পড়া মনে রাখা

পড়া মনে রাখা ও মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল

পড়া মনে রাখার উপায় কি? এটা যেন জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবারই পড়া মনে রাখা নিয়ে সমস্যা। কারণ সবাই বেসিক নিয়ে চিন্তা করে না। ক্ষুধার্ত বাঘের মত বই নিয়ে বসে সব কিছু গিলে খেতে চায়। কিন্তু দুখের বিষয় তা হজম করতে পারে না। ঐতো একটু আগেই বললাম বেসিক দুর্বল।

তাই কোন একটি অধ্যায় পড়ার আগে প্রথমেই সেই অধ্যায়ের বেসিক আলী হবা। তাহলে পড়া এম্নেই মনে থাকবে। আর বেসিক আলী স্মার্টলি পড়ে অল্প সময়ে পড়া কাভার করে। বাকি সময় ঘুমায় আর আড্ডা দেয়। কি ভাবছো? তুমিও এরকম হতে চাও।

তাহলে চলো শুরু করি-

আইডিয়া ১: টপিকস লিস্ট

বাংলা বাদে সাইন্স, আর্টস, কমার্স কিংবা জেনারেল শ্রেণীর অন্যান্য বইগুলোতে একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবে যে, কোনো একটা অধ্যায় পয়েন্ট আকারে টপিকগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। যা বেশ সাজানো গোছানো। এখন শুধু বেসিক আলী হওয়ার পালা। পড়া শুরুর আগে প্রথমে একটি পেন্সিল নাও। তারপর অধ্যায়টিতে যে টপিকসগুলো আলোচনা করা হয়েছে একটি সাদা খাতায় সেগুলো পয়েন্ট আকারে লিখে একটি লিস্ট তৈরী করো এভাবে –

সাইন্স
১. মহাকর্ষ
২. অভিকর্ষ
৩. অভিকর্ষজ ত্বরণ
৪. ভর ও ওজন

কমার্স
১. গড়, মূলধন, ব্যয়
২. গড় মুনাফার হার
৩. চেইন ব্যাংকিং

আর্টস
১. চাহিদা বিধি
২. প্রান্তিক উপযোগ
৩. মূলধনী দ্রব্য

এভাবে পুরো অধ্যায়ের টপিকগুলো লেখো। তারপর টপিকসগুলোর দিকে খেয়াল করো কোনটা আনকমন শব্দ যার বর্ণনা এ অধ্যায়ে নেই। যেমনঃ সাইন্সের ক্ষেত্রে এখানে ত্বরণ বিষয়টির বর্ণনা পাবা না। কিন্তু তোমাকে ত্বরণ সম্পর্কে আগে থেকেই বেসিক জানতে হবে।

আবার কমার্সের ক্ষেত্রে গড় কি? মুলধনী কি? কিংবা ব্যয় আসলে কি? এ তিনটি বিষয় আলাদাভাবে তোমাকে জানতে হবে। এভাবে চেইন ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে চেইন কি? ব্যাংকিং কি তা জানতে হবে?

আবার আর্টস এর ক্ষেত্রে, চাহিদা বিধি, এখানে চাহিদা ও বিধি সম্পর্কে তোমাকে আলাদাভাবে জানতে হবে। তেমনি প্রান্তিক শব্দের অর্থ ও উপযোগ কি তা তোমাকে জানতে হবে।

এগুলো জানার সবচেয়ে বেস্ট মাধ্যম হলো গুগল ও উইকিপিডিয়া। কিংবা তোমার বই। যেভাবে হোক না কেন কোনো অধ্যায় পড়ার আগে অবশ্যই এভাবে বেসিক ক্লিয়ার করে নাও। তারপর বই নিয়ে পড়তে বসো। দেখবা পড়া খুব দ্রুত আয়ত্তে আসবে। এবং বেসিক ক্লিয়ার থাকার কারণে সহজে মনেও থাকবে।

আইডিয়া ২: স্মার্ট পড়া

যে কোনো বিষয় পড়ার ক্ষেত্রে কি, কেন, পার্থক্য, ব্যবহার, সুফল-কুফল খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। যেমন- তুমি যদি উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে পড়ো। তাহলে উদ্ভিদ ও প্রাণী কি? উদ্ভিদ ও প্রাণীর পার্থক্য, পরিবেশে এদের প্রভাব যেমন সুফল কুফল কি তা তোমাকে জানতে হবে। বইয়ে থাক বা না থাক। কারণ তুমি সৃজনশীল পরিক্ষার্থী।

পড়ালেখা করার নিয়ম

তাই সৃজনশীলে ভালো করতে হলে তোমাকে এভাবেই পড়তে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর এভাবে পড়লে তোমার জানার আগ্রহ ও পড়া সহজে মনে থাকবে। কারণ যে কোন বিষয় ভালোভাবে জানার প্রধান হাতিয়ার হলো পার্থক্য করে পড়া ও ব্যবহার জানা। একটি বিষয় পড়ার পর ঐ অধ্যায়ের অন্য বিষয় পড়ে, দুটোর মধ্যে মিল-অমিল খোঁজার চেষ্টা করো।

কেন একটি অধ্যায়ে এ দুটি বিষয় একসাথে তা নিয়ে ভাবো। যদি তুমি শুধুমাত্র বইয়ের লাইনগুলোই পড়ো, তখন তোমার ব্রেন বিরক্ত হবে, চাপ মনে করবে। কিন্তু আমার দেয়া এই নিয়মে পড়লে ব্রেন স্বাধীনতা পাবে, চিন্তাশীল হবে। দেখবে মস্তিষ্কের স্বাধীনতা দেয়ায় সে আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং দ্রুত মনে রাখার চেষ্টা করবে।

আইডিয়া ৩: চোখ বন্ধ করে পড়া মনে করা

কোনো বিষয় পড়া বা মুখস্ত করতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর মনে হয় পড়াটা হয়ে গেছে। কিন্তু সত্যি বলতে হয়নি। কোথাও না কোথাও সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে আমি যেটা করি তা হলো পড়ার পর চেয়ারে বসে কিংবা বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে পুরো পড়াটা মনে করার চেষ্টা করি।

যে জায়গায় আটকে যাই বা মনে করতে পারি না, সেগুলো বইয়ে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করি। এভাবে চোখ বন্ধ করে পুরো বিষয়টা তুমি যদি পুরোপুরি মনে করতে পারো, তাহলে আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিলাম ঐ পড়া মনে থাকবেই থাকবে। লিখে রাখো কথাটা।

আইডিয়া ৪: রেকর্ডিং করা

পড়া মুখস্ত বা সহজে মনে রাখার উপায় হলো পড়ার সময় তা মোবাইলে রেকর্ড করা। তারপর সেটাতে হালকা ঠাণ্ডা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এড করে হেডফোন লাগিয়ে সকাল-বিকাল শোনা।

পড়া মুখস্ত করার কৌশল

এই পদ্ধতি যে কতটা ফলপ্রসূ তা একবার না করলে বুঝতে পারবা না। তবে রেকডিং করার সময় ছন্দ বা কবিতা গানের মত করে লাইনগুলো পড়লে তা আরো কার্যকরী হয়।

আইডিয়া ৫: অন্যকে বোঝানো বা পড়ানো

তুমি যেটা জানো বা পড়েছো সেটা তোমার বন্ধুকে শোনাও বা তাকে বুঝিয়ে দাও। এটা যে কি পরিমাণ কার্যকরী তা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি তো কোনো বিষয় বন্ধুদের বোঝালে তা কখনো ভুলি না। হোক তা ২-৩ বছর আগে। তাই যা পড়েছো তা বন্ধু, ছোট ভাই-বোন কিংবা বাবা মাকে বোঝাও।

আর তোমার পড়া শোনার জন্য যদি কেউই না থাকে, বা তুমি লজ্জা পাও তাহলে নিজেই নিজেকে জোরে জোরে বোঝাও ও মোবাইলে রেকর্ডিং করো। তারপর নিজেই শোনো।

আইডিয়া ৬: শর্টনোট তৈরি করা

একটা বিষয় বইয়ে অনেক বড় করে দেয়া থাকে। কিন্তু সেটা পুরোপুরি মনে রাখা যায় না। তাই বইয়ে যদি ২০ লাইন দেয়া থাকে তাহলে মেইন মেইন লাইনগুলো নিয়ে ৫-৭ লাইনের একটি নোট তৈরি করো। এবং ১ লাইনে বিষয়টির মূল ধারণা মাথায় রাখো।

মনে রাখার শর্টকাট টেকনিক

তুমি নোট করছো মানে তোমার ব্রেনের কথা শুনছো। তাই সেও খুশি হয়ে নিজের করা নোট সহজে মনে রাখবে।

আইডিয়া ৭: লেখা ও রিভিশন

পড়ার পর তা লেখা নিয়ে অনেকের অলসতা আছে কিন্তু এটার যে কোন বিকল্প নেই। লিখতে গেলে সময় নষ্ট হবে এ ধারনাও নিতান্তই ভুল। বরং পড়া দ্রুত হবে এবং ব্রেন দ্রুত স্টোর করবে। আমি যতটুকু পড়ি সাথে সাথে রাফ পাতায় লিখি। অনেকে কমেন্টে বল যে ম্যাথ নাকি মনে থাকে না। এর কারণ হল তুমি বুঝেবুঝে ম্যাথ খাতায় লিখে প্র্যাকটিস করো নি।

নতুন পড়ার আগে আগের পড়া যা পড়েছ তা রিভিশন দিয়ে নিবা কিংবা দিনের ১টা ঘণ্টা রাখবা শুধু রিভিশন করার জন্য। পড়লে মনে হারাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পড়া যদি বারবার রিভিশন দাও তাহলে ব্রেনে তা পুরোপুরি ভাবে থেকে যাবে। মস্তিস্কের ধর্মই এটা। পড়া মনে রাখা নিয়ে প্রধান সমস্যা এটি।

আইডিয়া ৮: ঘুম-বিশ্রাম-খাদ্য-ব্যায়াম

যেহেতু পড়া ব্রেনের উপর নির্ভর করে তাই ব্রেনকে পূর্ণ কার্যকরী করতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। একনাগাড়ে ২০ মিনিটের বেশি পড়া যাবে না। ২০ মিনিট পর পর হাটাহাটি, পানি খাওয়া, প্রকৃতি দেখা সেরে ফেলবা। খাবার রুটিনে সবুজ শাকসবজি, ডাল ও আমিষ অবশ্যই রাখবা। সকালে বা বিকালে হালকা ব্যায়াম করে নিবা। ব্যায়াম অবশ্যই অবশ্যই ছেলে মেয়ে সবাই করবা। এর উপকারিতা না করলে বুঝতে পারবা না।

বেসিক আলীর পড়াশোনা

এছাড়াও পড়াশোনায় মনোযোগ ও পরিক্ষার প্রস্তুতি এবং ভালো নম্বর পাবার উপায় নিয়ে ভিডিওগুলো দেখলে তুমি পূর্নাংগ একটি ধারণা পেয়ে যাবে এবং আত্মবিশ্বাসী হবা।

আরো পড়ুন- ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় Part-B শর্ট টেকনিক

4 thoughts on “পড়া মনে রাখা ও মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল”

  1. নুসরাত নিশি নেহা

    আসসালামুআলাইকুম…….
    আমি অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। ইংরেজি বিষয় নিয়ে পড়তেছি। বিগত শ্রেণীগুলোতে সৃজনশীল হওয়ার কারণে খুব একটা মুখস্ত করতে হয়নি। কিন্তু এখন প্রায় সবকিছুই মুখস্ত করে পড়তে হচ্ছে যার জন্য ছোট্ট একটা প্রশ্নও আয়ত্তে আনতে বেশ অনেকটাই সময় লেগে যাচ্ছে। বারবার পড়ার পরও মনে রাখতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে আমার কি করণীয় জানতে পারলে উপকৃত হতাম।

    1. ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর প্রস্ন করার জন্য। আসলে ইংরেজি পড়াটা আমাদের মধ্যে ভয়ের একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য সবার আগে এটিকে সহজ ভাবতে হবে। তাই নিয়মিত ইংরেজি গান বা মুভি সাবটাইটেল সহ দেখতে হবে। এটা করলে আপনার ইংরেজি ভীতি চলে যাবে। এখন আসি পড়ায়, যখন পড়বেন বুঝে ও বাংলাসহ পড়বেন। পড়ার পড় মুলভাব বাংলায় মনে করার চেস্টা করবেন। শব্দার্থ প্রতিদিন ১৫-২০ টা পড়বেন আর Tense+Narration+Completing Sentence ভালভাবে আয়ত্ত করলে বানিয়ে লিখতে পারবেন। যেকোন বিষয় মুখস্থ করার সহজ উপায় হল- তা মোবাইলে রেকডিং করে শোনা, ছবি তুলে মোবাইলের ওয়ালপেপারে সেট করে রাখা আর নজর দেয়া। এছাড়া বুঝে পড়ে কয়েকবার লিখলে তা আয়ত্তে চলে আসবে। মোটকথা বেসিক ক্লিয়ার করেন তাহলে বানিয়ে লিখতে পারবেন আর মুখস্থ করে বেশিদূর আগানো সম্ভব না।

  2. আসসালামু আলাইকুম। আপনার ওয়েবসাইটের বেশ কয়েকটা লেখা পড়লাম। এবং লেখাগুলো পড়ে আমি আপনার এই ওয়েবসাইটের প্রেমে পড়ে গেছি। অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। আমার মনে হয় একজন খুব ভালো ডাক্তার বা সাইকোলজিস্ট ছাড়া এত সুন্দর ভাবে লেখা সম্ভব না। অনেক উপকার হলো।

    বর্তমানে আমি HSC 1ST YEAR এ আদমজর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে আছি। আমার ধারণা যে এই টিপসগুলো আমার জন্য অনেক উপকারে আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *