চাঁদ বিস্ফোরিত হলে

চাঁদ বিস্ফোরিত হলে পৃথিবীর কি হত? – চাঁদহীন পৃথিবী

চাঁদ বিস্ফোরিত হলে পৃথিবীর কি হত? আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে সৌরমণ্ডলে একটি নতুন গ্রহের জন্ম হয় যার ৪৫০ কোটি বছর পর মানুষ নামক উন্নত প্রাণীরা এর নাম পৃথিবী রাখে। নতুন অবস্থায় পৃথিবীর কোন উপগ্রহ বাঁ চাঁদ ছিল না। কিন্তু কিছু বছরের মধ্যেই একটি আশ্চর্যজনক ঘটনার সূচনা হল, যা সবকিছু বদলিয়ে দিল।

আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে সূর্যের চারপাশে শুধু পৃথিবীই ঘুরত। কিন্তু একদিন ঘটে গেল এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিস্ফোরণ। মঙ্গলের মত একটি গ্রহ পৃথিবীর সাথে ধাক্কা লাগল, এরপর পৃথিবীর কিছু অংশ ভেঙ্গে গেল। যেগুলো টুকরো আকারে আলাদা হতে লাগল।

কিন্তু পৃথিবীর আকর্ষণ বল এতটাই প্রবল যে, এই ভেঙ্গে যাওয়া টুকরোগুলো পৃথিবী তার নিজের দিকে টানতে লাগল। এভাবে কয়েকবছরের মধ্যে এই সব টুকরোগুলো একত্রে মিলে একটি ফুটবলের মত হয়ে গেল। যেটাকে এখন আমরা পৃথিবীর ভাই চাঁদ কিংবা চাঁদমামা বলি।

চাঁদের ক্রমবিকাশ

একটি ভয়ানক বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সূচনা হল নতুন এবং একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের। যার সৌন্দর্য এখনো সবাইকে আকৃষ্ট করে। চাঁদ আসার পর কিছু বছরের মধ্যেই পৃথিবীতে জীবনের সূচনা হয়। যার ক্রমবিকাশে আজকের এত শত প্রানী এবং আমরা। যদি চাঁদ না থাকত তাহলে পৃথিবীতে জীবনেরও সূচনা হত না। এখন তবে প্রশ্ন হল- যদি চাঁদ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় বা বিস্ফোরিত হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর কি হবে?

জোয়ার ভাটায় চাঁদ

পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার যতগুলো হাইপোথিসিস আছে তার মধ্যে এই প্রশ্নটি সবচেয়ে ভয়ানক। আসলে পুরো পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে এই চাঁদ। পৃথিবীর সব স্মুদ্রগুলো ভারসাম্যতায় আছে এই চাঁদের জন্যেই। চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে সমুদ্রের পানিগুলোকে নিজের দিকে টানে। এজন্যই পানির স্রোতগুলো অনেক উচু পর্যন্ত উঠে, যার কারণে জোয়ার ভাটা সম্ভব হচ্ছে।

যারা ভাবেন যে, সমুদ্রের পানি বা স্রোত বাতাসের জন্য উপরে উঠে বা ছুটে তারা আজকে জেনে রাখুন যে, এতদিনে আপনি ভুল জেনে এসেছেন। পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে মহাকাশে অবস্থিত চাঁদের জন্য এই স্রোত বা জোয়ার-ভাটা হয়ে থাকে। চাঁদ এটি করতে পারে গ্রাভিটির কারণে। তাহলে এবার দেখার পালা চাঁদ না থাকলে বা ধ্বংস হয়ে গেলে কি ঘটবে পৃথিবীতে?

চাঁদ না থাকার ১ ঘণ্টার ঘণ্টা

চাঁদ না থাকার ১ মিনিটের মধ্যে সমুদ্রের স্রোতগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একত্রে ফেপে উঠবে। দানবের মত স্রোতগুলো সুনামি, টর্নেডো আকার ধারণ করবে এরপর পৃথিবীর কোষ লাইনে আঘাত হানবে।

৫ মিনিট পর, পৃথিবীর সব দ্বীপ এবং সমুদ্রতীর পানিতে ভরে যাবে। শহরের ভিতর পানি প্রবেশ শুরু হবে। নদীর পানি বেড়ে গিয়ে চারদিকে পানি প্রবেশ শুরু হবে। গ্রাম ও শহরের নিচু জায়গাগুলোতে পানিতে ডুবতে ধুবতে উচু জায়গাগুলোকে গ্রাস করতে শুরু করবে। শুরু হবে ভয়ঙ্কর বন্যা, যে বন্যায় পানি কোথাও বের হতে পারবে না।

১ ঘণ্টার মধ্যেই পানি একই লেভেলে চলে আসবে, তখন সুনামি, টর্নেডো থেমে যাবে। কিন্তু চারদিক শুধুই পানি আর পানি। ২৪ ঘণ্টার পর কিংবা আপনার ঘড়িতে যখন সন্ধ্যা ৭টা বাজবে তখন সবাই আকাশে চাঁদ খোঁজা শুরু করবে। কিন্তু চাঁদ তো নেই, তখন সবাই বুঝতে শুরু করবে চাঁদের মূল্য এই পৃথিবীতে কতটুকু।

আরো ভয়ানক ব্যাপার হল যখন চাঁদ ছিল তখন পৃথিবী ২৩.৫ ডিগ্রী কোণে হোল্ড হয়ে ছিল। এখন যখন চাঁদ নেই, তখন পৃথিবী তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে, পৃথিবী এখন অনেক ভয়ানক ভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে নড়াচড়া করছে।

চাঁদ না থাকার ১ ঘণ্টা

পৃথিবীর এই নড়াচড়াতে শুরু হবে ভয়ানক ভূমিকম্পের এবং বরফ ভাঙ্গার। পরিবেশের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হতে শুরু করবে। পৃথিবীতে ঋতু বলে কোনো কিছু থাকবে না।

ঋতু পরিবর্তন

এন্টার্কটিকা বা বরফের রাজ্যে ভয়ানক গরম এবং যেখানে গ্রীষ্মকাল চলছিল যেখানে আচমকা বরফ পড়া শুরু হবে। প্রতি মিনিটে মিনিটে ঋতুর আচমকা পরিবর্তন হবে। জ্যাকেট পরিহিত মানুষগুলো হঠাতই ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পড়ে ঘামতে শুরু করবে।

একটু আগে যেখানে ১৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা এখন সেখানে ৪০ ডিগ্রী ছাড়িয়ে গেছে। সবাই জ্বরে ছুটতে শুরু করবে আর বলবে – কি হল এই পৃথিবীর? ইতোমধ্যে ভূমিকম্পের কারণে পৃথিবীর যতগুলো আগ্নেয়গিরী আছে তা প্রায় সবগুলো একটিভ হয়ে পরবে। কোথাও কোথাও আগ্নেয়গিরীর মুখ ফেটে আগুনের স্রোত বইতে শুরু করবে।

চাঁদ না থাকার ১২ ঘণ্টা পর

১২ ঘণ্টা আগে যেখানে ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রা ছিল, রাতের বেলায় আচমকা সেখানে তাপমাত্রা কমতে কমতে জিরো ডিগ্রীতে নেমে আসবে। ট্যাংকের পানি, খাওয়ার পানি বরফে পরিণত হতে শুরু করবে। ইতোমধ্যে নিউজ পেপারে বা টিভিতে প্রচার হবে- পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে সমুদ্র এলাকার ১০০ কোটি মানুষ মারা গেছে।

৫ম দিনে পৃথিবীর অবস্থা

৫ম দিনে চাঁদ বিহীন পৃথিবীতে মানুষ সহ অন্যান্য পশুপাখি মরতে শুরু করবে। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তাপমাত্রা পরিবর্তন হচ্ছে। সকাল ১০ টার সময় প্রচণ্ড গরমে ঘামতে থাকা মানুষগুলো সকাল ১১ টার সময় আচমকা জ্যাকেট, সুয়েটারস পড়ছে।

কারণ তাপমাত্রা ১০ এর নিচে নেমে এসেছে। আবাদি ফসল নষ্ট হতে শুরু করেছে, পুকুর নদীর মাছগুলো প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। খাদ্যের সংকট শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও মহামারী এবং দুর্ভিক্ষে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে মাটির নিচে আণ্ডার গ্রাউন্ড হবার জন্য ছুটছে।

৬ষ্ঠ দিনে পৃথিবী

৬ষ্ঠ দিনে, আপনি এবার দেখছেন যে, দিন ৩ ঘণ্টা এবং রাত ৩ ঘণ্টা হচ্ছে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার দিন-রাত এখন ৬ ঘণ্টায় হচ্ছে। এর কারণ তো বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই। চাঁদ না থাকায় পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি অনেক বেড়ে গেছে, পৃথিবী এখন সূর্যকে এত জোরে প্রদক্ষিণ করছে যে, ৬ ঘণ্টায় ১ দিন হচ্ছে।

৬ষ্ঠ দিনে পৃথিবী চাঁদহীন

তার মানে ১ বছর ৩৬৫ দিন না এখন বরং হাজার দিন। মানুষের অবাক হয়ে দেখবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ বার সূর্য উঠছে আর ডুবছে। পৃথিবীর কোন ঘড়ি এখন আর কাজে আসছে না। বিজ্ঞানীরা নতুন সময়ের সাপেক্ষে ঘড়ি বানাতে শুরু করেছে।

চাঁদ হারিয়ে যাওয়ার ১ মাস পর

এবার ১ মাস পরের অবস্থা, একটু দাঁড়ান ১ মাস বলতে কি ৩০ দিন মনে করছেন। না চাঁদ না থাকায় ১ মাস এখন ৭ দিনে হচ্ছে। অর্থাৎ ৭ম দিনে পৃথিবীর অনেক কিছু খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষের উন্নত প্রযুক্তির ব্যবস্থার কারণে এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু চাঁদ থাকার দিনগুলোকে মনে করে কাঁদতে আছে, যখন ২৪ ঘণ্টায় দিন ছিল।

এ সুন্দর সিস্টেমে বিচিত্র ঋতু ছিল যা আর এখন নেই। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, বসন্ত এই ঋতুগুলো এখন ইতিহাস। স্কুলের বইয়ে পড়াশোনা হচ্ছে, আগে ২৪ ঘণ্টায় ১ দিন ছিল আর ৩৬৫ দিনে ১ বছর।

তাহলে এবার নিজেই একটু ভেবে দেখুন চাঁদ আমাদের পৃথিবীর জন্য কতটা দরকারি? তবে এবার প্রশ্ন হল চাঁদকে ধ্বংস করার মত কোন তারা বা গ্রহ কি আছে? শান্ত হয়ে বসুন, কারণ বিজ্ঞানীরা গবেষণায় বলেছেন, চাঁদকে ধাক্কা দেয়ার মত এরকম কোন আভাস তারা দেখছেন না। তারপরেও রিস্ক তো থেকেই যায়। মহাবিশ্ব বলে কথা, কখন কি ঘটে যাবে, তা বলা যাবে না অনেকসময়।

চাঁদহীন পৃথিবীর অবস্থা ভিডিও

তো বন্ধুরা, চাঁদহীন পৃথিবী সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কি? জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট করে। ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক দিয়ে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এই চ্যানেলে নতুন হলে অবশ্যই লাল সাবস্ক্রাইব বাটনে ক্লিক করে পাশে থাকবেন।

আরো পড়ুন- মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক হোল রহস্য কিভাবে সৃষ্টি হয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *