বৃষ্টিহীন পৃথিবীর কি অবস্থা

বৃষ্টিহীন পৃথিবীর কি অবস্থা হত | Absence Of Rain

বৃষ্টিহীন পৃথিবীর কি অবস্থা হত ভেবেছেন কখনো? সুন্দর রৌদ্রজ্জল দিনে আচমকা আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল। আর হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল। তখন আমরা অনেকেই ভাবি ধুর, এখন বৃষ্টি কেন নামলো?

সবাই ঘরে ছুটতে লাগলো বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। আর যখন বৃষ্টি থেমে গেল তখন ভাবি, বৃষ্টি থেমে গেছে। এখন আর যেন না আসে। কিন্তু কি হবে যদি এই বৃষ্টি আমাদের পৃথিবীতে আর কখনোই না পড়ে।

চলুন, তাহলে এই ইন্টারেস্টিং হাইপোথিসিস মানে বৈজ্ঞানিক যুক্তিযুক্ত কল্পনার মধ্যে প্রবেশ করি।

পানিচক্রের উপর বৃষ্টির প্রভাব

সাধারণত ১ মিলিমিটার ডায়া আকারের বৃষ্টির পানি আকাশ থেকে পড়ে। যখন জিরো ডিগ্রী তাপমাত্রায় এই পানি কোনো স্থানে পড়ে তখন সেটা স্নো অর্থাৎ বরফ আকৃতিতে পড়ে। কিন্তু কি হবে যদি এগুলো একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে শুনে মনে হবে, এটাতে তেমন ক্ষতি হবে না। পানির তো আর অভাব নেই পৃথিবীতে। কিন্তু আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না কি পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এই সবুজাভ পৃথিবী।

পানিচক্রের উপর বৃষ্টির প্রভাব
পানিচক্র

সবার প্রথমে যেটা হবে তা হচ্ছে, পানিচক্র বা ওয়াটার সাইকেল নষ্ট হয়ে যাবে।

এই চক্র অনুসারে- সমুদ্রের পানি মশ্চার রূপে আকাশের দিকে উঠে যায় এবং সেখানে এগুলো ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। তার মানে আপনি আকাশে যে মেঘ দেখেন তা আর অন্য কিছু নয় সমুদ্রের পানি। যেগুলো বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে গিয়ে মেঘ রূপে বদলিয়ে যায়। আর এই মেঘ থেকেই পানি পৃথিবীতে পড়ে।

আবার সেই নিচে পড়া বৃষ্টির পানি সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে গিয়ে ঘনীভূত হয় এবং মেঘের সৃষ্টি করে। এভাবেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পানিচক্র চলতেই থাকে।

এখানে একটা মজার বিষয় হল- সমুদ্রের পানি লবনাক্ত হলেও তা যখন সূর্যের তাপে বাষ্পরুপে উপরে উঠে যায় তখন তা বিশুদ্ধ বৃষ্টির পানি রূপে পতিত হয়। এ পানি আপনি খেলে বিন্দুমাত্র লবণাক্ত মনে হবে না। কারণ সমুদ্রের পানি বাষ্প হওয়ায় লবণ গুলো আলাদা হয়ে পড়ে থাকে। আর বাষ্প যা কিনা বিশুদ্ধ পানির বৃষ্টি রূপে বর্ষণ হয়।

এখন যদি সমুদ্রের পানি উপরে গিয়ে আর মেঘে পরিণত না হয় কিংবা বৃষ্টিরুপে পুনরায় ফিরে না আসে তাহলে এই সাইকেল বা চক্র একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে।

অনাবৃষ্টিতে পানির অভাব

ধরুন, বৃষ্টি পড়া এখন বন্ধ হয়েছে। তাহলে এখন প্রথমেই ক্ষতির শিকার হবে পৃথিবীর গাছপালা, জমির শস্য যা থেকে আমাদের খাদ্য তৈরি হয়। মাটিতে থাকা সবুজ ঘাস গুলো বেঁচে থাকতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। যা আগে বৃষ্টি সরবরাহ করত। কিন্তু এখন যেহেতু বৃষ্টি নেই, তাই ঘাসগুলো এরকম শুকিয়ে বাদামী হয়ে যাচ্ছে।

অনাবৃষ্টিতে পানির অভাব
খরা

এখন যদি কয়েক বছর বৃষ্টি না হয় তবে ক্রমেই শুকাতে শুকাতে মাটিতে ফাটল ধরবে। ঘাসের সাথে সাথে বাকি গাছপালাও মরতে শুরু করবে। হয়তো প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমি ও শস্য খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

তখন Irrigation মানে সেচের জন্য সমুদ্র থেকে পানি নিয়ে তা বড় বড় ল্যাবে ডায়ালাইসিস ও ডিস্টিলেশন প্রক্রিয়ার দ্বারা লবণাক্ততা সরিয়ে বিশুদ্ধ বানিয়ে তা দিয়ে সেচ করা যাবে। কিন্তু এটা আমাদের জন্য লিমিটেড ও ব্যয়বহুল হবে।

সমুদ্রে অনেক পানি আছে। এখন যেহেতু সমুদ্রের পানি বাষ্প হচ্ছে না, তাই পানিগুলো সমুদ্রে অনেক সময় ধরে থাকবে। খেয়াল করুন, ভূপৃষ্ঠে এখন বিশুদ্ধ পানির পরিমাণ অনেক কম আছে। আর সমুদ্রের পানি আমরা তেমন ব্যবহারও করি না।

কিন্তু পৃথিবী ৭০ পার্সেন্ট পানি দ্বারা বেষ্টিত যা কিনা সমুদ্র, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ইত্যাদিতে থাকে। এর মধ্যে ২.৫% পানি বিশুদ্ধ, যেটা আমরা ব্যবহার করতে পারি।

বৃষ্টিহীন জীবন ও পরিবেশ

নদী, বিল ইত্যাদির মধ্যে যে পানি আছে তা ব্যবহারযোগ্য এবং বিশুদ্ধ। এখন যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে না সেহেতু এই বিশুদ্ধ পানি মানুষ সর্বোচ্চ ২০০০ বছর ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু ২৫০০ বছরের মধ্যে সব পানি শেষ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বৃষ্টির অভাবে কিছু জায়গায় খরা দেখা দিয়েছে এবং সে জায়গাগুলোতে দুর্ভিক্ষ চলছে।

বৃষ্টিহীন জীবন ও পরিবেশ

বৃষ্টিহীন এই পৃথিবী থেকে গাছপালা উধাও হয়ে হচ্ছে। সাথে সাথে অনেক পশু-পাখিও মারা যাচ্ছে। খাদ্যজাল নষ্ট হচ্ছে। ফলে তৃণভোজী প্রাণী কমে যাচ্ছে। যার ফলে মাংসাশী প্রাণীও কমে যাচ্ছে। বৃষ্টিহীনতায় ভুগতে ভুগতে এক সময় পুরো খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্যজাল নষ্ট হয়ে যাবে। পৃথিবীতে খাদ্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে।

প্রবল খরায় জলবায়ু ও পৃথিবীর তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। গাছপালা ফটোসিনথেসিস নামক একটি প্রক্রিয়া চালায়, যার মাধ্যমে পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ছেড়ে দেয়।

খেয়াল করেছেন, এই গাছপালা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব অক্সিজেন গ্যাস রিলিজ করে। যা গ্রহণ করে পুরো পৃথিবীর জীবকূল ঠিকে আছে। আমরা যখন নিঃশ্বাস নেই কেবল তখনি বুঝতে পারি এই অক্সিজেনের গুরুত্ব।

পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব

কিন্তু এখন যেহেতু গাছপালা কমে যাচ্ছে, তাই বৃষ্টির অভাবে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়াও কমে যাচ্ছে। সাথে পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এদিকে বাতাস আর ফিল্টার হতে পারছে না। ফলে যতটুকু অক্সিজেন আছে তা দিয়ে কোন মতে ২০০০ বছর চলবে।

পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব

কিন্তু ২০০০ বছর পর পরিবেশে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাবে। তখন চারদিক শুধু কার্বন আর কার্বন। অক্সিজেনের পাশাপাশি গাছপালাও পরিবেশে ময়শ্চার বা আদ্রতা তৈরি করে। এই আদ্রতার জন্য প্রচণ্ড গরমেও আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারি। পরিবেশ ঠান্ডা থাকে, বাতাস শীতল হয়। আর্দ্রতা ছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে।

এদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে পৃথিবী অনেক বেশি অপরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে এবং রোগবালাই সহজে বিস্তার করবে। একই সাথে রোগ দূর করার ঔষধও কমে যাবে বিশুদ্ধ পানির অভাবে।

বৃষ্টির বিকল্প কি হতে পারে?

সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা ঘটবে আর তা হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বড় বড় টারবাইন যা ড্যামের মধ্যে ঘুরতে থাকে এবং সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। কিন্তু এখন যেহেতু পানি থাকবে না তাহলে টার্বাইনগুলো কিভাবে ঘুরবে? ফলে পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।

বৃষ্টির বিকল্প কি হতে পারে

আর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হলে বেকারি এবং কলকারখানাগুলো অচল হয়ে যাবে। দেখতে দেখতে বন্ধ হয়ে যাবে স্যাটেলাইটও। রাতে অনেক জায়গা অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকবে। কারণ জমানো বিদ্যুৎ কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

পুরো পৃথিবী একটি আজব সময় পার করবে। শুধুমাত্র বৃষ্টি না হওয়ায় একটি সুন্দর ও সবুজ-শ্যামল জায়গা মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাহলে এই সমস্যার সমাধান কি নেই? হ্যাঁ আছে। সমুদ্রের পানি ফুটিয়ে বা ল্যাবে ইলেক্ট্রোডায়ালাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ব্যবহার উপযোগী পানি আমরা পেতে পারি।

সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে পারি। কিন্তু পুরো রাত এই বিদ্যুৎ দিয়ে চলতে পারব না। যেমনটা এখন চলছে। এই সমস্যার সমাধান করতে আমরা উইন্ডমিলের সাহায্য নিতে পারি। উইন্ডমিল বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। পাশাপাশি জিওথার্মাল স্টেশনেও কাজে আসবে।

জিওথার্মাল স্টেশন পৃথিবীর কিছু এলাকায় পৃথিবীর ভিতরের গরমের কারণে পৃথিবীর কোরের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের গভীরের পানি গরম হয়ে থাকে। যা ক্রাক হয়ে ভাবরূপে বাইরে আসে।

এই ভাব বা ধোঁয়ার সাহায্যে বড় বড় টারবাইন ঘোরে এবং বিদ্যুৎ তৈরি হয়। উইন্ডমিল ও জিওথার্মাল এনার্জির সাহায্যে আমরা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারব। কিন্তু জিওথার্মাল এর এই টেকনোলজি খুবই সংকীর্ণ।

বৃষ্টি ছাড়া কতটুকু সম্ভব?

আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে মানুষ পৃথিবীর কত গভীরে যেতে পারে। দেখেন পৃথিবীর সার্ফেস থেকে শুরু করে তার সেন্টার পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে ৬৩৭০ কিলোমিটার। এখন নিজেই ভাবুন তো এত কম দূরত্বে আমরা কতবার পৌঁছাতে পেরেছি?

বৃষ্টি ছাড়া কতটুকু সম্ভব

আজকের এই উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা কেবল পৃথিবীর মাত্র ১২ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত যেতে পেরেছি। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর যতগুলো জিওথার্মাল এনার্জি আছে তা মাত্র টু পার্সেন্ট আমরা ব্যবহার করতে পেরেছি। যদি মানুষ এটা ১০০ ভাগি ব্যবহার করতে পারে তবে এই জিওথার্মালি হতে পারে বৃষ্টিহীন পৃথিবীর বিদ্যুতের উৎস।

কিন্তু আফসোসের বিষয় মানুষের কাছে এত সময় নাই যে বৃষ্টিহীন এই সংকটময় মুহূর্তে এত প্লান ও ফ্যাক্টরি বানাবে। কেননা প্রায় ২ কোটি ফ্যাক্টরি লাগবে এই প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে। ততদিনে পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা শেষ হয়ে যাবে।

বর্তমান প্রভাব অনাবৃষ্টির

এতক্ষণ হাইপোথিসিস এর মাধ্যমে যে বিষয়গুলো দেখলেন তাতে হয়তো ভয় পেয়েও পাচ্ছেন না। কারণ আপনি জানেন যে বৃষ্টি হবেই এটা প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু আপনাদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি যে, বৃষ্টি কিন্তু এখন আগের থেকে অনেক কমে গেছে। ধীরে ধীরে এটি কমতে শুরু করেছে এর কারনটা হলো গাছ কাটা, বন উজার করা।

বর্তমান প্রভাব অনাবৃষ্টির

পানিচক্রের যে প্রক্রিয়ায় বৃষ্টি তৈরি হচ্ছে তা অনেকখানি নির্ভরশীল প্রকৃতির গাছপালার উপর। যে অঞ্চলে গাছপালা বেশি সেখানে বৃষ্টিপাতও বেশি হয়। পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন থেকে শুরু করে যেভাবে বন-জঙ্গল নিধন চলছে তাতে করে ভবিষ্যতে বৃষ্টির পরিমাণ এতটাই কমে যাবে যে এতক্ষণ যে বিষয়গুলো আলোচনা করলাম তা অনেকখানি বাস্তবে রূপ নিবে।

আমরা কি করতে পারি?

তাই সবাই সচেতন হই। বেশি করে গাছপালা লাগাই। ভিডিওটি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ বেশি বেশি শেয়ার করি। আর ক্যাপশনে গাছ লাগানোর অনুরোধ করি। আমাদের সাথে সচেতনতামূলক কাজে অংশ নিন।

ভিডিওটি ভালো লাগলে একটি লাইক দিন। আর চ্যানেলে নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল বাটনটি বাজিয়ে দিন। দেখা হবে নতুন কোন ভিডিওতে নতুন কোন টপিকসে। গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান।

আরও পড়ুনঃ চাঁদ বিস্ফোরিত হলে পৃথিবীর কি হত? – চাঁদহীন পৃথিবী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *