সন্তান লালন পালনে পিতা-মাতার করণীয় বা শিশুর যত্ন: কিভাবে সঠিক পদ্ধতিতে সন্তান লালন পালন করতে হয়? আমার সন্তান-কথাটি বলতে কতই না মধুর লাগে। মা-বাবার সবচেয়ে প্রিয়জন ও সবচেয়ে আপনজন হলো তাদের সন্তান।
কিন্তু “সন্তান লালন পালন” এর সঠিক পদ্ধতিগুলো জানা না থাকলে সাকসেসফুল প্যারেন্ট হওয়া যায় না। শুধু সন্তান জন্ম দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না, তাকে একজন সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই পিতামাতার সন্তুষ্টি মিলে। এই আর্টিকেলটি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে ১০০% পরিবর্তন করে দিবে এবং পাশাপাশি “সন্তান লালন” পালন এর সঠিক পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে আপনাকে অবগত করিয়ে একজন সাকসেসফুল প্যারেন্ট হতে সাহায্য করবে।
শিশু অনাবাদী, তাকে আবাদ করতে হয় দক্ষ চাষীর মতো। একজন দক্ষ চাষী যেমন পারে জমিতে সোনার ফসল ফলাতে তেমনি প্যারেন্টিং এ দক্ষ অভিভাবকরাও পারেন সোনার সন্তান গড়ে তুলতে। কিন্তু আপনি যদি প্যারেন্টিং এ অভিজ্ঞ না হন এবং সন্তানকে নিয়ে খুবই দুঃচিন্তায় ভোগেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। শেষ অব্দি পড়তে থাকুন। আশা করছি ভালো কিছু দিতে পারবো।
শিশুদের বৈশিষ্ঠ্য
মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে চলুন দেখে নেই বাচ্চাদের কিছু কমন বৈশিষ্ট্য-
জেদী – এ ধরনের শিশু চাওয়া মাত্র পাওয়াতে বিশ্বাসী। এর উল্টো হলে মাটিতে গড়াগড়ি পর্যন্ত খায়, আবার যেকোন অঘটন ঘটার হুমকিও দেয়।
বদমেজাজী – এরা সামান্যতেই রেগে যায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে। ঘরের জিনিস ভাঙাভাঙিতে এরা ওস্তাদ।
কাঁদুনি – ধমক তো দূরের কথা, সামান্য চোখ রাঙানিতে এরা কেদেকেটে হুলস্থুল করে ফেলে। কাদবে একগুণ কিন্তু চিল্লানি দিবে দ্বিগুণ।
অলস – অনেকটা মুখগোমড়া টাইপের হয়। মুখ খুলে হাসি দিতেও কষ্ট মনে করে। বকাঝকা এরা অনায়াসে গিলে ফেলে।
চঞ্চল – বেশিরভাগ শিশুর মধ্যেই এ গুণটি দেখা যায়। এরা বেশ বাচাল ও কৌতুহলী হয়। এদের শেখায় আগ্রহ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
লাজুক – আজকালকার বাচ্চাদের মধ্যে এটা খুব কমই দেখা যায়।। এরা বেশ ঘরকুনো টাইপের হয়। ক্লাসে ফাস্ট বেঞ্চে বসতে যেখানে অন্যরা রীতিমত মারামারি করে ফেলে সেখানে এরা সবচেয়ে পিছনের বেঞ্চে বসা নিয়ে তা করে।
ভাবুক – অনেকটা কবি বা বিজ্ঞানমনস্কদের মত হয়। বয়স ৫ কিন্তু মনে হয় ৪০ বছরের কোন রাজনীতিবিদ। এদের কাছ থেকে উত্তর পেতে আপনাকে বেশ অপেক্ষা করতে হবে।
শিশুর যত্ন:প্যারেন্টিং টিপস
এতক্ষণ যে দোষ বা গুণগুলো তুলে ধরলাম তা নির্দিষ্টভাবে কারো মাঝে স্থায়ী নয়। পরিবেশ ও বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন জনের কাছে তা বিভিন্নভাবে প্রকাশ হতে পারে। তবে এই গুণ বা দোষগুলোর জন্য কিন্তু শিশু মোটেও দায়ী নয়।
দায়ী হলো- আপনি ও আপনার আশেপাশের পরিবেশ। কারণ শিশুরা বাবা-মায়ের কথা শুনতে না চাইলেও তারা বাবা-মা দের অনুকরণ করে। তাই রাগ, জেদ, ঝগড়া ইত্যাদি খারাপ গুণগুলো যদি আপনার মাঝে থাকে, তাহলে আপনার বাচ্চাও এগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজের মধ্যে সঞ্চার করার চেষ্টা করবে।
যাই হোক, সমস্যা যেখানে, সমাধানও রয়েছে সেখানে। আপনার শিশু যদি বস বেবি এর মতো হয়, তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনাদের হতে হবে হ্যাকার প্যারেন্টস। আর এজন্য যেটি সবচেয়ে প্রয়োজন তা হলো ধৈর্য্য । কেননা হ্যাকাররা ধৈর্য্যের জন্য জগৎবিখ্যাত।
শিশুর যত্নে এই ধৈর্যের সাথে প্যারেন্টিং এর জন্য আপনাকে যে কাজগুলো করতে হবে,
সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব Life Management Coach- Parikshit Jobanputra এর বই Successful Parenting থেকে। চলুন তবে শুরু করা যাক-
Idea 1: 5-A law
প্যারেন্টিং টিপস এর সঠিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে প্রথমেই আপনাকে 5-A Law অনুসরণ করতে হবে। 5-A Law হলো – Accept, Appreciate the work, Adventure, Advice from others, Ask । এবার আসুন 5-A Law সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানি।
Accept- বাচ্চারা আপনার সাথে Argument বা তর্ক করবে, আপনার অভিমত মানবে না, এটাই স্বাভাবিক এবং এ বিষয়টি আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। এতে আপনি কিছুটা দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হবেন।
Appreciate the work- ভালো কাজের জন্য আপনি আপনার সন্তানকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। যদি সে পরীক্ষায় 80% মার্কস পায়, আর আপনার আকাঙ্ক্ষা যদি 90% হয়, তবুও তার এই প্রচেষ্টাকে উৎসাহ দিতে হবে এবং গ্রহণ করতে হবে। এতে করে সে আপনাকে Positively নিবে এবং নিজের প্রতি তার আস্থা বাড়বে।
Adventure- বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা, দৌড় প্রতিযোগীতা, লম্বা ভ্রমণ ইত্যাদি Adventure মূলক কাজের সাথে যুক্ত থাকলে বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে সাহস ও ভরসার সঞ্চার করবে এবং বন্ধুদের সাথে ভয়ানক adventure এ যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
Advice from others- উপদেশ দেয়ার কাজটি শুধু আপনি একাই নিবেন না, বরং আপনার প্রতিবেশি এবং আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যাদের কথা আপনার বাচ্চা শুনতে পছন্দ করে তাদের মাধ্যমে উপদেশ দিলে সেটা কার্যকরী হয়।
Ask- সরাসরি কোন বিষয় কিশোর বা বাচ্চাদের উপর চাপালে তর্ক করার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই সরাসরি কোন বিষয় চাপিয়ে না দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করুন এভাবে, তুমি এখনি পড়তে বস না বলে, বলেন- তুমি আজকে চারটার সময় পড়তে বসবা না ছয়টার সময় পড়তে বসবা। তাহলে সে ধীরে ধীরে দায়িত্ববান হওয়া শুরু করবে এবং তাকে মূল্যায়ন করার জন্য সে আপনাকেও মূল্যায়ন করা শুরু করবে।
আপনি যদি উপরের ৫ টি বিষয় পালন করতে পারেন, তাহলে আপনার বাচ্চার মধ্যে Argument (তর্ক), Anger (রাগ), Arrognace (অহংকার), Aloneness (একাকীত্ব) ইত্যাদি বিষয়গুলো কমে যাবে এবং আপনার কথা সে ধীরে ধীরে শুনতে শুরু করবে। এরই মধ্য দিয়ে আপনি সন্তান লালন পালন এর সঠিক পদ্ধতিগুলোর প্রথম ধাপ অতিক্রম করছেন।
Idea 2: Be Cool
শিশুর যত্নের বা সন্তান লালনে ঠাণ্ডা মাথা খুব জরুরি। একটা বিষয় প্রায় দেখা যায় যে বাবা মা নিষেধ করা সত্ত্বেও সন্তান যখন, সেই কাজটি করে কষ্ট বা ব্যথা পায়, তখন উল্টো এসে মারে। কিছুটা এভাবে – তোকে কত করে বললাম গাছে উঠিস না, পড়ে গেলি তো! কেমন মজা। তোর আরো ব্যথা পাওয়ার দরকার আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। না ভুলেও এটি করবেন না,কারণ সেতো এমনিতেই ব্যথা পেয়েছে তার উপর আপনি কাটা ঘা এ নুন ছিটাচ্ছেন।
এতে সে মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট পাবে এবং গাছে উঠাতো দূরের কথা আরো অন্যান্য নতুন কাজ করতেও সে ভয় পাবে। কিন্তু আপনি যদি তার কাছে গিয়ে এভাবে বলতেন – বাবা ব্যথা পেয়েছ। দাঁড়াও একটু বরফ দিয়ে দেই , এরপর গাছে চড়ার আগে আমাকে অবশ্যই সাথে নিও, একা একা চড়ো না। Trust me পরের বার সে আপনার কথা অবশ্যই শুনবে।
আরেকটি বিষয় বেশিরভাগ গার্ডিয়ানরা যেটা করে থাকেন, তা হলো নিজের সন্তানের ভুলটি এড়িয়ে গিয়ে অন্যের সন্তানকে শাসন করা। যেমন – আপনার সন্তানের সাথে যদি কারো ঝগড়া হয় সেক্ষেত্রে বিচার করতে হবে নিরপেক্ষ। যার ভুল তাকে বুঝিয়ে বলবেন, আর যদি আপনার সন্তানের ভুল থাকা সত্ত্বেও এড়িয়ে যান তাহলে সে আস্কারা পেয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে ঐ কাজটা সে আবারো করবে।
আর ভুলত্রূটি যতই হোক না কেন নিজের বা অন্যের বাচ্চার গায়ে হাত তুলবেন না। আপনার বাচ্চা যেমন কষ্ট পায়, তেমনি অন্যের বাচ্চাও কষ্ট পায়। আর ভুলটা যদি আপনার ভাইবোনের ছেলেমেয়ে করে থাকে তাহলে কি সেই বাচ্চাকে ধমক দিতে পারবেন। না কখনই নয়। তাহলে কেন এই বৈষম্য।
Idea 3: Be Considered
আপনার বেবিকে আপনি কতটা ভালবাসেন তা শুধু আপনার মনেই ভেতরই নয়, কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ করুন। নামের সাথে বাবা, মা, সোনা ইত্যাদি যেটা বলতে ভাল লাগে তাই ধরে ডাকার চেষ্টা করেন। যতকাজই, তার কাছ থেকে করে নিন না কেন, সবটাই হবে আদর- ভালবাসার সাথে। ধমক দিয়ে কোন কিছু করার চেষ্টা করবেন না।
এবার আসি শাসনে। এটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আদরের পাশাপাশি কখনো ধমক দিয়ে বা মেরে কোন কিছু নিষেধ করবেন না, বরং বেশ কয়েকবার বুঝিয়ে বলেন। তারপরও যদি কোন ক্ষতি করে বসে এবং সে ভুল স্বীকার করে, তবে তাকে গ্রহণ করুন। যদি আপনি তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও আপনার পছন্দের ঘড়িটি ভেঙ্গে ফেলার পর সে আপনার কাছে এসে ভুল স্বীকার করে, এক্ষেত্রে তাকে গালাগাল না করে বুঝিয়ে বলেন।
আর যদি গালাগাল করেন – তবে এ থেকে সে শিখবে সত্য কথার দাম নেই, মিথ্যা বলাই ভাল। আর যদি মনে করেন যে, ধমকে কাজ হবে, তবে তা ভুল । বরং দুই টা বিষয় ঘটতে পারে- হয় সে দ্বিগুণ ক্ষতি করবে, নয়তো সে চুপ মেরে যাবে এবং নতুন কিছু শেখার কৌতূহল হারিয়ে ফেলবে।
Idea 4: Religious Beliefs & Sharing
শিশু শিক্ষার সঠিক পদ্ধতি গুলোর মধ্যে চতুর্থ ধাপের মধ্যে রয়েছে এটি। সমাজের অন্যায় কাজগুলো থেকে ভাল মানুষেরা বিরত থাকে দুটি কারণে-এক ধর্মীয় ভয়, দুই আইন। তাই বাচ্চাকে ছোট থেকে ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত করুন। বাচ্চারা তো পরিবারে বড়দের দেখে শেখে তাই সদাচারণ শেখানোর আগে নিজেকেও একটু যাচাই করে দেখুন। নয়তো বাচ্চা উল্টো বলবে, আব্বু এটাতো তুমিই করো না আর আমাকে বলছো। কি লজ্জাকর ব্যাপার তাই না।
শেয়ারিং বিষয়টা বাচ্চারা ছোটবেলায় যা শেখে সেটাই সারাজীবন পালন করে। তাই কিভাবে অন্য ভাই-বোন,বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে খেতে হয় তা শেখানো খুব জরুরী। আবার ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়ার সময় তা বাচ্চার হাত দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে তার মনের মধ্যে একটা সাহায্যের অনুভূতি সৃষ্টি হবে। শেয়ারিং বিষয়টা, যে শিশুর মধ্যে যত বেশি হয়, সে শিশু তত দ্রুত উন্নত ও ভালো মানুষে পরিণত হয়।
Idea- 5: Be Answered & Storyteller
আগ্রহী করে তোলা ও গল্পের মাধ্যমে শেখানো: শিশুদের আগ্রহের কোন সীমা নেই। তারা সব অজানা বিষয় জানতে আগ্রহী। তাদের এই আগ্রহটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। সে যত প্রশ্ন করুক না কেন, আপনি ধৈর্য্যের সাথে সবগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন।
সে যদি সেক্সূয়াল কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করে বসে, তবে একটু দূর দিয়ে বলার চেষ্টা করুন, ভুলেও মিথ্যা বলবেন না, নইলে তো বুঝতেই পারছেন। আর মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিশুদের সেক্সূয়াল বিষয়ে জ্ঞান থাকাটা খুবই জরুরী, এতে সে অনেক আগেই খারাপ কাজ থেকে বিরত হয়ে যায়। আশা করি, এরই মধ্যে “শিশুর যত্ন” এর জন্য আপনি আপনার পূর্বের ভুলত্রুটি গুলো ধরতে পেরেছেন।
গল্পের মাধ্যমে শেখানো শিশুদের স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। যেমন- আপনার শিশুর যদি হাত না ধুয়ে খাওয়ার বদঅভ্যাস থাকে, তবে তাকে সরাসরি ধমক দিয়ে হাত ধুয়ে খাও না বলে, এটা বলেন যে- আমার একবন্ধুর মেয়ে হাত না ধুয়ে খেতো, তো হঠাৎ একদিন তার পেট খারাপ হয়। ডাক্তার অনেক গুলো ইনজেকশন ও দিয়েছিল। দেখবেন আপনার এই গল্পের মাধ্যমে সে নিজে থেকে শিখে নিবে। আর এটাই বেশি কার্যকর।
Idea 6: Be Funny & Motivational Speaker
শিশুমন খেলাচ্ছলে বা আনন্দের মাধ্যমে শিখতে বেশি আগ্রহী। তাই গল্প, ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে শিশুদের শেখানো খুবই জরুরী। জোর করে ৩ ঘণ্টা পড়ানোর চেয়ে, আধা ঘণ্টা বুঝিয়ে পড়ানো অনেক বেশি কার্যকরী। সচরাচর সচেতন গার্ডিয়ানরা একটা জিনিস বেশি করে থাকেন, সাধারণত রেজাল্ট খারাপ করলে বা মার্কস কম পেলে বাচ্চাদের মারধর বা প্রচণ্ড শাসন করে থাকেন। বিখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরী এটিকে বিষের চেয়েও মারাত্মক বলেছেন। যা আমরা আপাত দৃষ্টিতে বুঝি না।
তাই বাচ্চাদের ধমক না দিয়ে বরং আশ্বাস দেন যে পরবর্তী পরীক্ষায় ভাল করবে তুমি, তুমি পারবে আমি জানি। যত বেশি পারেন তাকে মোটিভ করেন। হয়তো সে ম্যাথে দূর্বল, তাই বলে তাকে কখনই বলবেন না তুমি তো ম্যাথে দূর্বল, তাই ম্যাথ বেশি করে করো। এতে করে তার ব্রেণে এটা স্টোর হবে যে, সে আসলে ম্যাথে দূর্বল এবং সে সেটাকে ভয় পেতে শুরু করবে। আর ক্লাসের ফাস্ট বয় ও লাস্ট বয়ের রেজাল্টের মধ্যে পার্থক্যই হল ভয়।
তাই তুমি ম্যাথে দূর্বল না বলে বলুন যে, তোমার মনে হয় ম্যাথ বেশি করে চর্চা করা দরকার। এতে সে সাহস নিয়ে পড়তে বসবে। আপনি হয়তো আশেপাশে তাকালে একটি বিষয় ভালভাবে দেখতে পাবেন, যে ছাত্র সব ক্লাসেই ছোট থেকে অনেক ভাল ছিল অথচ পরবর্তীতে দূর্বলদের সারিতে চলে গিয়েছে আবার অনেক দূর্বল ছাত্র যারা ব্যাকবেঞ্চের তারা অনেক ভাল ভাল জায়গায় পড়াশুনা করে চাকরি করছে।
সৃষ্টিকর্তা যে কাকে কখন কি অবস্থায় ফেলবে তিনিই ভাল জানেন। তাই ছোট থেকে আপনার শিশু যতগুলো পড়াশুনা মুখস্ত করল, যতগুলো ফার্স্টের সার্টিফিকেট অর্জন করল তা হিসেব না করে বরং এটা দেখার চেষ্টা করেন যে, সে মানুষের গুণাবলী অর্জন করছে কিনা। কারণ আপাতদৃষ্টিতে তারা আপনাকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিতে না পারলেও এক সময় তারা ঠিকই আপনাকে সমাজের কাছ থেকে সুনাম এনে দেবে এবং শেষ বয়সেও তাদের কে কাছে পাবেন।
Idea 7: Give Freedom
জীবনের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য পরিশ্রম জরুরী আর পরিশ্রমকে জ্বালানী বা ফুয়েল হিসাবে সাহায্য করে মোটিভ বা আত্মবিশ্বাস। স্টীভ জবস, বিল গেটস, জ্যাক মা’র মত বিখ্যাত সব ব্যক্তি যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন ভাল ছিল না, অথচ আজ তারা সাফল্যের চূড়ান্তে পৌছেছেন শুধুমাত্র তাদের বিশ্বাস ও পরিশ্রমের মাধ্যমে।
তাই সন্তানকে ছোট থেকে বিশ্বাসী করে তুলুন। যে কোন কাজে ব্যর্থ হলে তাকে বারবার উৎসাহ দিন, বাবা তুমি পারবে। এটা আমার বিশ্বাস। বিশ্বাস করেন, আপনার এই ছোট কথাটি তার মনে যে শক্তি যোগাবে তা পৃথিবীর অন্য কেউ দিতে পারবে না।
গায়ের রঙ বা শারীরিকভাবে ক্ষুন্ন শিশুদের আমরা বেশ হাইলাইট করতে পারদর্শী। কোন শিশু ফর্সা বা কালো কিংবা নাক বোচা হওয়ার জন্য তার তো কোন দোষ নেই। তাহলে কেন আমরা তাকে নিয়ে মজা করি, তার আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা করি। সে দেখতে যেমনি হোক না কেন, সেও তো একজন মানুষ এটাই বড় পরিচয়। নিজের শিশুর যত্ন নিয়ে আপনি যেমন চিন্তিত তেমনি আরেক মা চিন্তিত।
Idea 8: Healthy Life
শিশুর যত্ন ও শিশুর মেধাবিকাশ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। আজকালকার বাচ্চারা কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের গেমসের প্রতি একটু বেশিই ঝুকে পড়ছে, এতে করে তারা বাইরে খোলা মাঠে-মুক্ত বাতাসে খেলার কথা ভুলেই যায়।
তাই পিতা-মাতা হিসেবে আপনার করণীয় হল – দিনে অন্তত এক বা দেড় ঘণ্টা বাচ্চাদের মাঠে খেলার সুযোগ করে দেয়া। খেলতে গেলে পড়ার সময় নষ্ট হবে এ ধারণা একদমই ভুল। বরং সে মানসিক ও শারীরিকভাবে পড়ার জন্য প্রস্তুত হবে। তবে এক্ষেত্রে ভাল খেলার সাথী নির্বাচন আবশ্যক ।
Idea 9: Proper Nutrition
শিশুর সঠিক বেড়ে ঊঠা ও উন্নত ব্রেনের বিকাশ নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম খাবারের বিকল্প নেই। ডাক্তারের পরামর্শ মত সুষম খাবার ঠিকমত দিতে হবে এবং মাসে একবার ডাক্তার দেখানো ভাল। শিশুর পুষ্টির জন্য সবুজ শাকসব্জী, ফলমূল, দুধ, ডিম, ইত্যাদি প্রোটিন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার দিতে হবে।
Idea 10: Spend Time With Baby
আজকে আপনি তাকে কি পরিমাণ সময় দিচ্ছে, সেটার উপর নির্ভর করছে, সে ভবিষ্যতে আপনাকে কতটুকু সময় দিবে। কাজের বুয়া বা ডে-কেয়ারে শিশুকে দিয়ে যদি ভাবেন যে, আপনার দায়িত্ব শেষ, তাহলে ধরে নিন বুড়ো বয়সে আপনার দায়িত্ব নেয়ার কেউ থাকবেনা । আপনারো স্থান হতে পারে কোন বৃদ্ধাশ্রমে।
সন্তানের সাথে যত ভাল ভাল সময় কাটাবেন সবটাই তার ব্রেনের স্থায়ী স্মৃতিতে জমা হবে এবং যে চাইলেও আপনাকে ভুলতে পারবে না, মায়ার টানে আপনার কাছে ছুটে চলে আসবে। যেসব বাচ্চা অন্যদের তুলনায় একটু ধীরগতির তাদের তুলনামূলক বেশি সময় দিতে হবে। তাদের সমস্যা বুঝায় চেষ্টা করে সমাধান করতে হবে। Tare Zameen Par Movie তে ঈশানের উল্টো দিকে লেখার সমস্যাটা প্রথমে কেউ ধরতে পারেনি ।
কিন্তু আমির খান তার পিছনে সময় ব্যয় করে সেই রহস্য আবিষ্কার করেছিল এবং স্কুলের বেস্ট পেইন্টার খেতাবটা ঈশাণ পেয়েছিল আমিরখানের চেষ্টায় । সৃষ্টিকর্তা সবার মধ্যে কিছু অসাধারণ গুণ দিয়েছেন, যারা এটা আবিষ্কার করতে পারে তারাই আসলে এর মর্মটা বুঝে।
পুরো লেখাটি ভিডিওতে দেখতে, নিচের ভিডিওটি ক্লিক করুন-
সবশেষে কয়েকটি কথা না বললেই নয়, গুগুলকে প্রায় প্রতিনিয়তই অধিকাংশ মানুষই জিঙ্গেস করেন, কিভাবে সন্তান সঠিকভাবে লালন পালন করা যায়? আশা করি, এই আর্টিকেলটিতে আমরা কোন অপূর্ণতা রাখি নি। “শিশুর যত্ন” এর এই ১০ টি পদ্ধতিই আপনাকে Successful Parent এ পরিণত করবে। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় একুপ্রেসার ও মুদ্রা