মন খারাপ থাকলে কি করতে হয়

মন খারাপ থাকলে কি করতে হয়? – ভালো থাকার উপায়

মন খারাপ থাকলে কি করতে হয়? – ভালো থাকার উপায়: মন খারাপ খুব কমন একটা ব্যাপার। এই মন ভালো তো এই মন খারাপ বা মুড অফ। অনেকে ভাবে আমার সাথে কেন এরকম হয়? আচ্ছা আলো না থাকলে কি অন্ধকারের মূল্য আছে? না নেই তেমনি কষ্ট না থাকলে ভালও থাকার কোন মূল্য নেই। মন খারাপ হয় বলেই ভালো থাকার এত আনন্দ। তাই মন খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক তবে তা দ্রুত ভালো লাগার দিকে নিয়ে যেতে হবে আর এটাই হল স্মার্ট কৌসল। আজ আমি আপনাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত বলব আর মন ভালো রাখার টেকনিক শিখিয়ে দেব।

মন খারাপ থাকলে কি করতে হয়?

কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধুর বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে আমি যাই। সেদিন সেখানে প্রায় ৩০০ লোক নিমন্ত্রিত ছিল। আর যেহেতু বাড়িতে অনুষ্ঠান, তাই বাইরে জুতো খুলে রেখে সবাইকে ঘরে ঢুকতে হচ্ছিল। এবার আমার জানা ছিল না যে, এত লোক নিমন্ত্রিত। আর এরকম ব্যাপার। তো আমি সেদিন গেছে মাত্র একমাস মতো আগে কেনা আমার একটা নতুন দামী জুতো পায়ে দিয়ে। জুতাটার কোয়ালিটি এতটাই ভাল ছিল আর এতটা সুন্দর আর আরামদায়ক ছিল, যে কারণে ওই একমাসেই জুতোটা আমার বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছিল। তো ওতো জুতোর মাঝখানে জুতোটা খুলে রাখার সময়ই কেন জানিনা আমার মনে খটকা দিয়ে উঠল। যে এখানে তো রাখছি আবার গায়েব হয়ে যাবে না তো। তাই হালকা একটু সাইড করে যতটা ওখানে খুলে রেখে আমি ঘরে ঢুকে যাই।

এবার খাওয়া দাওয়া সেরে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি, ঠিক যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হয়েছে, জুতো গায়েব। কোন একজন সহৃদয় ব্যক্তি অল রেডি সেটা নিজের মনে করে পায়ে গলিয়ে নিয়ে হাটা হটা দিয়েছেন। সাথে সাথে মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল। এক দিকে লজিক্যাল ব্রেন বলতে লাগলো, কি আছে একটা জুতাই তো গেছে। কিন্তু ইমোশনাল ব্রেইন মানতে নারাজ। ইমোশনাল ব্রেইন নানান ধরনের একের পর এক নেগেটিভ আরগিও ম্যান্ট আনতে শুরু করলো।

এতদিন পর একটা জুতো বেশ পছন্দ হয়েছিল সেটাই হারাতে হল। এতো লোকের জুতো রয়েছে, তার মধ্যে থেকে আমার জুতাটাই যেতে হলো। ইছ! কেন আমি অন্য জায়গায় একটু সাবধানে রাখলাম না। এরকম একের পর এক ভাবনার স্রোত এসে পুরো মনটাকে ভরিয়ে দিল। ফলাফল আরো আস্তে আস্তে মন খারাপ বাড়তে লাগলো। কিন্তু তার ফাকে ফাকে লজিকেল ব্রেনও একটু ওকি মারতে থাকলো। একটা জুতার জন্য মন খারাপ করে থাকবি। মন খারাপ করলে কি জুতাটা ফেরত পেয়ে যাবি।

তো এরকম বেশ কিছুক্ষণ ইমোশনাল এবং লজিকেল ব্রেন এর মধ্যে লড়াই চলার পর,হঠাৎই আমার মাথায় রিসেন্টলি পড়া নরম্যান ভিনসেন্ট এর লেখা “দা পাওয়ার অফ পজিটিভ থিংকিং” বই থেকে শেখা একটা স্মার্ট আইডিয়া মাথায় স্ট্রাইক করলো। এই বইতে লেখক বলেছিলেন,যে কিভাবে পজিটিপ কোনো চিন্তা বা ‘এফারমেশন’ বারবার রিপিট করে আমরা চাইলে আমাদের রিয়েলিটাকেও বদলে দিতে পারি।

আমি দেখলাম, বেশ ভালো একটা সুযোগ পেয়েছি তো। টেস্ট করেই দেখি, সত্যি পজিটিভ থিংকিং এর পাওয়ার কতখানি। তো আমি খেয়াল করে দেখলাম, আমার মাথায় যা চলছিল সেটা বেসিক্যালি হলো, ইছ! জুতাটা হারিয়ে গেল মনটা খারাপ লাগছে। তাই আমি ঠিক এর অপজিটটা জোর করে মনে মনে রিপিট করতে শুরু করলাম।

বাহ! জুতাটা হারিয়ে গেল, আমি খুব খুশি। বেশ কয়েকবার জোর করে রিপিট করার পর ইমোশনাল ব্রেন চেচিয়ে উঠল। মানেটা কি! পাগল নাকি, জুতো হারিয়ে গেছে বলে গেছে বলে খুশি, কোন আনন্দে খুশি হে। এই যে প্রশ্নটা কোন আনন্দে খুশি এটা ভাবনা সম্পূর্ণ নতুন একটা দিকি যেন আমার জন্য খুলে দিল। যেটা এতক্ষণে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। এতক্ষণ ঘটনাটার যত বাজে দিক আছে সেগুলোকে আমি একের পর এক খুঁজে বার করেছিলাম।

কিন্তু যখন আমি জোর করেই আমি খুব খুশি এই তিনটি শব্দ বার বার মনে মনে বলতে লাগলাম। তখনই আমার চিন্তা ভাবনার প্রকাশটা শিফট হয়ে গেল ঘটনাটার ভালো কি কি দিক হতে পারে সম্পূর্ণ সেই দিকে।

সবার প্রথমে তো এলো, আবার নতুন আর একটা জুতো পরতে পারব। তাছাড়া জুতোটা মাঝেসাজে পা থেকে খুলেও আসতো। ভালোই হলো, এবার ওরকমই কিন্তু বেল্ট দেওয়া একটা জুতো কিনবো। যাতে ওই সমস্যাটা আর ফেস করতে না হয়। আর জুতোটা যে নিয়েছে তার নিশ্চয়ই জুতোটা খুব পছন্দ হয়েছে। কাউকে তো অন্তত তার পছন্দের একটা জিনিস গিফট করতে পারলাম। এরকম একের পর এক পজিটিভ চিন্তা আসতে থাকায়। এতক্ষণ অব্দি যে মন খারাপ লাগছিল সেখানে মনে হল সত্যি যেন খুশি অনুভব হতে শুরু করল। সত্যি যেন রিয়ালেটিটাই আস্তে আস্তে বদলে গেল।

আপনার সাথেও যদি এরকম সিমলার কিছু ঘটে থাকে তাহলে আমার ধারণা আপনি নিশ্চয়ই আমার কথাগুলোর সাথে রিলেট করতে পারছেন।

মন ভালো রাখার উপায়

খুব ছোটখাটো জিনিসে হয়তো হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। আর তার জন্য আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। এক কথায় বললে, যখনি আমাদের সাথে এরকম কিছু ঘটে যেটা আমরা চাইনা আমাদের সাথে ঘটুক। তখনই আমরা দুঃখী হয়ে পড়ি। কারণ সেই ঘটনার সাথে রিলেটেড সমস্ত নেগেটিভ ভাবনা গুলোই একের পর এক আস্তে থেকে একটা লুপ তৈরি হয়ে যায়। এই নেগেটিভ লু্পটাকে ভেঙ্গে একটা পজিটিভ লুপ তৈরি করার জন্য আপনাকে সব থেকে বেষ্ট সাহায্য করবে এই তিনটা শব্দ “আমি খুব খুশি”।

একদিন এক বাচ্চা ছেলের মা তাকে বলেন, শোন বাবা জীবনে যাই কিছু করো না কেন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো খুশি থাকা। পরদিন ছেলেটি স্কুলে যায় এবং তার টিচার ক্লাসের সবাইকে একটা প্রশ্ন করেন। আচ্ছা বাচ্ছারা, তোমরা এক এক করে বলতো দেখি, তোমরা বড় হয়ে কে কি হতে চাও? অন্যান্য বাচ্চাটরা যেখানে কেউ বললো, ডক্টর হতে চাই, তো কেউ বলল পাইলোট হতে চাই। সেখানে সেই বাচ্চা ছেলেটি বলল, আমি বড় হয়ে খুশি হতে চাই। তার উত্তরটা শুনে তার টিচার তাকে বলল, না না, তুমি আমার প্রশ্নটা ঠিক বুঝতে পারোনি। তার পাশে বাচ্চা ছেলেকে উত্তরে টিচারটিকে বলে, না না ম্যাম আপনি জীবনটাকে বুঝতে পারেন নি।

আমরা জীবনে যেটাই করি না কেন, সেটা কোন খারাপ কাজ হোক বা কি ভালো কাজ হোক, আলটিমেটলি করি খুশি থাকতে পারার জন্য। কিন্তু আপনি যা চাইছেন কখনই সেটা সব সময় জীবনে পাবেন না। তাই এই সমস্যার সাথে লড়াই করার জন্য একটা হাতিয়ার থাকা অত্যন্ত দরকার। আর সেই হাতিয়ারটাই হল’ আমি খুব খুশি’ এই তিনটি শব্দ। পরবর্তিতে যখন ছোটখাটো কারণে আপনার মন খারাপ হবে, যেটা আপনি লজিকেলি জানেন, যে এইটুকুর জন্য এতটাও মন খারাপ করা উচিত না। তখন একবারের জন্য জাস্ট এই হাতিয়ারটা একবারের জন্য ব্যবহার করে দেখুন। আর সত্যি কাজ হল কি না ফিরে এসে আর্টিকেলটার নিচে কমেন্ট করে আমাদের অবশ্যই জানাবেন। কারণ আপনাকে সাহায্য করতে পারাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য।

অসম্ভব সুন্দর এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন।

আরও পড়ুন – একা বাঁচার উপায়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *