সফল মানুষদের সকালের ৬টি অভ্যাস যা বদলে দিবে জীবন: হ্যালো ফ্রেন্ডস আজকে আমি Hal Elrod এর “The Miracle Morning” বইটি থেকে ছয়টি মর্নিং হ্যাবিট নিয়ে আলোচনা করবো। যে অভ্যাসগুলো পৃথিবীর সমস্ত সাকসেসফুল মানুষরাই তাদের জীবনে এপ্লাই করে থাকেন। তো নিজের জীবনকে বেটার করে তোলার জন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে। যারা জানেন না যে সকালে ঘুম থেকে উঠে করনীয় কী বা কি করলে কাজের মনযোগ বাড়বে? তারা অবশ্যই পড়বেন পুরোটি।
মাত্র কুড়ি বছর বয়সে Hal Elrod তার কোম্পানির টপ সেলসম্যান হয়ে উঠেছিলেন। তার রিলেশনশিপ ঠিকঠাক চলছিল, ফ্যামিলি হ্যাপি ছিল এবং তিনিও খুশি ছিলেন। অর্থাৎ সবকিছু ভালই চলছিলো।
লেখকের জীবনে কঠিন পরীক্ষা
লেখকHal Elrod যখন বক্তৃতা শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন তার এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। নেশায় আচ্ছন্ন কোন এক ব্যক্তি ৭০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালিয়ে এসে তার গাড়িতে ধাক্কা মারে। যার ফলে এত বড় এক্সিডেন্ট হয় যাতে হাত-পা ভেঙে যায় এমনকি ৬ মিনিট পর্যন্ত তার নিঃশ্বাসও বন্ধ হয়ে গেছিল। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি প্যারামেডিকেল পৌছে রিভাইভ করে হসপিটালে নিয়ে যান তাকে। তিনি ৬ দিন পর্যন্ত কোমায় ছিলেন।
যখন তিনি সুস্থ হন, তখন ডাক্তাররা বলেন যে, “তার ব্রেন পারমানেন্টলি ড্যামেজ হয়ে গেছে। সে কখনোই আর হাঁটতে পারবে না। “কথাগুলো শুনে তিনি শকড এবং স্যাড হয়ে যান। কিন্তু Hal Elrod মনে করতেন যে, আমাদের যে কোন নেগেটিভ রেজাল্ট যেগুলোকে আমরা চেঞ্জ করতে পারব না, সেগুলি ভেবে নেগেটিভ ফিল করা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য অর্থাৎ যখনি তোমার সাথে কিছু নেগেটিভ ঘটবে তখন ৫ মিনিটের একটি টাইমার সেট করে নাও। এই ৫ মিনিটের মধ্যে রাগ দেখাও, কাঁদো, চিল্লাও, স্যাড থাকো বা যে কোন কিছু করে নাও।
কিন্তু পাঁচ মিনিট পরে সামনে এগিয়ে যাও। পজিটিভ সলিউশন খুঁজে বার কর। কারণ অ্যাস অ্যান ইনটিলিজেন্ট ম্যান ৫ মিনিটের বেশি নেগেটিভ ভাবনা নিয়ে পড়ে থাকা আর পজেটিভ সলিউশন না ভাবা এগুলি জাস্ট আমাদের সিচুয়েশন আরো খারাপ করে তোলে। আর এই কথাটি Hal Elrod তখন কাজে লাগান। চিন্তা করা বন্ধ করে তার পরিস্থিতি দেখে একসেপ্ট করে নেন।
আর ভাবেন যে এখন আমার মধ্যে দুটি জিনিসই হতে পারে- প্রথমত ডাক্তাররা যেমন বলেছেন যে হ্যাঁ আমি আর কখনই হাটতে পারবো না। যদি এটা হয়, তাহলে আমি বসেই সব থেকে হ্যাপি হ্যান্ডিক্যাপ মানুষ হয়ে দেখাবো। আর না হলে আমি ডাক্তারের কথা ভুল প্রমাণিত করে আবার হেঁটে দেখাবো।
লেখকের বাস্তব উপলব্ধি
এই দুটো পজিটিভ সলিউশন ভেবে তিনি নিজের স্ট্রেস এবং নেগেটিভ থটস একেবারে পুরোপুরি শেষ করে ফেলেন। তার এই পজিটিভ অ্যাটিটিউড এর ফলে তার হেলথ খুবই তাড়াতাড়ি ঠিক হতে থাকে। এতোটাই তাড়াতাড়ি যে ডাক্তাররাও বিলিভ করতে পারছিলেন না।
এর মাত্র তিন সপ্তাহ এর মধ্যেই তিনি পুনরায় হাঁটতে সক্ষম হন। এই সব কিছুর পর তার লাইফ পুনরায় ঠিকঠাক ও আরো বেটার হতে শুরু করে। এবার তিনি আরো বেশি কনফিডেন্সের সাথে লাইফে এগোতে থাকেন। যার ফলে তিনি তার কোম্পানির প্রচুর সেলস রেকর্ড ব্রেক করে ফেলেন। প্রচুর টাকার মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে ফেলেন। বিয়ে করেন। নতুন একটি বাড়িও করে ফেলেন।
লেখকের জীবনে আবার চড়াই উতরাই
সবকিছু একদম বেস্ট হয়ে উঠতে থাকে। কিন্তু আবারও তার জীবনে বড় সমস্যা আসে। ২০০৭ এ ইকোনমি ক্রাশ এর ফলে তার ব্যবসা রাতারাতি ডুবে যেতে থাকে। তিনি সে সময় তার জীবনের সব থেকে কঠিন মুহূর্ত উপভোগ করেন।
Hal বলেন যে, এই সময় তার সাথে একের পর এক খারাপ সমস্যা ঘটতেই থাকে। আর ক্রমশ তিনি গরিব থেকে গরিবতর হয়ে উঠছিলেন। তখন তার ওয়াইফ তাকে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে সাজেশন নেওয়ার কথা বলেন।
তিনি এই খারাপ সময়ও প্রচুর আয় করছিলেন। আর লাইফে অনেক কিছু ভালও করছিলেন। অথোর তাকে তার লাইফের সব পরিস্থিতির কথা বলেন এবং কিছু টিপস দিতে অনুরোধ করেন। তখন তার বন্ধু বলে তোমার এখন কোনো ধরনের বিজনেস অ্যাডভাইস এর দরকার নেই।
সকালের অভ্যাস কেমন হবে?
জাস্ট দুটি কাজ অভ্যাস করা দরকার। প্রথমত, রোজ সকালে তাড়াতাড়ি উঠে এক্সারসাইজ কর। আর দ্বিতীয়ত, ডেইলি কোনো সেলফ ইমপ্রুভমেন্ট এর বই পড়। Hal এর এই দুটি টিপস একদম পছন্দ না হওয়ায় তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। তার কাছে অন্য কোনো অপশন না থাকায় তিনি ঐ দুটি টিপসই প্রাকটিস করার কথা ভাবেন।
তিনি অন্য এক প্রতিবেশীর কাছে জেনেছিলেন যে, সকালে তাড়াতাড়ি উঠে কিছু স্পেসিফিক থিংজস প্রাকটিস করা হলে সহজেই সাকসেস্ফুল হওয়া যায়। কারণ সকালে যে তাড়াতাড়ি উঠে তার কাছে সারাদিনে ভালো কিছু করার জন্য প্রচুর টাইম থাকে। এবং একটি ভালো মর্নিং ভিজুয়াল আমাদের ব্রেন এবং মাইণ্ডের সাথেও সেক করে। যার ইফেক্টে আমাদের পুরো দিনই ভালো কাটে।
এই কারণে Hal ডিসাইড করেন যে, তিনি সকালে উঠে এক্সারসাইজ নয় তিনি ফাইন্ড আউট করবেন সেই সব অভ্যাসগুলি অর্থাৎ Best of best অভ্যাসগুলি যেগুলি প্রত্যেক সাকসেসফুল মানুষ পারসোনালিটি ডেভেলপমেন্ট ও নিজেকে আরো সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য করে থাকেন। আর সেই অভ্যাসগুলি নিজ জ্ঞানে ডেইলি করতে থাকবেন।
এরপর তিনি রিসার্জ করেন এবং ১ লাখ ৬টি ইম্পরটেন্ট এবং কমন টপিক খুঁজে বের করেন। যেগুলি অলমোস্ট সব সাকসেসফুল মানুষে্রা ফলো করে থাকে। আর এই ছয়টি অভ্যাস খুব বেশি ইম্পপ্যাক্টফুল ছিল। এই কারণে তিনি এই ছয়টি অভ্যাস নিজ জ্ঞানে প্রাকটিস করতে শুরু করেন।
Six Miracle Morning Habits
যখন তিনি ছয়টি অভ্যাস শুরু করেছিলেন তখন তার ৫০ হাজার ডলার ধারে ছিল। তার বাড়ি হাতছাড়া হতে চলেছিল এবং তিনি অস্বাস্থ্যকর এবং মোটা ছিলেন। এই ছয়টি অভ্যাস শুরু করার দু’মাসের মধ্যে তার ইনকাম ডবল হয়ে যায়। তার ঘর বাঁচিয়ে নেন তিনি এবং একদম ফিট হয়ে একটি আল্ট্রা ম্যারাথন এ দৌড়ান তিনি। সেই সাথে খুবই খুশি ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। হ্যা সেই ব্যক্তিই যাকে ডক্টরসরা বলেছিলেন যে, কোনদিন হাঁটতে পর্যন্ত পারবে না।
তিনিই আলট্রা ম্যারাথনে দৌড়ান। আর সবকিছু এত ফার্স্ট হতে থাকে যে, এই 6 টি অভ্যাসকে তিনি “Six Miracle Morning Habits” নাম দেন। কারণ এই সবকিছুই তার কাছে কোনো মিরাক্কেল এর থেকে কম কিছু ছিল না। তো এখন আমি এই ছয়টি সকালের অভ্যাস সম্পর্কে আপনাদেরকে বলবো। যেগুলো আপনাদেরও প্রাক্টিসে আনতে হবে। অর্থাৎ এই ছয়টি হ্যাবিটসকে সহজে মনে রাখার জন্য একটি ছোট্ট ফর্মে নিয়ে এসেছেন ‘Savers’।
Habit No 1: S – Silence
আপনি হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুনিয়ার সমস্ত টেনশন নিজের মাথায় নিয়ে নেন- নিউজ পেপার পড়ে, ফেসবুক চেক আউট করে। যাই হোক, সাকসেসফুল মানুষেরা সকালে উঠে সাইলেন্স মুড এ চলে যান- Meditation, Yuga বা Prayer করার মাধ্যমে। যা তাদের ব্রেনকে শান্ত করে সুন্দর দিনের সূচনা করতে সাহায্য করে।
প্রথমে অথোর ও আপনাদের মত মনে করতেন যে মেডিটেশন এর সাহায্যে সাকসেস পাওয়ার দূর দূর পর্যন্ত কোনো লিংক নেই। তারপর অনেক রিসার্চ এর পর তিনি জানতে পারলেন যে, মেডিটেশন হলো এমন একটি অভ্যাস যেটি সাকসেসফুল মানুষদের আগে যাওয়ার জন্য সব থেকে বেশি সাহায্য করেছে।
এমনকি একজন বিলিয়নিয়ার, ম্যানেজার Ray Dalio বলেন যে, মেডিটেশন তার ফাইন্যান্সিয়াল সাকসেস এর নাম্বার ওয়ান চাবি। আর শুধু তিনিই নন, পৃথিবীর সব থেকে বড় কোম্পানির CEO রাও তাদের ব্রেণকে পিক পারফর্মেন্স এ কাজ করার জন্য ও ডিসিপ্লিন রাখার জন্য মেডিটেশনকে ক্রেডিট দেন।
Habit No 2: A – Affirmation
এটি একটি পাওয়ারফুল টেকনিক। যেটা প্রচুর সাকসেসফুল মানুষ ইউজ করে থাকেন। এফারমেশন হলো একটি পজিটিভ স্টেটমেন্ট নিজেকে বারবার বলা। যার ফলে আমাদের সাবকন্সিয়াস মাইন্ড এ কথাটি গেথে যেতে থাকে এবং রিয়েলিটিতেও আমরা সেই রকমই হতে থাকি।
উদাহরণ হিসেবে যদি আপনি নিজেকে বারবার বলতে থাকেন – ” I am a confident person”, ” I am a confident person”. তো একসময় আপনার সাবকন্সিয়াস মাইন্ড এ কথাটি গেথে যাবে এবং আপনি রিয়েলিটিতেও একজন কনফিডেন্ট মানুষ হয়ে উঠবেন।
Habit No 3: V – Visualization
এটিও একটি পাওয়ারফুল টেকনিক যেটি কিছুটা এফারমেশন এর মতোই। এফারমেশনে যেমন আপনি একটি পজিটিভ স্টেটমেন্ট নিজেকে বারবার বলতে থাকেন, সেরকমই ভিজুয়ালাইজেশনে আপনাকে ব্রেইনের সেইসব ইমেজ তৈরি করতে হবে, যেগুলি আপনার লাইফে আপনি করতে চান বা যা কিছু হতে চান। উদাহরণঃ যখন অথোর প্রথমে ম্যারাথন এর জন্য যেতেন তখন তার খুব অসুবিধা হতো।
কিন্তু যখন থেকে তিনি প্রাক্টিসে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে ভিজুয়ালাইজ করতে শুরু করেন যে, তিনি সু পড়ছেন, ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন আর তার মুখে স্মাইল রয়েছে তখন তিনি হ্যাপিলি প্র্যাকটিসের জন্য যেতে পারতেন। এভাবে আপনিও আলাদা আলাদা কাজের জন্য ভিজুয়ালাইজ টেকনিকটি ব্যবহার করতে পারেন।
Habit No 4: E – Exercise
সকালে উঠে এক্সারসাইজ করার বেনিফিট খুবই বেশি। এক্সারসাইজ এর ফলে আপনার ব্রেণে বেশি অক্সিজেন যায় এবং থিংকিং ক্লিয়ার হয়, বেটার ফিল হয়, আপনার এনার্জি লেভেল বেড়ে যায় পুরো দিনের জন্য।
এরকমই অসংখ্য বেনিফিট রয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এসব বেনিফিট পাওয়ার জন্য আপনাকে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি সকালে উঠে কিছু মিনিট ছোটখাটো কিছু এক্সারসাইজ করেই এসব বেনিফিট পেতে পারেন।
যেমন ধরুণ, সকালে উঠে আপনি মাত্র 1 মিনিট জাম্পিং রেস করলেই আপনার এনার্জি, থট ক্লিয়ারিটি, অ্যাওয়ারনেস 10 গুণ বাড়তে পারে।
Next Habit 5: R- Reading
রিডিং মানে অনেকেই ভাবছেন কোনো স্কুল কলেজের বই বা গল্পের বই কিংবা কোন নিউজ পেপার রিডিং। কিন্তু এটি মোটেই না। অ্থোর কোনো সেলফ ইম্প্রুভমেন্ট এর বইয়ের কথা বলেছেন।
যেগুলি আপনার ইন্টেলিজেন্স, নলেজ, স্কিলস অর্থাৎ আপনাকে সব দিক থেকে সব রকম ভাবে ইম্প্রুভ করবে। তাই এটিও একটি ইম্পরটেন্ট হ্যাবিট। যা সব সফল মানুষদের প্রতিদিনের সকালের অভ্যাস।
Last habit 6: S- Scribe
স্কাইব এর অর্থ লেখা। অর্থাৎ আপনার গোলস আপনার ড্রিমস গুলিকে প্রতিদিন লিখে রাখুন। রিচার্ড ব্র্যানসন নামের একজন বিলিয়নিয়ার তিনি বলেন যে, একটি সবথেকে বেস্ট অভ্যাস যেটি আমাকে বিলিয়নিয়ার বানিয়েছে এবং এটা আপনিও করতে পারেন যে আপনার সাথে অলওয়েজ একটি নোটবুক রাখুন।
আর আপনার প্রতি মুহূর্তে আসা থটস, আইডিয়াস, ইম্পর্টেন্ট থিংকস সবকিছু সেই বুকে লিখতে থাকো। এই সিম্পল হ্যাবিটটি আপনাকে ভীষণ হেল্প করবে। তো রোজ কিছুটা টাইম বের করে স্কাইবিং হ্যাবিটটি প্র্যাকটিস করে ফেলুন। কারণ মোবাইল এর থেকে ফিজিকাল বুকস অনেক বেটার।
নিউ হ্যাবিটসকে ফরম করা আমাদের জন্য যতটা বেশি ইম্পরটেন্ট তার থেকেও বেশি ইম্পরটেন্ট খারাপ অভ্যাসগুলিকে ত্যাগ করা। তো আমরা পরবর্তী আর্টিকেল এ পড়ব কিভাবে খারাপ অভ্যাসগুলিকে ত্যাগ করা যায়?
আরও পড়ুন- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় একুপ্রেসার ও মুদ্রা