পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাবার উপায় কি? পরীক্ষায় ভালো করলে তবেই ভালো রেজাল্ট হবে। কেউ আছে সব কমন পেয়েও ভালো করতে পারে না, আবার কেউ আছে মোটামোটি কমন পেয়েও অনেক ভালো রেজাল্ট করে। এর কারণ কি? জানতে চাও? তাহলে এক মহূর্তও সময় অপচয় না করে পুরো লেখাটি পড়ে সবশেষে ভিডিওটি মনোযোগ সহকারে দেখ।
আজকের লেখায় তুলে ধরেছি –
- স্মার্ট উত্তরপত্র লেখার নিয়ম?
- কিভাবে লিখলে ভালো মার্কস পাওয়া যায়?
- সবশেষে বেশি নম্বর পাওয়ার কিছু গোপন ট্রিকস।
চল তবে শুরু করি-
আইডিয়া ১: প্রশ্ন ভালভাবে বোঝা
বলা হয়ে থাকে যে, পরীক্ষায় ভালো নম্বরের প্রায় ফিফটি পারসেন্ট সফলতা নির্ভর করে প্রশ্ন ভালোভাবে বোঝার ওপর।
সাধারণত পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগেই খাতা দেয়া হয় পরীক্ষার্থীর নাম, রোল, রেজিস্ট্রেশন ও খাতায় মার্জিন টানার জন্য। হাতে ১০ মিনিট সময় নিয়ে ভালোভাবে কাজগুলো সম্পাদন করবে। কেননা এগুলোর মধ্যে একটি ভুল হতে পারে তোমার এক বছরের কান্না। এরপর বাকি সময়টুকু খাতার উপরের দিকে ও বাম দিকে, এক স্কেল পরিমাণ মার্জিন টানবে।
প্রশ্নপত্রটি পাওয়ার সাথে সাথেই চেক করে নিবে তাতে কোনো প্রিন্টিং মিসটেক আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন করে নিবে। এতে তুমি কিছুটা ঝামেলা মুক্ত থাকবে।
যতটা পারবে শান্ত থাকার চেষ্টা করবে। কেননা উদ্বিগ্নতা তোমার টেনশন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে তুমি যা পড়েছ তাতে গোলমাল সৃষ্টি হবে। প্রথমে প্রশ্নের উপরের অংশটুকু ভালভাবে পড়বে। কোন বিভাগ থেকে কয়টি প্রশ্ন দিতে হবে, কোনো বাধ্যতামূলক প্রশ্ন আছে কিনা? এবং বিশেষ করে কতটুকু সময়- তা দেখে নিবে। এতে কোন প্রশ্নে কতটুকু সময় ব্যয় করবে তা বুঝতে পারবে।
পুরো প্রশ্নটি অন্তত দু’বার ভালোভাবে পড়ে নিবে। এতে তোমার অবচেতন মন প্রশ্ন রিলেটেড পড়া মনে করা শুরু করবে।
যে প্রশ্নটি তোমার সবচেয়ে ভালো হয়েছে প্রথমে সেটি খুঁজে বের করবে এবং তার উত্তর আগে লিখবে। এক্ষেত্রে প্রশ্নটি পুনরায় সর্বনিম্ন দু’বার পড়ে নিবে এবং একটু গভীরভাবে চিন্তা করবে। প্রশ্নের লেজ বা ইম্পরট্যান্ট অংশগুলো পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে নিবে। এতে উত্তর লেখার সময় কোনো কিছু বাদ পড়ার ভয় থাকবে না।
এখন নিজেকে যতটা সম্ভব সতেজ করে দুটি গভীর নিঃশ্বাস নাও। এতে তোমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে এবং সাহস সঞ্চার হবে। এরপর লেখা শুরু কর।
আইডিয়া ২: স্মার্ট উত্তর লেখার সঠিক নিয়ম
যদি কোনো প্রশ্নে বিভাগ উল্লেখ করা থাকে, তবে তুমি যে বিভাগের উত্তর লিখবে তা প্রথমেই সুন্দর করে লিখে দিবে।
- উত্তর বাংলায় লিখলে “১ নং প্রশ্নের উত্তর”
- ইংরেজিতে লিখলে “Answer to the question no- 1”
- গণিতে লিখলে “১নং সমস্যার সমাধান”
তারপর সবুজ কালার পেন ব্যবহার করে লেখাটির নিচে সুন্দর করে Underline করে দিবে।
এরপর দু’ আঙ্গুল নিচে উত্তর লেখা শুরু করবে।
যদি উত্তরটি বেশ বড় এবং বেশি মার্কের হয় তবে তা তিনটি প্যারায় বিভক্ত করবে।
প্রথম প্যারায়- ২ অথবা ৩ লাইনে প্রশ্নের প্রধান উত্তরটা তুলে ধরবে।
দ্বিতীয় প্যারায়- উদ্দীপকের সাথে মিল করে পুর্ণাংগ বর্ণনা দিবে।
তৃতীয় প্যারায়- শেষকথা নিজের মতো করে উপরে কি আলোচনা করেছো সেটা সম্পর্কে ২ অথবা ৩ লাইনে বলার চেষ্টা করবে।
যদি তুমি এভাবে উত্তর লিখো তাহলে পরীক্ষক তোমার লেখায় মুগ্ধ হবে এবং প্রশ্নের প্রধান উত্তরটা প্রথম প্যারায় পাওয়ায় তোমার প্রতি খুশি হবেন। উত্তর দেখতেও পরিপাটি হবে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে তুমি পুরো মার্ক পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছ।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার কৌশল
সৃজনশীল প্রশ্নে এভাবে উত্তর দেয়াটা অফিসিয়াল নিয়ম, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাবার সহজ উপায় এটি। তবে আরেকটি বিষয় ক, খ, গ, নাম্বারগুলোর নিচে চিকন কালারপেন (সবুজ) ব্যবহার করে একটু মোটা করে দাগ দিবে। যাতে নাম্বারগুলো স্পষ্ট দেখায়। এক্ষেত্রে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লেখার পর, এক আঙ্গুল পরিমাণ গ্যাপ ব্যবহার করবে।
এভাবে ২য় প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে ১ম টার পর দুই আঙ্গুল পরিমাণ গ্যাপ ব্যবহার করবে।
যদি তৎক্ষণাৎ কোনো প্রশ্নের উত্তর মনে না পড়ে সেক্ষেত্রে ঐ প্রশ্নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে অন্য প্রশ্নে চলে যাবে। ভুলেও সময় নষ্ট করা যাবে না।
ম্যাথমেটিক্যাল পরীক্ষাগুলোতে সাধারণত রাফ করার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে তুমি সবার শেষের পাতাটিতে বড় করে রাফ লিখে তা ব্যবহার করতে পার।
৩ নং প্রশ্নের/সমস্যার সমাধান
গণিত, পদার্থ ও রসায়ন পরীক্ষায় ম্যাথমেটিক্যাল প্রশ্নগুলো লেখার নিয়মঃ
আমরা জানি, দেওয়া আছে,
সূত্র…
দেওয়া আছে লিখে প্রশ্নের মানগুলো লিখলে তোমার সূত্র মনে করার সুবিধা হবে।
আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি যে, জীববিজ্ঞান পরীক্ষায় গ ও ঘ উত্তরে ছবি না চাইলেও নিজ দায়িত্বে ছবি দিতে হবে, তা না হলে পুরো মার্কস পাওয়া যাবে না। ঠিক এ ভুলটি করার কারণেই জীববিজ্ঞান পরীক্ষায় আমি ভালো উত্তর লেখার পরও A+ পাইনি।
যেসব প্রশ্নের পার্থক্য কিংবা সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য চাওয়া হবে, সেসব প্রশ্নের উত্তরগুলো অবশ্যই ছক আকারে লিখতে হবে।
যেমন- (গ) উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য নিচে দেয়া হলো…..
মনে রাখবে, পার্থক্য ছক করে লিখলে পুরো নাম্বার পাওয়া যায়। উত্তরে ছবি আঁকার ক্ষেত্রে অবশ্যই পেন্সিল ব্যবহার করতে হবে এবং ছবির নিচে অবশ্যই চিত্রের নাম দিতে হবে।
অতিরিক্ত লুজ বা উত্তরপত্র নিলে নিজের নাম-রোল অবশ্যই লিখবে এবং শিক্ষকের সিগন্যাচার আছে কিনা তা যাচাই করে নিবে। উত্তর পত্রের এক কোণে নাম্বারিং করবে যাতে একাধিক উত্তরপত্র উল্টোপাল্টা না হয়।
এবার আসি হাতের লেখা নিয়ে
যদিও হাতের লেখার উপর কোনো মার্কস নেই তবুও সুন্দর হাতের লেখা শিক্ষকের মন কাড়ে ও বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকে। হাতের লেখা খারাপ হলেও সমস্যা নেই, তবে অক্ষরগুলো স্পষ্ট হতে হবে। ভুল হলে ঘষামাজা না করে একটানে কেটে দিতে হবে।
আইডিয়া ৩: পরীক্ষার হলে করণীয়
পরীক্ষার হলে কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পৌছাতে হবে।
অতিরিক্ত কলম, পেন্সিল, রাবার ও পানি সাথে রাখতে হবে।
গরমে ঢিলেঢালা পোশাক ও টিস্যু রাখতে হবে।
অন্যদের সাথে কম কথা বলার চেষ্টা করবে।
পরীক্ষার আগে পেট ভরে না খাওয়াই ভালো।
কোনো প্রশ্ন যদি একেবারেই কমন না থাকে তাহলে ভয় পাবে না। তাহলে যা জানো তাও ভুলে যাবে। উদ্বিগ্নতা না বাড়িয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করো। প্রশ্নটা বার বার পড়ো। কিছুটা হলেও অবশ্যই তুমি মনে করতে পারবে। প্রিপারেশন নিতে কমতি হলে দেখে নিতে পারো আমাদের অন্য ভিডিও “কিভাবে এক মাসেই পুরো সিলেবাস আয়ত্তে আনা যায়”
সবশেষে যে কথাটি না বললেই নয়, যে কোন প্রশ্ন যতটুকু পারো টাচ করে আসবে। ছোট কিংবা বড় যাই হোক না কেন লেখার উপর নির্ভর করে, বর্তমানে মার্কস পাওয়া যায়। যদি সময়ের অভাবে পুরো উত্তর লেখার সমস্যা হয় তবে শুধু মূল অংশটুকু দেয়ার চেষ্টা করবে।
ভিডিওটির এ পর্যন্ত আসা মানে তুমি পুরো ভিডিওটি মনোযোগ সহকারে দেখেছো। আশা করছি এই পদ্ধতিগুলো, পরীক্ষায় তোমাকে, যথেষ্ট ভালো মার্কস পেতে সাহায্য করবে। তবে হ্যাঁ পরীক্ষার হলে সুন্দরী ম্যাডাম কিংবা স্মার্ট স্যারের দিকে বেশি তাকাবে না। বুঝতেই ত পারছ বিষয়টা। পরীক্ষায় A+ পাওয়ার উপায় নিয়ে আর টেনশন নাই।
জানিনা, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাবার ভিডিওটি তোমাদের কতটুকু অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে। কিন্তু তোমাদের যে কোনো কমেন্ট হতে পারে আমাদের পরবর্তী অনুপ্রেরণা। পরবর্তী ভিডিওটি কোন বিষয়ের উপর দেখতে চাও তা জানাতে ভিডিওটির নিচে কমেন্ট করো। আমরা প্রতিটি কমেন্ট অনেক যত্ন সহকারে গ্রহণ করি। আর হ্যা লাইক ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবে না।
আরও পড়ুন- পড়া মনে রাখা ও মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল
Thank you brother.