি।
এছাড়া অনেক সময় আমাদের মুখে দুর্গন্ধও তৈরি হয়। আর এই সবকিছু আমাদের জন্য বেশ বড় রকমের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যখন আমরা কোনো জব ইন্টারভিউ দিতে যাই বা কারো সাথে হয়ত ডেটিং এ বেরোই। এটা নিজেরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর পাশে যে মানুষটি রয়েছে তারও আপনার প্রতি ইম্প্রেশনটা কিছুটা হলেও খারাপ হয়। এই জন্যই আমাদের দাঁত হোয়াইটনিং (সাদা) রাখাটা খুবই জরুরী।
তো যদি আপনি এই সমস্যাটা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবে। দাঁত হোয়াইটনিং (সাদা) রাখার জন্য আজ আমি আপনাদের সাথে কিছু সহজ ঘরোয়া টিপস শেয়ার করব যেগুলো আপনারা খুব সহজেই ঘরে বসেই এপ্লাই করতে পারবেন।
আর এতে কোনো ক্যামিকেলও থাকবে না। আর এগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার দাঁত খুব সহজেই সাদা হবে। পাশাপাশি মুখে কোনরকম দুর্গন্ধও হবে না। আর অবশ্যই এতে আপনার দাঁত সুস্থ সবলও থাকবে।
শুধু টিপসগুলোকে আপনাকে নিয়মিত ফলো করার চেষ্টা করতে হবে। আর আমি যে টিপস গুলো বলবো তার মধ্যে থেকে আপনি আপনার পছন্দমত যেকোন একটা টিপস পছন্দ করে সেটাকে চাইলে ফলো করতে পারেন। তবে টিপস দেওয়ার আগে বলি,
কেন আমাদের দাঁত হলুদ হয়?
অনেক সময় আমরা এমন কিছু খাবার খেয়ে নিই যেগুলোতে আমাদের দাঁতে দাগ পড়ে যায়। এছাড়াও পুওর ডেন্টাল হাইজিন অর্থাৎ দাঁতের ঠিকঠাক যত্ন না নেওয়ায় দাঁত হলুদ হয়ে যায়। আর্থিকভাবে ব্রাশ না করার জন্য এই সমস্যাটা আরও বেশি দেখা দেয়। আরো অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণেও দাঁত হলুদ হতে পারে।
এছাড়া অনেক সময় এমন অনেক ওষুধ খেতে হয় যার ফলেও দাঁতে দাগ পড়ে। আর দাঁত হলুদ হতে থাকে। এছাড়া সিগারেট, পান, গুল, জর্দা জাতীয় জিনিস খাওয়ার পরেও দাঁতে হলদে ভাব দেখা দিতে থাকে। এর সব থেকে বড় কারণ হলো এগুলোতে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যায়। তাহলে চলুন এবার টিপস গুলো দেখে নেওয়া যাক-
নাম্বার ওয়ান: Using Baking Soda
প্রথমে একটি পাত্রে আধা চামচ বা তার একটু কম বেকিং সোডা নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন- এখানে বেকিং সোডাই লাগবে বা আমরা যেটাকে খাবার সোডা বলি সেটা। বেকিং পাউডার কিন্তু না। এরপর তার সাথে কোনো রকম ফ্লেবার বা কেমিক্যাল ছাড়া টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে।
আপনি প্রতিদিন ব্রাশ করার সময় যতটা পরিমাণ টুথপেস্ট ব্যবহার করেন ঠিক সেই পরিমান বা তার থেকে একটু বেশি টুথপেস্ট নিন এবং বেকিং সোডার সাথে মিশিয়ে এক চামচ পাতিলেবুর রস মিক্স করুন। এরপর সেটাকে ব্রাশে নিয়ে রোজ যেমন দাঁত মাজেন সেরকমই এটা দিয়ে দাঁত মাজুন। এতে আপনি দেখতে পাবেন আপনার দাঁতটা অনেকটা সাদা হবে।
এটা আপনি প্রথমে সপ্তাহে দুদিন ইউজ করবেন। তারপর যখন দেখবেন আপনার দাঁত সাদা হতে থাকছে তখন সপ্তাহে এক দিন এটা করলেই হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন প্রতিদিন না করা হয়। তাহলেও কিন্তু দাঁতের ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ বেকিং সোডা প্রতিদিন বেশি পরিমাণে ইউজ করলেও দাঁত ক্ষয়ে যেতে পারে।
তার দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সপ্তাহে এক বা দুদিন কুরাই আপনার দাঁতের জন্য সবথেকে ভাল। এখানে পাতিলেবু দাঁতে দাগগুলোকে রিমুভ করার জন্য ইউজ করা হয়। আর এই মিক্সারটা ইউজ করলে দাঁতের হলুদ ভাব সেটা রিমুভ হয়। তার সাথে সাথে ক্যাভিটি থেকেও দাঁতকে বাঁচায়। আর এটা ইউজ করলে মুখে একটা ফ্রেশ ভাব আসে। মুখে যে দুর্গন্ধ থাকে সেটাও রিমুভ হয়।
টিপস নাম্বার 2: Oil Pulling
যেহেতু আমাদের এনামেল ক্ষয়ে যাওয়ায় দাঁত হলুদ হতে থাকে তাই এর জন্য আর একটা ভালো টিপস হল অয়েল পুলিং। আপনি এক চামচ নারকেল তেল মুখে নিয়ে সেটা দিয়ে কুলকুচি করুন। খেয়াল রাখবেন – কুলকুচি করার সময় তেলটা যেন মুখে চারিদিকে ছড়িয়ে যায়।
এভাবে তিন মিনিট কুলকুচি করার পর সেটাকে ফেলে দিন। নারকেল তেলের মধ্যে লাউরিক এসিড থাকে যেটা দাঁত হলুদ করার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। আর সাথে সাথে দাঁতের মাড়িকে আরো শক্ত ও হেলদি বানাতেও সাহায্য করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য এটা খুবই হেলথফুল।
আর ওয়েল পুলিং করাটা একদমই ন্যাচারাল। এর কোন সাইডইফেক্টও নেই। আর ওয়েল পুলিং করার পর কোনো রকম কেমিক্যাল ছাড়াই দাঁত মেজে ফেলতে হবে। আপনি এটা প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে ও সকালে ঘুম থেকে উঠে করতে পারেন। এতে আপনার দাঁত সুন্দর ও মজবুত হবে। দাঁতের যত্নে অবশ্যই এপ্লাই করবেন এটি।
টিপস নাম্বার 3: Mustard Oil
আমাদের দাঁত হলুদ বা কালো হয়ে যাওয়া এছাড়াও আরো অন্যান্য দাঁত জড়িত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের তিন নম্বর টিপস হলো মাস্টার অয়েল বা সরষের তেল। সরষের তেল দাঁতের জন্য একটা খুব ভালো হোম রেমেডি। এক চামচ সরষের তেলে হাফ চামচ বা তার একটু কম নুন মিশিয়ে আপনি ভালো ভাবে হালকা হাতে তাতে মালিশ করুন।
এটা করলে আপনার দাঁত সাদাতো হবেই আর তার সাথে দাঁতে যদি ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে সেটা থেকেও আপনি রিলিজ পাবেন। আপনি চাইলে সরষের তেলের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়েও এপ্লাই করতে পারেন।
টিপস নাম্বার 4: Healthy Eating
এটি হলো শেষ এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ টিপস। আমরা আজকাল কম বেশি সবাই চা কফি ভীষণ পরিমাণে খাই। তো আপনার কাছে রিকুয়েস্ট চা কফির নেশাটা একটু কমান যদি আপনি ভালো সুন্দর সাদা দাঁত চান। কারণ চা কফি অত্যধিক পরিমাণে খেলে দাঁতের উপর দাগ পড়া শুরু করে এবং দাঁত হলুদ হতে থাকে।
এছাড়া বাইরের ফাস্ট ফুড আর কেমিক্যাল মেশানো খাবারগুলো থেকে দূরে থাকাটা শরীরের জন্যও যেমন দরকার তেমনি দাঁতের জন্যও দরকার। কারণ এতেও আপনার দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। আর হার্ড ড্রিংকস ও সফট ড্রিংকসগুলোও দাঁতের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। দাঁতের যত্নে এই সচেতনতা না থাকলেই হবে না।
কারণ এই সব ড্রিংকসে যে পরিমাণে এসিড থাকে, সেগুলোতে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়। আর সিগারেট বা তামাক জাতিয় জিনিস বা পান এসবের থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। কারণ এসবও দাঁতে মারাত্মক ক্ষতি করে। পাশাপাশি চেষ্টা করবেন প্রতিদিন রাতে দাঁত মেজে তারপর ঘুমানোর। এতে দাঁত সত্যিই খুব ভালো থাকবে।
আর মুখের মধ্যে থুথুর পরিমাণ কমে গেলে তাতেও কিন্তু দাঁতের এনামেল অর্থাৎ সাদা অংশগুলো কমজুরি হতে থাকে। তাই প্রচুর পরিমাণে জল খেয়ে বডিকে হাইড্রেট রাখার চেষ্টা করুন। আর যদি মজবুত দাঁত চান তাহলে অবশ্যই টুথপেস্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এবার সবশেষে টিপস নিয়ে বলি –
নাম্বার 5: দাঁতের যত্নে খাবার
যেসব খাবারে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম বেশি থাকে সেসব খাবার খাওয়া আপনার দাঁতের জন্য খুবই উপকারি। যেমন সবুজ শাক-সবজি, ফল, আমন্ড, বাদাম, আখরোট ইত্যাদি। এগুলি আপনার দাঁতের জন্য ভীষণ উপকারী। আর আখ এবং সবুজ শাক-সবজি ডাটা এগুলি খেলে দাঁতের জোর বাড়ে আর দাঁত মজবুতও হয়।
আপনি যদি দাঁতের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তাহলে এখন আমি যা যা বললাম তার মধ্যে ৪ নাম্বার টিপস এর কথা গুলিতো অবশ্যই ফলো করুন। আর বাকি তিনটা টিপস এর মধ্যে আপনার সুবিধা অনুযায়ী আপনার পছন্দের যেকোন একটা টিপস ইউজ করতে পারেন। এগুলো নিয়মিত ফলো করলে আশা করা যায় এক সপ্তাহ পরে আপনি রেজাল্ট দেখতে পাবেন।
আর তখন চাকরির ইন্টারভিউ বা কনফিডেন্স থাকাই হোক বা ডেটিং এ প্রাণ খুলে হাসাই হোক কোনোটাতেই আপনি আর সংকোচ বোধ করবেন না। সব সময় মনে রাখবেন- “Beauty is power, a smile it’s sword”.
সবশেষে, আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ যদি এই লেখাটি পড়ে আপনার নিজের জীবনের কোনো সমস্যা সমাধান খুঁজে পেতে সত্যিই এতটুকু সাহায্য হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জন ও বন্ধুবান্ধব যারা হয়তো দীর্ঘদিন দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন তাদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ কে বলতে পারে হয়তো তাঁদেরও একটু হলেও সাহায্য হয়ে যেতে পারে। আর নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন আপনার যে কোনো সমস্যা।
আরও পড়ুন- কীভাবে হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব