পড়ার রুটিন তৈরি

কিভাবে নিজেই দৈনিক পড়ার রুটিন তৈরি করা যায়

জাতির কমন প্রশ্ন। কিভাবে পড়ার রুটিন বানাবো? প্লিজ একটি রুটিন বানিয়ে দেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই আবদারটা শুনলে আমার কান্না পায়। কারণ আমি নিজেও কোনোদিন রুটিন ঠিকমত মানতে পারিনি। আসলে রুটিন নিয়ে আমরা বেশিরভাগই ভুল ধারণা নিয়ে আছি।

রুটিন মাফিক পড়াশোনা না করলে মনে হয় আমি ভালো করতে পারবো না ইত্যাদি নানা জল্পনা কল্পনা। আজ আমি তোমাদের এই ভুল ধারনাগুলো ভাঙ্গাবো। প্রত্যহ রুটিন মাফিক কাজ করা রোবট ব্যতিত কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না।

আজকে আমরা দেখব কিভাবে নিজেই চাপহীন রুটিন বানান যায় এবং সবশেষে কিভাবে সেটা ফলো করা যায়।

প্রথম ধাপ: সময় নির্বাচন

সারাদিন ও রাতে কোন কোন সময় তোমার পড়তে ভালো লাগে সেই সময়গুলো নোট করে নাও। সারাদিন আতেলের মতো পড়ার চাইতে এই সময়গুলোতে পড়া ১০ গুণ বেশি কার্যকর। কারণ কারো ভোরে পড়লে সহজে পড়া মুখস্ত হয়। আবার কারো রাত ১১ টায়।

পড়ালেখার রুটিন

তাই সবার রুটিনটাও আলাদা আলাদা হবে, এটাই স্বাভাবিক। যে অন্যের রুটিন ফলো করে তার চাইতে বড় গাধা মনে হয় আর কেহ হতে পারে না।

২য় ধাপ: রুটিন তৈরী

সময় নির্ধারণ হয়ে গেলে এবার রুটিন বানানোর পালা। রুটিন বানানোর প্রথম দিনে মাত্র একটি সাবজেক্ট এড করবা। এভাবে যতটি সাবজেক্ট আছে ততদিনে একটি একটি করে পূর্ণাংগ রুটিন নিজেই বানাবা। যেমন- ১০টি সাবজেক্ট থাকলে ১০ দিন পর পুর্ণাংগ একটি রুটিন তৈরি করবে।

রুটিনে শুধুমাত্র সাবজেক্ট ও পড়ার সময় থাকবে। অন্য কিছু নয়। অনেকে রুটিনে খাওয়া, গোসল, বিশ্রাম ইত্যাদি বিষয় এড করে। তারপরে ঠিকমত না মানতে পেরে হতাশ হয়ে যায়। কোন দরকার নাই এসবের। শুধু যতটুকু পড়ার সময় ততটুকু রুটিনে এড করে নাও।

পড়ার রুটিন বানানো সহজ কিন্তু মানাটাই কঠিন। তবে যদি তুমি আমার বিষয়গুলো একটু ফলো কর তবে এটা কোন ব্যাপারি না। চলো দেখি কৌসলগুলো–

মাইন্ড সেটাপ

পড়তে মন না চাইলে জোর করে পড়ে লাভ নাই। আগে নিজেকে প্রশ্ন করো “কেন পড়াশোনা করা দরকার? পড়াশোনা ঠিকমত না করলে কি কি বিপদ হবে তার একটি লিস্ট বানিয়ে পড়ার জায়গায় সামনের দেয়ালে লাগিয়ে দাও। যখনি পড়তে ইচ্ছা করবে না, তখনই সেই লিস্টের লেখাগুলো পড়ো। এতে তোমার আবেগ ও মন অনেকটা কন্ট্রোল হবে। এবিষয় বিস্তারিত একটি ভিডিও আমাদের চ্যানেলে আছে।

ছাত্রদের প্রতিদিনের রুটিন

এবার আমি তোমাকে আমার ব্যক্তিগত একটি উপায় বলবো। ইউটিউবে মোটিভেশনাল বা অনেক ঠাণ্ডা টাইপের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পাওয়া যায়। তোমার পছন্দমত ডাউনলোড করে রাখতে পারো। তারপর পড়ার সময় খুব হালকা সাউন্ড দিয়ে সুবিধামত পড়তে পারো। এতে পড়ায় তোমার মনযোগ আসবে।

তুমি যেহেতু সারাদিনে পড়ছো না এবং নির্দিষ্ট কিছু সময় যেটা নোট করেছো সে সময়গুলোতে পড়ছো, সেহেতু তোমাকে একটা বিষয়ে কঠোর হতে হবে তা হলো ধ্যান করা। ঋষিরা যেমন ধ্যানের সময় জগত সংসার ভুলে যায় তেমনি তুমিও মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকো। নিরিবিলি যে পরিবেশে পড়তে ভালো লাগে সেখানে বসে পড়ো। মন ছটফট করলে নিজেই মনকে বলো মোবাইল চালানোর জন্য তো বাকি সময়টা আছেই, এখন একটু পড়ে নেই।

বিনোদন

একনাগাড়ে ২৫ মিনিটের বেশি পড়বা না। ২৫ মিনিট পর পর গা আড়মড়া দাও, একটু হাটো, পানি খাও, গুণগুণ করে গান গাও, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করো। এতে তোমার ব্রেন নতূন ভাবে রিফ্রেস হবে।

রিপোর্ট তৈরী

প্রতিদিন কি পরিমাণ রুটিন ফলো করছো তা নিজেই আনুমানিক পারসেন্টেজ দিয়ে দাও। যেমনঃ আজকে যদি ৬০% রুটিন অনুযায়ী পড়তে পারো, তবে নিজেই ভেবে নাও কালকে ৬৫% করার জন্য আরেকটু সময় দিতে হবে।

ভাল ছাত্রদের অভ্যাস

আচ্ছা এবার পড়ার রুটিন বানানোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শর্টকাটে সারমর্ম বলি। প্রথমে রুটিন দেখে আগের দিন রাতে ঠিক করবা তুমি কাল কোন কোন বিষয় পড়বা, কখন পড়বা, কোথায় পড়বা? এটা রাতে ঘুমানোর আগে ভাববা। তারপর সকালে উঠে হালকা ব্যায়াম করে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বিন্দাস মুডে থাকবা।

এটা করব ওটা করব – বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আর ভাববা না। কারণ তুমি রাতেই ঠিক করেছো কি করবা। তারপর যে সময়টাতে পড়তে ইচ্ছে হয়, রুটিন অনুযায়ি সে সময়টাতে পড়তে বসবা। কোনো নিরিবিলি পরিবেশে এবং মোবাইল, টিভি থেকে দূরে।

তোমাদের আবারও বলছি রুটিন নিয়ে ঘাবড়াবে না। এটা শুধুমাত্র তোমার অভ্যাস তৈরীতে সহায়তা করবে। অভ্যাস কিন্তু একদিনে হয় না। তাই তুমি রুটিন বানিয়ে সেটাকে পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে তোমাকে ১ মাস রেগুলার চালিয়ে যেতে হবে। ১ মাস পরে তুমি সাকসেস হবেই হবে। কারণ মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন- ১ মাসেই নতুন কোনো অভ্যাস তৈরী করা সম্ভব।

পড়ার রুটিন নিয়ে যদি কারো কোনো সমস্যা থাকে তবে কমেন্ট করে জানাও, আমরা সর্বাত্মক গুরুত্ব সহকারে তোমাদের রিপ্লাই দিবো। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। গুরুত্বপূর্ণ সব ভিডিও পেতে আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব কর এবং সবার আগে ভিডিও পেতে বেল আইকনটি প্রেস করে দাও।

আরো পড়ুন- পড়া মনে রাখা ও মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল

6 thoughts on “কিভাবে নিজেই দৈনিক পড়ার রুটিন তৈরি করা যায়”

  1. Raisa Parvin Rodshi

    Sir. I can’t concentrate in my study. In this circumstance, any teacher can’t teach me in fact of student. For this I don’t have any pressure about my study. I can’t understand. What should I do now?

  2. Md Ismail Hossain

    ভাই প্রতিদিন একটি বই পড়লেই হবে? তাহলে কত ঘন্টা পড়তে হবে?

  3. আমি একটা বই ৩০ মিনিট করে পড়ি তাহলে কি হবে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *