সৃজনশীল লেখা

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম জেনে পুরো ১০ পান

সৃজনশীল লেখা: আমাদের আজকের এই লেখাটি সৃজনশীলে তোমাকে ১০ শে ১০ পেতে সাহায্য করবে। গ্যারান্টি দিলাম। কারণ আমার বাবা বোর্ডের খাতা দেখেন এবং বোর্ড যে যে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মার্কস দিতে বলে তা পূর্ণাংগভাবে আলোচনা করবো এই লেখায়। একটুও না কেটে পুরো লেখাটি মনোযোগ সহকারে দেখো। চলো তবে শুরু করি-

সৃজনশীলের একটি মজা হলো অল্প লিখে ভালো মার্কস পাওয়া যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই এই অল্প লেখার কারিশমাটা জানে না। তাই খাতা ভর্তি লিখেও ভালো মার্কস পায় না। আবার অনেকেই ৭ টা সৃজনশীল নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তার মধ্যে আছে। ভাবছে, সময় কি পাব? চিন্তার কারণ নেই।

সৃজনশীল লেখার সহজ উপায়

আশা করি, আজকের পর থেকে এই ভীতি আর থাকবে না। কিন্তু সবার আগে তোমাকে সৃজনশীল কাঠামোটা বুঝতে হবে। পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য বোর্ড থেকে শিক্ষকদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। একটু দেখে নাও। তাহলে কিভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখতে হবে তা বুঝতে সুবিধা হবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার পদ্ধতি

ক) জ্ঞানমূলক: বানান ভুল হলে মার্কস পাবা না। এর উত্তর একটি শব্দে বা একটি লাইনে লিখলেই ১ মার্কস পাবা।

খ) অনুধাবন: খ এর উত্তরে জ্ঞান ও অনুধাবন দুটোই থাকবে প্রশ্ন অনুসারে। অর্থাৎ ১ম প্যারায় জ্ঞানমূলক ১ মার্কস এবং ২ য় প্যারায় অনুধাবন ১ মার্কস। মোট ২ মার্কস।

গ) প্রয়োগ: ১ম প্যারায় জ্ঞানমূলক + ২য় প্যারায় অনুধাবন (মূল বইয়ের আলোকে) + ৩য় প্যারায় প্রয়োগ (মূলবই+উদ্দীপক অনুসারে)। এভাবে লিখলে ৩ টি প্যারায় ১ মার্কস করে মোট ৩ মার্কস পাবা।

ঘ) উচ্চতর দক্ষতা: ১ম প্যারায় জ্ঞানমূলক-১ মার্কস
২য় প্যারায় অনুধাবন- ১মার্কস
৩য় প্যারায় প্রয়োগ- ১মার্কস
৪র্থ প্যারায় উচ্চতর দক্ষতা – ১মার্কস

কিভাবে সৃজনশীল প্রশ্ন লিখতে হয়?

এবার বিস্তারিত দেখে নেই ১ টি সৃজনশীল হতে-

ক)
খ) আজও রোগে তার পথ্য জোটে নি-পথ্য না জোটার কারণ কী?
গ) উদ্দীপক কবিতাংশে পল্লীজননী কবিতার যে দিকটি প্রতিফলিত তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ)

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক) “লাটাই”

খ) দারিদ্রের কারণে রুগ্ন ছেলের জন্য পথ্য জোগার হয়নি। -জ্ঞানমূলক
(প্রশ্নের কারণ চেয়েছে, সেটার উত্তর ১ম লাইনে দিলে তা জ্ঞানমূলক হয়ে গেল।)
এবার অনুধাবনের জন্য, ২য় প্যারায়, এক্ষেত্রে মূলবই হতে ঐ আসল উত্তর সম্পর্কে ২/৩ লাইন লিখতে হবে। এখানে কারণ হলো দারিদ্রতা। তাই দারিদ্রতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়গুলো যেমনঃ মা কতটা দারিদ্র, দারিদ্রের সাথে কিভাবে লড়াই করছে- তা তুলে ধরো।

গ) এরপর গ এর ক্ষেত্রে-
উদ্দীপকের কবিতাংশে পল্লীজননী কবিতার পুত্র হারানোর ভয়ের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে – জ্ঞানমূলক
(এখানে প্রশ্নের ডিরেক্ট উত্তরটা সাজিয়ে লেখাই হলো জ্ঞানমূলক)। এবার অনুধাবন লিখবে ৩/৪ লাইনে মুলবইয়ের আলোকে।
তৃতীয় প্যারায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সাথে মূল বইয়ের পুত্র হারানোর বিষয়টির তুলনা করবে। এভাবে গ তিনটি প্যারায় লিখবে।

ঘ) এর ক্ষেত্রে গ এর মত প্রথম তিনটি প্যারায় জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ থাকবে। শুধু অতিরিক্ত ৪র্থ প্যারা উচ্চতর দক্ষতা।

উচ্চতর দক্ষতায় তোমাকে সিদ্ধান্ত বা বিশ্লেষণ করতে হবে প্রশ্ন অনুযায়ী। এক্ষেত্রে উদ্দীপক+মূলবই ও নিজের আলোকে বিষয়টির মূলবস্তু তুলে ধরতে হবে। এভাবে ৪ টি প্যারায় শেষ করতে হবে। ( এভাবে বাংলা, ইতিহাস, অর্থনীতি, ধর্ম, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, পৌরনীতি, কৃষি, আইসিটি, ব্যবসা শিক্ষা পরীক্ষায় সৃজনশীল উত্তর লিখবে)

অনেকে জিজ্ঞেস করে ভাইয়া গ ও ঘ উত্তর কয় পাতায় লিখবো? আসলে কত পাতায় লিখবে তা কোন ফ্যাক্ট না। তুমি যদি আমার এই নিয়মমতো এক থেকে দেড় পাতায় এবং গ ও ঘ উত্তর লিখ তারপরেও ফুল মার্কস পাবে। বেশি লিখলে বেশি মার্কস পাবা। এটা একদম ভুল। নিয়মের মধ্যে সাজিয়ে অল্প লিখলেই ফুল মার্কস সৃজনশীলের সবচেয়ে বড় সুবিধা।

এবার পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের সৃজনশীল নিয়ে বলি-
এই পরীক্ষাগুলোতে বাংলার মত লেখার দরকার পড়ে না। আসল বিষয়টা ব্যাখ্যা করলেই ফুল মার্কস।

পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষায় লেখার নিয়ম

এক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের গ ও ঘ এর উত্তর এভাবে লিখবে-

আমরা জানি, দেওয়া আছে,

F=ma F=
x=
m=
সবশেষে, নির্ণেয় বলের মান 10N, (বা সিদ্ধান্ত)

গ ও ঘ এ সূত্র লিখলেও ১ মার্কস পাবাই, কোন ধরনের অতিরিক্ত কথা লিখবা না। ডিরেক্ট উত্তর লিখবা, সিদ্ধান্ত দিবা, তাহলেও ফুল মার্কস পেয়ে যাবা।

রসায়ন পরীক্ষায় লেখার নিয়ম

রসায়নের ক্ষেত্রে বিক্রিয়া তোমাকে ফুল মার্কস এনে দিবে। যে কোন প্রশ্নের উত্তরে বিক্রিয়া না চাইলেও বিক্রিয়া নিজের দায়িত্বে দিবে। কারণ রসায়নের প্রাণ হলো বিক্রিয়া। যে প্রশ্নে বিক্রিয়া চেয়েছে তাতে যদি বিক্রিয়া না দাও তবে যতই লিখ না কেন ভালো মার্কস পাবা না।

জীববিজ্ঞান পরীক্ষায় লেখার নিয়ম

জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ফুল মার্কস পাওয়ার উপায় হলে গ ও ঘ এর উত্তরে চিত্র দেয়া, নিজ দায়িত্বে চিত্র দিতে হবে ফুল মার্কস পাওয়ার জন্য।

কিভাবে সৃজনশীল প্রশ্ন লিখতে হয়

এছাড়া পার্থক্য ছক আকারে লিখবা। একটি প্রশ্নের উত্তর লেখার পর দু আঙুল ফাঁকা দিয়ে আরেকটা লিখবা, হাতের লেখা স্পষ্ট হতে হবে, ভুল হলে এক টানে কেটে দিতে হবে, কোন অপ্রাসঙ্গিক ও অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয় লিখবা না।

সৃজনশীল লেখা উত্তর– কে কত বড়, কত পাতা লিখলো এগুলো পরীক্ষকরা দেখেন না। বরং আসল কথা খুব সুন্দরভাবে ও সহজে লিখছে তা দেখে মার্কস দেন। তাই এতক্ষণ যে বিষয়গুলো আলোচনা করলাম তা যদি কেউ ঠিকমত মানতে পারে তাহলে সে নিশ্চিন্তে এ প্লাস পাওয়ার যোগ্যতা ও আশা রাখে।

তো আজ এ পর্যন্তই। এরপর কোন ভিডিওটি দেখতে চাও তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেনা কিন্তু।

আরও পড়ুন- পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার উপায় জেনে নিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *