ssc exam hsc guidelines

এস এস সি পরীক্ষার পর এইচ এস সি পড়াশোনা- HSC Guidelines

HSC Guidelines: এসএসসি রেজাল্ট-সাবধান প্লিজ এই ভুলগুলো কখনো করবা না। এস এস সি বা মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার দিনটায় অনেকে রঙিন স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। অনেকে হতাশ হয়ে যাবে, আবার কিছু সংখ্যক ভীতু জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে বেছে নেবে আত্মহত্যার পথ।

পরীক্ষার আগে অনেকে আমাদের ভিডিও গুলো দেখে উপকৃত হয়ে কমেন্টে অনেক ধন্যবাদ আর ভালোবাসা জানিয়েছে। কেবল তোমাদের ভালোবাসাই আমাদের চ্যানেল অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এবং পরীক্ষা বিষয়ক একটি ভিডিও ২৬ লক্ষ ভিউ পেরিয়ে গেছে।

তোমাদের এত এত ভালোবাসার জন্য আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তোমাদের কিছু বলতে চাই। যা তোমাদের অনেক বড় বড় ভুল ডিসিশন থেকে রক্ষা করবে। তাই আমার এই ভিডিও শুধুমাত্র এসএসসি ফল প্রার্থীদের জন্য নয় বরং সবার জন্য। খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শুনবে। বোঝানোর সুবিধার্থে আমি পাঁচটি গ্রেডের কথাই বলবো- যেগুলো হলো জিপিএ 5, 4, 3, 2 এবং ফেইল।

জিপিএ ৫ – GAP 5/A+

প্রথমে আসি জিপিএ 5 নিয়ে অর্থাৎ যারা এ প্লাস পেতে চলেছ তাদের অগ্রিম অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ভার্সিটি, মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন তুমি দেখতে পারো। তবে শুধুমাত্র তোমার এই রেজাল্ট দিয়ে নয়।

gpa 5

আমার জীবনে এরকম অনেক বন্ধু দেখেছি যারা মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল বা দুর্বল পয়েন্ট ধারী। এর পিছনে দুটি কারনের একটি হলো ইন্টার পরীক্ষাকে মেট্রিক এর মত সহজ মনে করা আর দ্বিতীয়টি হল সাবজেক্ট চয়েস।

মেট্রিকে যত সহজে এ প্লাস পাওয়া যায় তার থেকে 10 গুন কঠিন ইন্টারে এ প্লাস পাওয়া। আমি তোমাদের ভয় দেখাচ্ছি না, বরং একটা কথা বলতে চাই, মেট্রিক এর সিলেবাস যদি পুকুর হয় তবে ইন্টার এর সিলেবাস নদী নয় বরং সাগরের চেয়েও বিশাল।

মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসের এতটাই পার্থক্য ও বিশালতা তা বলে শেষ করতে পারবো না। যেখানে 2 বছরে একটি সাবজেক্ট এর জন্য ১ টি বই পড়েছ, সেখানে তোমাকে 2 বছরে একটি সাবজেক্ট এর জন্য দুটি বই পড়তে হবে।

তাই যদি তুমি গণিতে কাঁচা হও বা গণিতের বেসিক জিনিস গুলো সম্পর্কে অনেক দুর্বল তবে অনুরোধ রইলো উচ্চ মাধ্যমিকে সাইন্স নিও না। যদি দুই বছরে কঠোর পড়াশোনার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও তবে নিতে পারো। না হলে শখ করে নিতে যেও না। কারণ ভার্সিটি বা মেডিকেলে চান্স পেতে গেলে এইচএসসির পয়েন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কেননা, ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এর পয়েন্ট যোগ করা হয়। কখনো কি শুনেছো শুধুমাত্র পয়েন্ট টু ফাইভ মার্কের জন্য ভার্সিটি কিংবা মেডিকেল পরীক্ষায় তোমার সিরিয়াল 6 থেকে 7 হাজার পিছনে চলে যেতে পারে। যদি না জেনে থাকো তাহলে অবশ্যই বড় ভাই বা বোনদের কাছে শুনে নাও।

উপকার তোমারই হবে। তাই ভবিষ্যতে কি হবে তার জন্য এইচ এস সি বা মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্টের পরেই তোমাকে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। আর একটা বিষয় মাথায় রাখবা, সাইন্স, কমার্স বা আর্টস যেই বিষয়েই পড়ো না কেন সবটাতেই ভালো জায়গায় পড়া যায়। ভালো মানের জব পাওয়া যায়।

জিপিএ ৪ – GPA 4/A Grade

এবার আসি যারা অল্পের জন্য এ প্লাস মিস করবা বা ফোর পয়েন্ট পাবা। তোমাদের হতাশ হওয়ার একদম কোন কারণ নেই। হয়তো পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবা না, তাতে কি? সৃজনশীল পড়া নিজে ভালো করে না পড়লে ভালো কলেজ হয়েও ভালো ফলাফল দিতে পারবে না। আর বর্তমানে ভালো পড়াশোনার জন্য ভালো স্যারের কাছে দৌড়াতে হবে তা কিন্তু না।

a grade result gpa 4

বরং তুমি ইউটিউবে ও গুগোল এ অনেক ভালো ভালো অভিজ্ঞ স্যার বা ভাইয়া আপুদের ভিডিও পাবা যারা লাইন বাই লাইন বুঝিয়ে পড়ায়। ইস! আমার সময়ে যদি এরকম সুযোগ থাকতো তাহলে কোন প্রাইভেটই পড়তাম না। যাই হোক, খোঁজ নিয়ে দেখো ফোর পয়েন্ট নিয়েও লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভার্সিটি, মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।

এজন্য তোমাকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করতে হবে। তোমরা হয়তো শুনেছো যে, এস এস সি ও এইচ এস সি পরীক্ষায় রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ভর্তি পরীক্ষায় ৫০ কিংবা ১০০ মার্ক থাকে এবং বহুনির্বাচনীতে ১০০। তাই খুব খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ তোমার পয়েন্ট।

এজন্য এইচ এস সি বা কলেজে কি নিয়ে পড়বা তা নিয়ে একটু সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নাও। রিস্ক নিতে গিয়ে পয়েন্ট খারাপ হলে ভালো পরীক্ষা দিয়েও চান্স পাবা না। তাই কে কি ভাববে বা সম্মান রক্ষার্থে সাবজেক্ট চয়েস করে কলেজ জীবনে মস্ত বড় ভুলটা করো না। তুমি কে? তুমি কতটা পরিশ্রমী? তুমি কি পরিমান লেগে থাকতে পারো? তা তুমিই ভালো জানো। তাই তোমার এই জানার প্রতি আস্থা রাখো।

জিপিএ ৩ – GPA 3

এবার আসি যারা থ্রি পয়েন্ট পাবা। এই রেজাল্টের পরিমাণটাই বেশি। তাই শুধু তুমিই যে থ্রী পয়েন্ট পেয়েছ তা কিন্তু নয়। তোমার আশেপাশে একটু তাকিয়ে দেখো হাজার হাজার জন থ্রী পয়েন্ট পেয়েছে। ভাবছো স্বপ্ন বুঝি এখানেই শেষ। কিন্তু আমি বলব স্বপ্ন কেবল শুরু মাত্র। আমি জানি সবাই তোমাকে খারাপ নজরে দেখবে, অনেক কথা শোনাবে।

gpa 3

কিন্তু এই কথাগুলো জাস্ট জমা রাখ। ভবিষ্যতে তোমার সফলতাই হবে এগুলোর উচিত জবাব। কিন্তু কিভাবে তুমি এত কম পয়েন্ট নিয়ে ভার্সিটিতে পড়বা। এটা নিয়ে ভাবছো হয়তো৷

ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া তোমার জন্য কঠিন হবে হয়তো কিন্তু এইচএসসিতে জিপিএ 5 বা 4.8 এর উপরে থাকলে তেমন একটা কঠিন হবে না। বিশ্বাস না হলে একটু খোঁজ নিয়ে দেখো আট বা সাত পয়েন্ট নিয়ে ভার্সিটি পড়ুয়া অনেক স্টুডেন্ট খুঁজে পাবে।

তুমি যদি একজন সায়েন্সের স্টুডেন্ট হও তাহলে কলেজেও সায়েন্স নেয়াটা তোমার জন্য অনেক বড় একটা রিস্ক ও চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। তাই এ ব্যপারে একটু সাবধান থাকো। শখের বশে আবেগ নিয়ে কিছু করো না, যদি সরকারি ভাবে চান্স পাওয়ার ইচ্ছা থাকে।

জিপিএ ২ – GPA 2

এবার যারা 2 পয়েন্ট পাবা তাদের কাছে আসি। আরে তোমরা তো ছাত্রই না। তোমরা ছাত্র সমাজের কলঙ্ক ইত্যাদি নানা কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকো। কিন্তু আমি তোমাদের একটা কথাই বলবো, আমার জীবনে দেখা যারা টু বা থি পয়েন্ট পেয়েছে এরাই জীবনে দ্রুত সফলতার মুখ দেখেছে।

gpa 2

শুনতে অবাক লাগছে তাইনা? কিন্তু এটাই সত্য। তোমরা পড়াশোনায় পারদর্শী না হলেও তোমাদের ভিতরে এমন কিছু ট্যালেন্ট আছে যা দিয়ে তোমরা জীবনে সফল হতে পারো। বিশ্বাস করো সবার মাঝেই কোন না কোন ট্যালেন্ট আছে। জাস্ট সেটাকে খুঁজে বের করো এবং কাজে লেগে পরো।

ভার্সিটি বা মেডিকেলে পড়তে পারোনি তো কি হয়েছে। একজন উদ্যোক্তা বা বিজনেসম্যান তো হতে পারো। নিজেই একটা কোম্পানি, গ্যারেজ বা গুদামের মালিক হয়ে যেতে পারো। তার পরেও যদি পড়াশুনার পেছনে লাগতে যাও তাহলে আবার এক বছর গ্যাপ দিয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করে মেট্রিক পরীক্ষা আবার দিতে পারো। কলেজে ভর্তি হয়ে বিসিএস বা নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারো ভবিষ্যতের জন্য।

SSC Fail

এবার ফেল করা অপদার্থদের কাছে আসি। আমি তোমাদের অপদার্থ বলেছি কারণ এটা শোনার অভ্যাস করো৷ নিয়মিত কারো না কারো কাছ থেকে এটা শুনতে হবে তোমাকে। হয়তো ভাববে, বেচে থেকে লাভ কি। মরে যাওয়াই ভালো।

ssc fail

আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে অনেকে। তোমরা যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছো তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো বাকি জীবনটাতে কত কিছুই না পাওয়ার আছে। সেগুলো না নিয়েই চলে যেতে চাও। দেখতে চাও না ভাগ্যে কি আছে।

এরকম শত শত মনীষী-বিজ্ঞানীদের নাম গুগোল তোমাকে বলবে যারা পরীক্ষায় একবার নয় দশ বারো বার ফেল করেছে। কিন্তু তারা সফল। বিশ্বাস না হলে বিল গেটস, জ্যাক মা, আইনস্টাইন, রাষ্ট্রপতি হামিদুর রহমান, মেসি, রোনালদো, নেইমার আরো শত শত ব্যক্তিদের জীবনী দেখ।

তাই লেগে থাকো, কারণ লেগে থাকার নামই সফলতা। পরীক্ষায় পাশ করে ভাল চাকরি পাওয়াটা অর্জন, সফলতা নয়। কারণ সফলতা কোন নির্দিষ্ট বিষয় নয়। এটা বারবার ঘুরে দাঁড়ানো কে বোঝায়।

এইচ এস সি পড়াশোনা সাজেশন

এতক্ষণ পুরো বিষয়টার সারমর্ম যদি বলি, তাহলে প্রথমেই বলবো রেজাল্ট যাই হোক না কেন নিজের চেষ্টা ও ক্ষমতাকে বুঝে এইচ এস সি তে সাবজেক্ট চয়েজ করো। এতে যদি বাবা-মা বাধা দেয় তবে তাদের পা ধরে হলেও বিষয়টি বোঝাও।

দ্বিতীয়ত, এইচ এস সি সিলেবাস ব্যাপক। তাই ভেবোনা যে মেট্রিক তো এক বছর পরে ভালো করলাম ইন্টারও এক বছর পড়লেই হয়ে যাবে। তাহলে বলবো তুমি বোকার স্বর্গে বাস করছ। পুরো দুই বছরে নিয়মিত একটু করে হলেও পড়তে হবে।

শেষকথা

তাই সবার কাছে আমার অনুরোধ কারো কথায় প্রভাবিত না হয়ে বড় ভাই আপুদের সাথে কথা বল। স্যারদের সাথে তোমার বিষয়ে শেয়ার করো। তারপর ঠান্ডা মাথায় ডিসিশন নাও কি করবা, আর যা করবা তাতে যেন তোমার শতভাগ মন বা ইচ্ছা থাকে।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছুই বেশিদিন টিকে না। সবাই ভাল থাক, নিজের ভালো ক্যারিয়ার গড়ুক, এই কামনা করে আজকের আলোচনা শেষ করছি।

তোমরা যারা প্যাশন বা জীবনের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তায় আছ তারা আই বাটনে ক্লিক করে ভিডিওটি দেখে নিতে পারো। ভিডিওটিতে যতগুলো লাইক হবে আমি ভাববো ঠিক ততজন উপকৃত হয়েছে।

তাই তোমাদের একটি লাইক আমাদের পরবর্তী কাজের অনুপ্রেরণা। সাথে থাকতে চাইলে চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করার অনুরোধ রইলো আর তোমার বন্ধুরাও যাতে কোনো ভুল ডিসিশন না নেয় এজন্য ভিডিওটি বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করো। আমরা আছি তোমাদের সাথে নতুন আইডিয়া ও পজিটিভ থিংকিং শেয়ারের জন্য।

আরও পড়ুন- পড়া মুখস্ত করার বৈজ্ঞানিক উপায় ও শর্টকাট টেকনিক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *