কিভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির করা যায় ঘরোয়া উপায়ে? উফ খোদা! আজও আমি পেট খারাপের জন্য অফিস যেতে পারবো না। আজকাল তো একটু রিচ খাবার খেলেই আমার এই অবস্থা হচ্ছে।
নিজেদের লাইফে আজ আমরা এতটাই ব্যস্ত যে ডাইজেশনটাকে ইম্প্রুভ করার দিকে নজর দেয়ার সময়টুকুও এখন আমাদের নেই। অথচ একটা হেলদি লাইফ লীড করার জন্য সঠিক নিউট্রিশন যুক্ত খাবার খাওয়া আর ডাইজেশন বা হজম শক্তিটাকে ইম্প্রূভ করাই আমাদের অন্যতম একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত। একটা কথা আছে “We are what we eat”.
হজম শক্তি সমস্যা
উইক ডাইজেশন একটা সিরিয়াস হেলথ প্রবলেম। আর এ কারণে আমাদের দেহে অনেক রকম রোগ দেখা যায়। যেমন অতিরিক্ত গ্যাস, বার বার লুজ মোশন, হাই অ্যাসিডিটি, লটিং ইত্যাদি। এমনকি পুওর ডাইজেশন অনেক সময় ক্রোনিক রোগও ঘটাতে পারে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই ধরে নিই যে, ওষুধ খাওয়া ছাড়া ডাইজেশনকে ইম্প্রুভ করা আমাদের কন্ট্রোলের বাইরে। কিন্তু সত্যি বলতে আমরা শুধুমাত্র কিছু ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ এবং ডায়েটে সামান্য কিছু চেঞ্জ করার মাধ্যমে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমটাকে আরও বেশি এফিসিয়েন্টলি কাজ করতে সাহায্য করতে পারি।
তো আজ এই লেখাতে আমি আপনার সাথে এমন কিছু টিপস শেয়ার করব যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই এবং অবশ্যই বিনা কোন মেডিসিন ইউজ করে আপনার ডাইজেশন প্রসেসটাকে ইম্প্রুভ করতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক-
Idea No 1: Change Your Eating Habit
আপনি যেভাবে আপনার খাবারটা খান তার একটা বড় ধরনের ইফেক্ট এসে পড়ে আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের উপর। সব সময় একটা রিলাক্স ইনভাইরনমেন্টে আমাদের খাবার খাওয়া উচিত। এজন্য খাবার খাওয়ার সময় আশেপাশে টিভি, এফএম, যে কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বন্ধ করে তবেই খেতে বসা উচিত।

আমাদের ফুল ফোকাস থাকবে আমাদের খাবার আর আমাদের অ্যাক্ট অব ইটিং এর উপর। এটা খুব মন দিয়ে নোটিশ করতে হবে খাবারটার টেস্ট কেমন, গন্ধ কেমন! এটাকেই মাইন্ডফুল ইটিং বলে।
এছাড়াও আমাদের খাবারটাকে খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। কারণ যত ভালোভাবে আমরা চিবিয়ে খাবারটা খেতে পারব তত ভালভাবে আমাদের ডাইজেশনও হবে বা হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। মুড অফ, অ্যাংগার এগুলো আমাদের ডাইজেশনকে প্রভাবিত করে।
কারণ আমাদের মাইন্ড আর ডাইজেস্টিভ সিস্টেম পরস্পর কানেক্টেড। তাই আমাদের ফিলিংস, ইমোশনস এগুলো আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের উপর ভীষণভাবে একটা ইম্প্যাক্ট ফেলে।
Idea No 2: Get Hydrated
যে সমস্ত মানুষদের মধ্যে ডাইজেস্টিভ ডিস অর্ডার বা হজম শক্তি বৃদ্ধি সমস্যা লক্ষ্য করা যায়, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ এক্সট্রিমলি ডিহাইড্রেটেড থাকার কারণে অর্থাৎ জল কম খাওয়ার কারণে এই রোগে ভোগে। তাই সবার আগে সঠিক পরিমাণে জল পান করা দরকার। এছাড়া সঠিক পরিমাণে জল পান করলে ফ্যাট এবং সলিউবল ফাইবারগুলো সহজে ডিজেবল হয়ে যায়। এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবারটা খুব সহজে চলে হয়ে যায়।

খাবার সময় জল খাওয়ার পরিবর্তে খাওয়ার পর অন্তত কুড়ি মিনিট পর জল খাওয়া উচিত। এর ফলে ডায়ালুটস স্টোমাক এসিডগুলো ক্ষরণ হয় সেটা সঠিকভাবে হজমে সাহায্য করতে পারে। আমাদের সবারই দিনে এক গ্লাস করে এক ট্যাবল চামুচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার অথবা ফ্রেশ লেমন জুস মেশানো পানি পান করা দরকার। এর ফলে স্টোমাক এসিড এর ক্ষরণ বুস্ট হয়। যেটা ডাইজেশন এ সাহায্য করে।
আর মোস্টলি কমন ভুল যেটা আমরা অনেকেই করে থাকি সেটা হলো খাবার সময় ঠান্ডা জল আর খাবার পর আইসক্রিম খাওয়া। যেটা একদমই উচিত নয়। ঠাণ্ডা জল বা আইসক্রিম ডাইজেশন এ অনেক প্রবলেম তৈরি করে।
Idea No 3: Do Some Change In Diet
আমাদের সবসময় ফোকাস থাকা উচিত রিয়েল ফুড খাওয়ার উপর। তাজা শাকসবজি, ফরমেন্টেড ফুড, বাড়ীতে ভালোভাবে রান্না করা খাবার এগুলো যতটা বেশি সম্ভব রেফার করা উচিত। ফাস্ট ফুড অর্থাৎ যেগুলোয় ফ্যাট বা আর্টিফিশিয়াল কালার, রিফাইন্ড অয়েল, সুগার, প্রসেস সল্ট খুব বেশি পরিমাণে থাকে সেগুলো অ্যাভয়েড করাই ভালো।

এগুলো কোন নিউট্রিশন ভ্যালুও সরবরাহ করে না। আর এই সমস্ত খাবার খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগও দেখা দেয়। এছাড়া আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। ফাইবার এর জন্য খাবার অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খুব সহজে চলে যেতে পারে।
সলিউবল ফাইবার যেটা কিনা কিউকামবার, ব্লুবেরি, বাদাম, বিনস এগুলোতে পাওয়া যায়। সেগুলো ডিজলব হয়ে একটা জেলের মত জিনিস গঠন করে। সেই জিনিসটাই ডাইজেশন প্রচেষ্টাকে স্লো করে দেয়। এর ফলে আমরা বেশিক্ষণ পেট ভরা ফিল করি। এটা আমাদের ওয়েটাকেও কন্ট্রোলে রাখে।
ইনসলিউবল ফাইবার যেটা ডার্ক, গ্রিন কালার পাতাযুক্ত সবজি, বিনস কিংবা গাঁজরে পাওয়া যায় সেটা একদমই ডিজলব হয় না এবং এটা আমাদের স্টুলটাকে শক্ত করে।
এছাড়া আমাদের খাবারে প্রোবায়োটিকস এবং প্রিবায়োটিকস থাকা উচিত। প্রোবায়োটিকস এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া যেটা আমাদের হজমে সাহায্য করে। ইমিউনো সিস্টেমও এর ফলে ভালোভাবে কাজ করে। প্রোবায়োটিক এর জন্য কোনো ধরনের সাপ্লিমেন্ট নেয়ার প্রয়োজন নেই। এটা দই কিংবা ইয়াগরুটে পাওয়া যায়। তাই আমাদের ডায়েটে দই থাকা অবশ্যই উচিত।
প্রিবায়োটিক আসলে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াদের খাদ্য। শুধু যদি আমাদের দেহে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে তারা না খেতে পেয়ে মারা যেতে পারে। তাই প্রিবায়োটিক থাকা দরকার। এটা পিঁয়াজ, আদা, লসিতে পাওয়া যায়। এছাড়া গ্লুটামিনযুক্ত খাবার যেমন ডিম, মাংস, বিনস এগুলো আমাদের সকলের খাওয়া উচিত। গ্লুটামিন মেইনলি অন্ত্রের আস্তরণ ড্যামেজ এবং প্রদাহ দুর করতে সাহায্য করে।
Idea No 4: Exercise
প্রতিদিন সামান্য এক্সারসাইজ হজম শক্তি বৃদ্ধি বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমটাকে অনেকটা ইম্প্রুভের সাহায্য করতে পারে। মুভমেন্ট আর গ্রাভিটির কারণে খুব সহজে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবার পাস হয়।

মাঝে মাঝে শুধু পায়চারি করলেও ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অনেকটা ইম্প্রুভ হতে পারে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকা ডাইজেশন প্রসেসটাকে স্লো করে দেয় এবং ডাইজেশনটাকে কঠিন করে তোলে। এক্সারসাইজের ফলে অন্ত্রের মাসেলে রক্ত চলাচল ভালো হয়। যেটা আলটিমেটলি ডাইজেশন এ সাহায্য করে।
Idea No 5: Control Your Stress
স্ট্রেস আপনার ডাইজেশনটাকে সম্পূর্ণ এলোমেলো করে দিতে পারে। এর ফলে গ্যাস, মাথা ব্যথা এরকম বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই স্ট্রেসটাকে কমিয়ে ফেলা খুবই দরকার। কোন ধরনের রিল্যাক্সিং অ্যাক্টিভিটি আপনার স্ট্রেস কমানোর জন্য বেস্ট সেটা আপনাকেই ডিসকভার করতে হবে। আমার মতে, মেডিটেশন, ওয়াকিং, ইয়োগা এগুলো খুবই উপকারী। আর স্ট্রেস খুব বেড়ে গেলে আমরা অনেক ইমোশনাল ইটিং করতে শুরু করি।

সবশেষে, ফেমাস ফিলোসোপার জিন জ্যাকুইস রসুই এর বলা একটা বাক্য দিয়ে আমি আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই। তিনি বলেছিলেন, ‘Happiness: a good bank account, a good cook, and a good digestion’. তাই বুঝতেই পারছেন ডাইজেশনটাকে ইম্প্রুভ করাটা কতটা জরুরী।
অবশেষে, আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ যদি এই লেখাটি পড়ে আপনি একটু হলেও সাহায্য পেয়ে থাকেন, তাহলে শেয়ার করার মাধ্যমে আপনিও অন্য কারো সাহায্য করতে পারেন। আর নিচে কমেন্ট করে জানান এরপর কোন হেলথ টপিক এর উপর আপনি লেখা পড়তে চান। কেননা, আপনাকে সাহায্য করাটাই আমাদের মুল উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন- চোখের কালো দাগ কিভাবে দূর করা যায় ঘরোয়া উপায়ে