পড়া মুখস্ত করার বৈজ্ঞানিক উপায় ও শর্টকাট টেকনিক: পড়া মনে থাকে না কিংবা ভুলে যাওয়ার মত সমস্যা প্রায় সব স্টুডেন্টদেরই আছে। তবে কারও কম আর কারও কারও একটু বেশি। এর কারণ আমরা পড়াটাকে অনেক কঠিন মনে করি ও অনেক কঠিন করে পড়ি। যার ফলে পড়াটা সহজে আমাদের আয়ত্তে আসে না। আজকে পড়া মনে রাখার ১৫ টি গবেষণামূলক সহজ কৌশল নিয়ে আলোচনা করব।
১. লিখে বা ছবি এঁকে পড়া
লেখার কোন বিকল্প নেই। যত লিখবেন তত বেশি আয়ত্তে। কোন জিনিস পড়ার সময় সাথে সাথে লিখলে বা সেটার ছবি আঁকলে পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। নিউরো সায়েন্সের মতে, কোন কিছু লিখলে বা কোন ছবি আঁকলে ব্রেইনের অধিকাংশ জায়গা জুরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এবং ব্রেণ ওই ছবি বা লেখাটিকে তার স্থায়ী মেমোরিতে রূপান্তরিত করে ফেলে।
ফলে ঐ পড়াটি মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী হয়। সাধারণভাবেও বুঝা যায় যে, বইয়ে যে সকল বিষয়ে ছবি দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয় তা-ই আমাদের বেশি বেশি মনে থাকে। অনেক সময় পরীক্ষাতেও চোখের সামনে বইয়ের ছবিটিই ভেসে উঠে। অতএব, লিখে বা ছবি এঁকে পড়াটা অনেক কার্যকর। তাছাড়া পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে ছবি ও গ্রাফ।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর সময় মানুষের ব্রেইন যেকোন তথ্য বা ইনফরমেশনকে মেমোরি বা স্মৃতিতে পরিণত করে। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি ভাল করে পড়া মনে রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোও জরুরি।
একজন সুস্থ ব্যক্তির সাধারণত দিনে ৮ ঘন্টার মতো ঘুমানো উচিত। এর থেকে কম ঘুমালে আপনার পড়া মনে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. কি-ওয়ার্ড খুজে বের করুন
প্রতিটি প্রশ্নেরই কয়েকটি মূল শব্দ থাকে, যা পুরো প্রশ্নের বাকী কথাগুলোকে ধরে রাখে। প্রশ্নটি কয়েকবার পুরোপুরি পড়ার পর চেষ্টা করুন উক্ত প্রশ্নের কয়েকটি কি-ওয়ার্ড মনে রাখার। যাতে ঐ প্রশ্নের উত্তরে কি-ওয়ার্ডগুলো মনে করে আপনি তার ডিটেইলস লিখতে পারেন।
৪. পড়ার জন্য সঠিক সময় নির্বাচন
প্রায় অধিকাংশ লোকেরই ধারণা সারাদিন-সারারাত পড়লেই পড়া বেশি মনে থাকে। এটা নিতান্তই একটা ভুল ধারণা। এর কারণ হলো সবসময় আমাদের ব্রেইন একইভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় না। তবে পড়ার জন্য একটা রুটিন বানালে ভাল হয়।
কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের ব্রেইনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেতে থাকে বিকালের পর। তাই সন্ধ্যায় অর্থাৎ বিকালের পরে বা রাতে পড়া বেশি কার্যকর হয়।
৫. ছোট চিরকুট তৈরি করুন
নৈব্যেত্তিক বা কি-ওয়ার্ডগুলো মনে রাখার জন্য আপনি ছোট চিরকুটে লিখে তা পকেটে রাখুন। এতে আপনি হাঁটাচলার সময় বা অযথা বসে না থেকে একবার হলেও দেখে নিতে পারবেন। ভুল হলে বা মনে না পড়লে আপনি তা দেখে সংশোধনও করতে পারবেন।
৬. পড়ার প্রতি আকর্ষণ অনুভব
যে বিষয়টি পড়ব তার প্রতি আকর্ষণ ও সেটা জানার আগ্রহ জাগাতে হবে। কিংবা আকর্ষণীয় উপায় ব্যবহার করে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে পড়া সহজে মনে থাকবে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কোন কিছুর প্রতি আকর্ষণ বা টান অনুভব করলে সেটা সহজেই স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং সেটা তার স্মৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৭. বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা
পড়া মুখস্ত করার জন্য শুধু পড়লেই হবে না, লিখতেও হবে বারবার। মানুষের ব্রেইন ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি গুলোকে ঠিক তখনই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে যখন সেটা বার বার ইনপুট দেয়া হয়।
একই জিনিস বারবার ইনপুট দেওয়ার ফলে ব্রেইণ তার স্মৃতি গঠনের স্থানে একটি গাঠনিক পরিবর্তন আনে, যা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরীতে সাহায্য করে। সুতরাং পড়া মনে রাখার অন্যতম উপায় হলো বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা।
৮. মার্কার পেন ব্যবহার করা
কেউ কেউ ঝকঝকে বই ভালবাসেন আবার অনেকেই লাল নীল রঙ্গে বই ফুটিয়ে তোলেন। তবে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই মার্ক করে বা দাগিয়ে পড়তে ভালবাসেন। এটাও পড়া মনে রাখতে বেশ কার্যকর।
গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু চিহ্নিত করার ফলে কোন শব্দ বা বাক্যের প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ বেড়ে যায়। সেই সাথে ঐ অংশটুকুর উপর ব্রেইণের ভিজ্যুয়ালিটি ইফেক্টও বেড়ে যায় যা পড়াকে মনে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করে।
৯. চিন্তা করা
ঘুমানোর পূর্বে বিছানায় শুয়ে শুয়ে অন্তত ১০ মিনিট যা পড়েছেন তার একটা সারমর্ম চিন্তা করুন। সকালে বিছানা ছাড়ার আগে আবার তার পুনরাবৃত্তি করুন। এতে আপনি ঐ পড়াটা কতটুকু আয়ত্তে আসল তা বুঝতে পারবেন।
১০. পড়তে বসার আগে হাঁটা
পড়ার টেবিলে বসার আগে ১০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চাইলে আপনি ১০ মিনিট ব্যায়ামও করে নিতে পারেন। এতে সাধারণত পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় যায়, পড়ার আগে ১০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাহলে আজ থেকে একটু হাঁটার পরেই শুরু হোক পড়ালেখা। এতে আপনার অলসতা দূর হবে।
১১. পড়া অন্যকে শেখা
পড়া মনে রাখার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই বেশ জনপ্রিয় এ পদ্ধতিটি । অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে নিজে যা পড়েছেন বা জেনেছেন তা মানুষের মস্তিষ্কে আরো ভালোভাবে গেঁথে যায়। পাশাপাশি অন্যকে শেখানোর ফলে নিজেদের দক্ষতা প্রকাশ পায় এবং পড়াটি আরও ভালভাবে আয়ত্ত হয়েছে কিনা সেটাও বুঝা যায়।
১২. নিমনিক তৈরী করা
ব্রেইন সাধারণত আগোছালো জিনিসগুলো মনে রাখতে পারে না। তাই কোন কিছু টেবিল বা ছক আকারে সাজিয়ে অথবা কবিতার ছন্দ বানিয়ে পড়লে সেটা সহজেই মনে রাখা যায়। পড়া মনে রাখার এই কৌশল কে নিমনিক (mnemonic) বলা হয়।
১৩. কনসেপ্ট ট্রি ব্যবহার করা
পড়া মুখস্ত করার কৌশল অনেক আছে, তবে এটি সবচেয়ে কার্যকর। কোন বিষয়ের অধ্যায়গুলোকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিয়ে পড়তে বসলে অনেক সুবিধা হয়। একে আপনি একটি গাছের সাথে তুলনা করতে পারেন। উক্ত গাছটিকে একটি অধ্যায় বিবেচনা করুন।
গাছটির প্রতিটি পাতায় অংশ গুলোর একটি করে সারমর্ম লিখে পড়ুন। এতে আপনার পড়া মনে রাখতে সহজ হবে। আর এ পদ্ধতিকেই কনসেপ্ট ট্রি বলা হয়। পড়া মনে রাখার জন্য এটি বেশ কার্যকর।
১৪. উচ্চঃস্বরে পড়া
পড়া মুখস্ত করতে উচ্চঃস্বরে পড়ার চেষ্টা করুন। উচ্চঃস্বরে পড়লে কথাগুলো কানে প্রতিফলিত হয়। ফলে সহজে আয়ত্ত করা যায়। শব্দহীনভাবে পড়লে একসময় পড়ার গতি কমে যায়। সেই সাথে শেখার আগ্রহও হারিয়ে যায়।
আর আগ্রহ না থাকলে পড়াটা মস্তিষ্ক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় শেখার কিছুক্ষণ পর পরই। শেখা শেষ হলে বারবার সেটার পুনরাবৃত্তি করুন। পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে এটাওঅনেক সাহায্য করে। পড়া মুখস্ত করার জন্য এই পদ্ধতি অনেকে পালন করে।
১৫. আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাস যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত। মনকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা অনেক সহজ বিষয় আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তাহলে অনেক কঠিন পড়াটাও সহজ মনে হবে। কোনো বিষয়ে ভয় ঢুকে গেলে সেটা মনে রাখা বেশ কঠিন। ভোরবেলা আমাদের মস্তিষ্ক ফ্রেশ থাকে। তাই ভোর হচ্ছে পড়া মনে রাখার উত্তম সময়।
পড়ালেখা নিয়ে আমাদের তৈরী ভিডিওগুলো অনেক সাহায্য করবে। নিচে প্লেলিস্ট দেয়া হল। আশা করি পড়াশোনা নিয়ে আর টেনশন থাকবে না। সবার ভাল ফলাফল হোক এই কামনা করি।
আরো পড়ুন- পড়া মনে রাখা ও মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল
Thanks
Awesome…. But haw to make Concept tree
অসাধারণ