স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে ব্রেন তীক্ষ্ণ করুন: প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের দিনের পর দিন অলস করে তুলছে। সবকিছু হাতের নাগালে হওয়াতেও সেকেণ্ডারি ব্রেণ হিসেবে মোবাইল, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলো তথ্য সংরক্ষণে এত বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছি যে নিজের মাথায় কোন কিছু সেভ রাখতে মনই চায় না।
আর এভাবেই ব্রেণ সেলগুলো দিনের পর দিন তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। ফলে স্মরণশক্তি হ্রাস, চিন্তা করার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে। এটা প্রযুক্তি কিংবা আপনার কারোরই দোষ না। তবে যারা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বা স্মরণশক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এই লেখাটা তাদের জন্য।
পর্যাপ্ত ঘুম দিন
পর্যাপ্ত ঘুম শরীর ও মন দুটোকেই সতেজ করে। সারাদিনে নতুন সব তথ্যগুলো ঘুমের মধ্যে ব্রেণে স্টোর হয়। কম ঘুমালে এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে স্টোর হয় না বা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, যে ব্যক্তি ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমায়, সে অন্য কম ঘুমানো ব্যক্তির চেয়ে দ্রুত চিন্তা ও কাজ করতে পারে। তাই আপনি যত কাজের মধ্যেই থাকুন না কেন, পর্যাপ্ত ঘুমাতে কখনো ভুলবেন না।
নিয়মিত অভ্যাস পরিবর্তন করুন
মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায় গুলোর মধ্যে প্রথম এটি। যদি আপনার ডান পকেটে মোবাইল, মানিব্যাগ রাখার অভ্যাস থাকে তবে তা কিছুদিনের জন্য বাম পকেটে রাখতে শুরু করুন। এভাবে বা’ হাতের ঘড়ি ডান হাতে পড়া, বা হাত দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি।
যেসব প্রতিদিনের অভ্যাস, যেগুলোর প্যাটার্ন পরিবর্তনে আপনার যেমন সমস্যা হবে না, সেগুলো করা শুরু করুন। এতে ব্রেন সবসময় এক্টিভ বা ব্যস্ত থাকবে এবং পুরাতন প্যাটার্ন ভেঙ্গে ব্রেন সবসময় এলার্ট থাকবে নতুন প্যাটার্ন গ্রহণ করার জন্য।
একসাথে অনেক কাজ করবেন না
মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার ও মোবাইলের মেমোরির অনেক মিল রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো হ্যাং। এক সঙ্গে অনেকগুলো অ্যাপ্লিকেশন অন করলে যেমন মোবাইল বা পিসি হ্যাং হয়ে যায়, তেমনি মানুষ যদি অনেকগুলো চিন্তা বা কাজ একসঙ্গে করতে চায়, তবে মাথা ব্যথা, মাইগ্রেণ, হাই প্রেসার, হার্ট অ্যাটাক থেকে শুরু করে বড় ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়।
তাই চিন্তা যতই বেশি হোক না কেন, যেটা সব চেয়ে বেশি জরুরি সেটা নিয়ে সর্বপ্রথম ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে। দিনের শুরুতে এটা করব, ওটা করব এত্তোসব চিন্তা না করে, সময় ভাগ করে কাজগুলো একটি রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
ব্রেন গেমস খেলুন
অবসর অযথা সময় নষ্ট না করে মগজ ধোলাইয়ের জন্য মোবাইল অথবা পিসিতে Brian Games গুলো খেলতে পারেন। অথবা পত্রিকার পাজেল এবং ধাধা গুলো নিয়ে ভাবতে পারেন। এতে ব্রেণের সেলগুলো এক্টিভ হবে এবং সৃজনশীল চিন্তা মাথায় আসবে। মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায় গুলোর মধ্যে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন খাবারগুলো অকাজের। তেলে ভাজা, বাইরের খাবার, ফাস্ট ফুড ও ড্রিংকস জাতীয় পানি আপনার সৃজনশীল চিন্তাগুলোকে ধীরে ধীরে দমিয়ে ফেলে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদের সৃষ্টি করে।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক চকলেট ব্রেণের বেশ উপকার করে। তবে সবকিছু পরিমিত খাওয়া ভাল। সব ভাল খাবারের মাঝে খারাপ কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে যেটা আমরা অনেকে জানি না। তাই অতিরিক্ত কোন কিছু না।
কল্পনা শক্তি বাড়ান
পড়াশুনা এবং অন্যান্য কাজগুলো ভালভাবে চিন্তা করার পাশাপাশি কল্পনায় সেগুলোর ছবি আকতে হবে। এতে সেই কাজ বা পড়াটা ব্রেণে দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। নিজের লক্ষগুলো শুধু মুখে নয়, কল্পনায় সেগুলো করার ছক একে নিতে হবে। এতে ব্রেণের সেলগুলো সব সময় এক্টিভ হতে শুরু করবে এবং ধারালো হবে।
হাসুন প্রাণ খুলে
হাসলে হার্ট ভাল থাকে। এটা সবারই জানা। আর হার্ট ভাল থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন যথাযথ হয়। আবার সব সময় অনুপ্রাণিত থাকলে ব্রেণ থেকে অযথা চিন্তাগুলো কমে যায় এবং নিজস্ব কাজে মনোযোগী হওয়া যায়। স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির অনেক কার্যকরি উপায় এটি।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
মস্তিষ্কের সঠিক পরিচর্যার জন্য পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। আর এজন্য আপনাকে দামি খাবার খেতে হবে না। স্বল্পদামে যে শাকসবজি ও ফলমূলগুলো আছে এগুলোই ব্রেণের জন্য বেশ উপকারী।
অনেকেই সকালের নাস্তাকে গুরুত্ব দেয় না, কিন্তু সকালের নাস্তাকেই বলা হয় মস্তিষ্কের প্রধান খাবার। তাই সকালে ভারি খাবার খেতে না পারলেও মোটামুটি ভাবে হাতের কাছে যা পাবেন তাই খেয়ে নিবেন। এক নাগারে বেশি ক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না। প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর হালকা কিছু খেয়ে নিবেন। এবং দিনে অন্তত একবার খাবারের তালিকায় আমিষ রাখবেন।
হালকা ব্যায়াম
যদি কখনো করে থাকেন তাহলে হয়তো বা এতটুকু সবারই জানা যে এক্সারসাইজের পর মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ফ্রি হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন হয়।
এছাড়াও ব্রেণ এক্সারসাইজের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম এবং মেডিটেশন রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা এ বিষয়ে লিখেছি। আপনি চাইলে পড়ে নিতে নিতে পারেন- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় একুপ্রেসার ও মুদ্রার মাধ্যমে।
এতক্ষণ পুরো লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই লেখাটি আমরা ভিডিওতে রূপ দিয়েছি। আপনি নিচে দেখে নিতে পারেন।
আশা করি ভিডিওটি ভাল লেগেছে সবার। আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।