একা বাঁচার উপায় – নিজের সম্পর্কে কিছু কথা: একা জীবন কষ্টের হলেও অনেক শান্তি আছে যদি আপনি নিজেকে বুঝতে পারেন, নিজেকে জানতে পারেন। তো আজকে এই বিষয়গুলো নিয়েই বলব যাতে আপনি নিজে থেকে নিজের প্রতি বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন, নিজেকে ভালবাসতে পারেন।
অনেক সময় পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আমরা ভাবি পরীক্ষাটা খুব ভালো দিয়েছি। কিন্তু যখন রেজাল্ট বেরোয় তখন দেখা যায় অনেক সময় মার্কস ভীষণই কম আসে।
‘Journal of personality and social psychology’ তে পাবলিশ করা একটা রিসোর্সে সাইনটিস্টরা এ বিষয়টা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। বেশ কয়েকজন স্টুডেন্টেদের একটা গ্রুপ সিলেক্ট করে তাদের প্রত্যেককে একটা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বলা হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাদের সবাইকে আন্দাজ করতে বলা হয় যে, তারা কত মার্কস পেতে পারে। দেখা যায়, যে সমস্ত স্টুডেন্টরা খুবই হাই মার্কস পাবে বলে আন্দাজ করেছিল, তাদের মধ্যেই বেশিরভাগ আসলে সব থেকে লো মার্কস পেয়েছিল। যেখানে যে সমস্ত স্টুডেন্টরা লো মার্কস পাবে বলে আন্দাজ করেছিল, তাদের মধ্যে থেকে বেশিরভাগ সবথেকে বেশি হাই মার্কস পেয়েছিল।
একা বাঁচার উপায়
আপনিও হয়তো, এই জিনিসটা লক্ষ করে থাকবেন, যে যারা সাধারণত ক্লাসে ফাস্ট হয়। তারা এক্সাম দেওয়ার পর কত মার্কস পেতে পারে সেটা সবসময় আন্ডারএস্টিমেট করে থাকে। সেখানে কিছু পাবলিক এরকমও থাকে যারা আসলে কিছুই পারে না। কিন্তু লোককে এমন একটা ভাব দেখায়, যেন সবকিছু পেরেছে। তারা ভাবে লোকে এতে তাদেরকে বেশি স্মার্ট বলে ভাববে। কিন্তু বাস্তবে যারা দেখন দারি করে বেড়ায় না তারাই প্রকৃত ইন্টালিজেন্ট হয়। জাস্টিন ক্রূগার এবং ডেভিন ডানিং এর করা একটা ক্লাসিক স্টাডি যেটা ডানিং ক্রূগার ইফেক্ট নামে বিখ্যাত। সেটা অনুযায়ী যারা নিজেদের বুদ্ধি শক্তিকে যত বেশি ওভার এস্টিমেট করেন। তারা আসলে তত কম ইন্টালিজেন্ট হন।
নাম্বার ১: You don’t think you are very intelligent
আলবাট আইনস্টাইন বলেছিলেন, আমার মধ্যে কোন বিশেষ দক্ষতা নেই। আমি শুধুমাত্র ভীষণ রকম কৌতুহলী। ‘জার্নাল অফ ইন্ডিভিজুয়াল ডিফারেন্স’ এ পাবলিশ করা একটা স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী, যে সমস্ত বাচ্চারা ছোটবেলায় আইকিউ টেস্টে হাই স্কোর করে। তারা বড় হয়েও ভীষণই কৌতুহলী এবং নতুন নতুন আইডিয়ার প্রতি ওপেন মাইণ্ডেড হয়ে থাকে। যদি আপনি নতুন নতুন স্কিল নতুন নতুন মজার উপায়ের মধ্যে দিয়ে শিখতে ভালবাসেন। তবে সেটা আপনার একজন ইন্টালিজেন্ট ব্যক্তি হওয়ার সাইন।
উদাহরণস্বরুপ, যদি ধরুন আপনি ইংলিশ স্পিকিং এর স্কিলটা নিজের মধ্যে ডেভেলপ করতে চান। তবে তার জন্য একটা নতুন ধরনের মজার উপায় হতে পারে Cambly app. এখানে শিক্ষকদের লিস্ট রয়েছে। এই সমস্ত শিক্ষকরা প্রফেশনাল হওয়ার সাথে সাথে নেটিভ ইংলিশ স্পিকারও।
আপনি চাইলে ওনাদের সাথে কথা বলা শুরু করার আগের ওনাদের প্রোফাইল চেক করে নিতে পারেন। পাশাপাশি এনাদের মধ্যে থেকে যেকোন কাউকে বেছে নিতে পারেন। নিজের ঘরে বসে স্পোকেন ইংলিশ প্র্যাকটিস এর জন্য।
তো এভাবে ক্যামলি এপস এর সাহায্যে ঘরে বসেই আপনি নিজের ইংলিশ স্পিকিং স্কিলকে ইম্প্রুভ করে তুলতে পারেন। একজন মিডিয়াওয়ার্কার পার্সন যদি কোন কিছু শিখতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। তাহলে তিনি খুব তাড়াতাড়ি কুইট করে যান। কিন্তু একজন ইন্টেলিজেন্স পার্সন সেই জিনিসটা শেখার বা সেই সমস্যাটা সমাধান করার জন্য সহজ এবং মজার উপায় খুঁজে বার করতে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন।
কৌতুহল ছাড়া লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মত মানুষটির হয়তো কোন অস্তিত্ব থাকত না। যিনি পাখিদের উড়তে দেখে উড়োজাহাজ বানানোর পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। কৌতুহল অর্থাৎ কিউরিসিটিই হলো ইন্টেলিজেন্সের প্রধান উৎস। কারণ মানুষ কৌতুহলী না হলে মানব সভ্যতা কখনোই এত দ্রুত উন্নতি এত উন্নতি করতে পারত না।
সো ইন্টিলিজেন্স সাইন নাম্বার ২: You are curious
আইনস্টাইনের ফেমাস থট এক্সপেরিমেন্টটি তাকে তার বিখ্যাত থিওরি অফ রিলেটিভিটি আবিষ্কার করতে সব থেকে বেশি সাহায্য করেছিল। আইনস্টাইন এটা কল্পনা করেছিলেন, যে তিনি যদি একটা আলোর কণার উপর চড়ে বসে ঘুরে বেড়াতে পারতেন, তাহলে কেমন হতো? আর সেখান থেকেই তিনি আলো এবং সময়ের বহু রহস্য উদঘাটনে সফল হয়েছিলেন। এবার এর মানে এই না, কোয়ান্টাম ফিজিক্স এবং ম্যাথামেটিকস এর ব্যাপারে আইন স্টাইনের অভাবনিও দক্ষতা কাজে আসে নি।
কিন্তু সেই দক্ষতা অন্যান্য বহু বিজ্ঞানীদের মধ্যেও ছিল। তবে আইনস্টাইনের মধ্যে আলদা যে জিনিসটা ছিল সেটা হলো তার অভাবনিও তার কল্পনা শক্তি। যেটাই তাকে এই ব্রেকথ্রুতে সাহায্য করেছিল। আর হয়তো সেই কারণেই স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, কল্পনাশক্তির জ্ঞানের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিয়েটিভিটিকে ইন্টেলিজেন্সের হাইয়েস্ট ফরম বলে মানা হয়। কারণ এটা শুধু বুদ্ধি আহরণ না বরং নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে নিয়ে যায়। কেউ হয়তো প্রচুর বুদ্ধি আহরণ করেছেন এবং দরকার মতো সেগুলোকে রিকলও করতে পারেন।
কিন্তু নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারার জন্য সেটুকু যথেষ্ট না। নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হলে এর থেকে উপরের এক দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যেটাকে ইনটেলিজেন্সের একটা নোবেল ফর্ম হিসাবে ধরা হয়। আর সেই দক্ষতাটা হলো ক্রিয়েটিভিটি।
সো ইনটেলিজেন্স সাইন নাম্বার ৩: You are creative
ভাবুন, একটা সুপার কম্পিউটার রয়েছে। যার কয়েক লক্ষ ইনপুট চ্যানেল রয়েছে। তো এতো লক্ষ লক্ষ ইনপুট চ্যানেল থেকে প্রতি মুহূর্তে যে ডাটা কালেক্ট হচ্ছে। সেটা প্রোপারলি হ্যান্ডেল করার জন্য একটা ভীষণই পাওয়ারফুল প্রোসেস থাকা দরকার।
বেশ, এই একই জিনিসটা আপনার ব্রেনেও হচ্ছে। আর এই সুপার কম্পিউটারটা হলেন আপনি। প্রতি সেকেন্ডে কয়েক লক্ষ লক্ষ ডেটা আপনার মধ্যে ইনপুট হয়। আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয় প্রতি মুহূর্তে আপনার আশেপাশে কি কি চলছে সেই সবকিছু ঠিক নোটিস করতে থাকে। আর সেখান থেকেই টেম্পারেচার, পিপাসা, গরম, ব্যালেঞ্জ, এনার্জি লেভেল এরকম অসংখ্যা জিনিসের ব্যাপারে আপনি জানতে পারেন। তাই যদি আপনি সেই সমস্ত জিনিস গুলোকে লক্ষ করতে পারেন যেগুলো অন্যরা সাধারণত মিস করে যায়। যেমন এই যে স্ক্রিনের মধ্যে কালো ডটটা ঠিক কখন এসেছে এটা যদি আপনি খেয়াল করে থাকেন তার মানে আপনার মনোযোগ ক্ষমতা অত্যন্ত ভালো। যেটা হাইলি ইন্টিলিজেন্স পার্সন হওয়ার একটা সাইন।
এছাড়া যদি আপনি আপনার সামনের জন কি ভাবছে বা কেমন অনুভব করছে সেটা সামনের জন মুখে না বললেও বেশিরভাগ সময়ে সঠিক ভাবে আন্দাজ করতে পারেন তবে সেটাও একটা হাইলি ইন্টিলিজেন্স পার্সন হওয়ার একটা সাইন।
যদি আপনি একজন হাইলি সেন্সিটিভ পার্সন হন, তবে স্বাভাবিক অন্যদের তুলনায় আপনাকে প্রতি মহূর্তে অনেক ইনফরমেশন প্রসেস করতে হয়। আর তার জন্য আপনার একটা পাওয়ারফুল প্রসেসর অর্থাৎ Higher level of intelligence থাকাটা আবশ্যক।
সো ইনটেলিজেন্স সাইন নাম্বার ৪: You are sensitive
আপনি কি নিজেকে বেশ মজার মানুষ বলে মনে করেন। যদি আপনার উত্তর হয় হ্যাঁ, তবে মজার বিষয় হলো তাহলে হয়তো আসলে আপনি একজন মজার মানুষ নন। কিন্তু যদি আপনার উত্তর হয় না, তাহলে তো ভাই আপনি সত্যিই একজন মজার মানুষ দেখছি। ‘গ্রিল গ্রিন গ্রোচ’ এবং ‘জিও ফারি মিলার’ তারা উভয়েই ‘দ্যা ইউনিভার্সিটি ওফ নিউ ম্যাক্সিকো’ এবং ব্রোট এ মারটিন ফরম দা ইউনিভারসিটি ওফ ওসট্টেন ওনটারিও’র রিসার্স অনুসারে সেন্স ওফ হিউমার আমাদের বুদ্ধি মত্তা এবং মেন্টাল ফিটনেসের পরিচয় দেয়।
আর এই জিনিসটাই এই তিনজন মিলে কিছু কলেজ স্টুডেন্টদের নিয়ে পরীক্ষা করে প্রমাণ করেছিলেন। এনারা কি করেন? ঐ কলেজ স্টুডেন্টদের একটা ক্যারেক্টারের ব্যাপারে কিছু বেসিক ইনফরমেশন প্রভাইড করে তার ভিত্তিতে হিউমরিয়াস ক্যারেক্টার বানানোর কাজ দেন। আর তারপর সেই স্টুডেনদেরি একে অপরের ক্যারেক্টার গুলোকে জাস্ট করতে বলে। যে কার ক্যারেক্টারটা কত বেশি ফানি হয়েছে। তারপর এই স্টুডেন্টদের জেনারেল ইন্টেলিজেন্স টেস্ট নেওয়া হয়। দেখা যায়, যাদের সেন্স ওফ হিউমার ভালো ছিল সেই সকল স্টুডেন্টরাই জেনারেল ইন্টেলিজেন্স টেস্টেও ভালো রেজাল্ট করেছিল।
এভাবে তারা সিদ্ধান্তে আসে যে সেন্স ওফ হিউমার ইন্টেলিজেন্সের একটা বিশেষ নির্দেশকক। এছাড়াও ১৯৭০ সালে ৫৫ জন মেল এবং ১৪ জন ফিমেল কমেডিয়ানসদের নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছিল। তাদের সবাইকেই কন্সিস্তেন্টলি বিভিন্ন আইকিউ টেস্টে হাই স্কোর করতে দেখা গিয়েছিল। যেখানে জেনারেল পপুলেশনের এভারেজ আইকিউ স্কোর ৯০ থেকে ১১০ এর মধ্যে থাকে। সেখানে সেই মেইল কমেডিয়ানদের এভারেজ আইকিউ স্কোর ছিল ১৩৮ এবং ফিমেল কমেডিয়ানদের আইকিউ স্কোর ছিল ১২৬।
সো ইনটেলিজেন্স সাইন নাম্বার ৫: You are funny
তো এবার যদি আমি এই পুরো লেখাটি সাম আপ করি। তো যে পাঁচটি লক্ষণ এটা নির্দেশ করে যে আপনি নিজেকে যতটা ইন্টালিজেন্ট মনে করেন। তার থেকে আপনি অনেক বেশি ইন্টালিজেন্ট সেগুলো হল-
নাম্বার ১. আপনার কখনো মনে হয় না আপনি ভীষণ ইন্টালিজেন্ট। পজিটিভ চিন্তা করতে পারেন।
নাম্বার ২. আপনি কৌতুহলী।
নাম্বার ৩. আপনি সৃজনশীল।
নাম্বার ৪. আপনি সংবেদনশীল।
নাম্বার৫. আপনি মজার একজন মানুষ।
আশা করি ইতিবাচক হওয়ার উপায় জেনেছেন ভালোভাবে। সবশেষে আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ যদি এই লেখাটি আপনার জীবনের সমস্যা সমাধানে এতটুকুও উপকারে আসে তবে লেখাটি প্রিওজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে এখনই শেয়ার করুন।
আরও পড়ুন – আত্নবিশ্বাসী নারী হওয়ার উপায়