তুমি কি জানো, মধ্যরাতে রঙিন স্বপ্ন দেখে কীভাবে জেগে উঠতে হয়? এবং তুমি কি জানো, তোমার বেডের পাশে কাগজ আর কলম না থাকলে ওই স্বপ্ন তুমি কীভাবে মনে রাখবে? আমার যখন ২৩ বছর বয়স, তখন এ রকম স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম। হঠাৎ করে যখন আমি জেগে উঠলাম, ‘তখন চিন্তা করছিলাম, আমরা কি পুরো একটি ওয়েব পেজ ডাউনলোড করতে পারি শুধু এর লিংকটা দিয়ে?’
তখনই আমি একটি কলম ও খাতা নিয়ে লেখা শুরু করে দিলাম। মাঝেমধ্যে এভাবে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে জেগে উঠতে হয়। আমি মধ্যরাত পর্যন্ত সময় ব্যয় করেছি চিন্তাভাবনা করতে। আমি আমার উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি ব্যাপারটি নিয়ে। তিনি আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তুমি চালিয়ে যাও, তুমি পারবে।’ কখনো চিন্তা ছিল না আমরা একটি ‘সার্চ ইঞ্জিন’ তৈরি করতে পারব। কিন্তু আমাদের চেষ্টা দিয়ে সফল হলাম। এভাবেই গুগলের জন্ম।
যখন আমি মিশিগানে ছিলাম, তখন চিন্তা করতাম, কীভাবে স্বপ্নকে বাস্তবে আনা যায়। আমি বিভিন্ন কর্মশালায় গিয়ে নিজেকেই নিজে অনুপ্রাণিত করেছি। আমি মনে করি, স্বপ্ন কখনো হারায় না। সাময়িকভাবে লুকিয়ে থাকে মাত্র। যদি আমরা কঠোর পরিশ্রম করতে পারি, আর সেই পরিশ্রম যদি কোনো লক্ষ্য ঠিক রেখে করা যায়, তবে সমাধান আসবেই আসবে।
আমি মনে করি, উচ্চাশা সফল করা সম্ভব। সফল করতে অনেক বেশি উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তোমাকে তোমার সঙ্গে মৃদু প্রতিযোগিতা করতে হবে প্রতিনিয়ত। সর্বোচ্চ ভালো মানুষেরা বড় বড় চ্যালেঞ্জের সঙ্গে কাজ করতে চান। যেমনটি গুগলে হয়েছিল। আমাদের উদ্দেশ্য, পৃথিবীর সব তথ্য একত্র ও বিশ্বজনীন করা এবং সহজে যাতে ব্যবহার করা যায়।
আমি ও আমার সহযাত্রীরা যখন গুগলে কাজ শুরু করলাম, তখন ভীষণ চিন্তায় ছিলাম, আমার পিএইচডি যেন থমকে না যায়! কিন্তু আমি পিএইচডি সম্পন্ন করেছি। সুতরাং তোমাকে তোমার মূল রাস্তায় থাকতে হবে, তারপর তোমার কাজ। এটা অনেকটা বৃষ্টির সময়ের মতো। মানে, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটার সময় তোমাকে ছাতার চেয়ে নিচের দিকে খেয়াল বেশি রাখতে হবে, না হলে গর্তে পড়ে তোমার শরীর নোংরা পানিতে ভিজে যাবে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে সবাই অনেকটা অলস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনই উপযুক্ত সময় তোমার আলোড়িত হওয়ার। তুমি পারো তা দেখিয়ে দিতে। সুতরাং স্বপ্নে বসবাস করার ইচ্ছে বাদ দিলে চলবে না। কারণ তোমাকে পৃথিবীর দরকার।
কোনো এক সকালে তুমি অনেক আত্মবিশ্বাসী হবে। কিন্তু সৃষ্টির নেশা যদি থাকে, তবে তাকে ভুলে যাওয়া যাবে না। তুমি তোমাকে অন্যের থেকে আলাদা ভাববে এবং মনে করবে, তুমি যে সুযোগ পেয়েছ, কেউ তা পায়নি। সুতরাং তোমাকে এটা শেষ করতে হবে। তোমাকে পার্থক্য করতে হবে অন্যের থেকে তোমার কাজের মাধ্যমে।
তারপর তোমার জীবনই তোমাকে বয়ে নিয়ে বেড়াবে। এতক্ষণ যে অসম্ভব সুন্দর কথাগুলো শুনলেন তা ল্যারি পেজ ২০০৯ সালের ২ মে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বলেছিলেন। চলুন এক নজর দেখে নেয়া যাক ল্যারি পেইজ এর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃতান্ত-
ল্যারি পেইজ এর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃতান্ত
লরেন্স “ল্যারি” পেইজ (Lawrence Larry Page) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ২৬শে মার্চ ১৯৭৩ সালে মিশিগানের ইস্ট ল্যান্সিংয়ে। একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং ইন্টারনেট উদ্যোক্তা এবং গুগল এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০শে জানুয়ারি, ২০১১ সালে তাকে গুগলের প্রধান নির্বাহী ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তিনি চৌঠা এপ্রিল, ২০১১ থেকে দায়িত্ব পালন করেন।
তার বাবা কার্ল পেইজ ১৯৬৫ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাবা ও মা উভয়েই মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন।
ল্যারি তার ছোটবেলা সম্পর্কে বলেন, ” আমাদের বাসায় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং টেকনোলজিক্যাল বইয়ের ছড়াছড়ি ছিলো। ছোটবেলায় আমি সেসব স্বপ্নে মগ্ন থাকতাম। ১২ বছর বয়সেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমি একটি প্রতিষ্ঠান করতে যাচ্ছি। এজন্য বিজনেস ওয়ার্ল্ডকে জানার অদম্য আগ্রহ ছিল আমার।
Stanford University তে পি.এইচ.ডি করার সময় পরিচিত হন সের্গেই বিন এর সাথে। পি.এইচ.ডি তে দুজনে World Wide Web (www) টপিক চয়েস করেন। তারা এমন এক এলগরিদম নিয়ে ভাবতেন, যাতে সব ওয়েবপেজ একত্রে লিঙ্ক হয়ে যাবে এবং জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে পেজগুলো র্যাংক করবে। ১৯৬৬ সালে তারা এরকম এলগরিদম খুজতে সফল হন।
গুগলের যাত্রা
১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গুগলের শুরুটা হয়েছিল এক বন্ধুর গাড়ির গ্যারেজে, যখন তার সার্চ ইঞ্জিনকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিলো তখন সিলিকন ভ্যালির মত বড় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মার্কেটাররা ল্যারিকে ঋণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল।
কারণ তাদের ধারণা ছিল সার্চ ইঞ্জিন থেকে কোন অর্থ আয় করা সম্ভব নয়। এতে ল্যারি ও ব্রিন বিচলিত হলেও বসে ছিলেন না। এই সময় তাদের পাশে দাঁড়ান সান মাইক্রো সিস্টেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেথটোশেইম, তিনি ল্যারি আর ব্রিনকে এক লাখ ডলার দেন। ল্যারি ও ব্রিন পরিবার ও ঋণ থেকে ১০ লাখ ডলার নিয়ে Google Inc Company স্থাপন করেন।
পরের বছর জুন মাসে দুটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গুগলে আড়াই কোটি (২৫ মিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করে। আর ২০০৪ সালে ৮৫ ডলারে গুগল শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ার ছেড়ে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার জোগাড় করে! বিনিয়োগকারীরা যে ভুল করেনি, তার প্রমাণ হলো, মাত্র তিন বছরের মাথায় এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ ডলারে!
বর্তমানে গুগলের রয়েছে প্রায় ১০০ এরও বেশি সার্ভিস এবং প্রোডাক্ট। তন্মেধ্যে গুগলের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত সার্ভিসগুলো হলো – গুগল সার্চ, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড, ব্লগার, গুগল ম্যাপস, গুগল ক্রম, গুগল ড্রাইভ, গুগল ট্রান্সলেট।
আরও পড়ুন- বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রেমপত্র